বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা
আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ
X
সকাল বেলা প্রিয় হাতঘড়িটির দিকে তাকিয়েই ৪২০ ভোল্টের একটা ঝটকা খেলাম ।আজকেও প্রায়ভেটের সময় পেরিয়ে যাচ্ছে ।যাহহহ,,প্রতিদিনের মতো আজকেও স্যারের বকবক শুনতে হবে ।ধুররর ভাল্লাগেনা আর এতো পড়াশুনা করতে ।
-অতঃপর কিছু না ভেবেই তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে কোনমতে হাতে দুইটা বিস্কুট আর ব্যাগটা নিয়ে দৌড় শুরু করলাম ।বিস্কুট খাচ্ছিলাম এমন সময় মনো হলো আজ তো আমি স্কাফ পরিই নী ।চুলগুলো খোলা রেখেই চলে এসেছি ।এই প্রথমবার খোলা চুলে বাসা থেকে বের হয়েছি ।
-রাস্তার পাশ দিয়ে দৌড়ে যাচ্ছি আর বিস্কুট খাচ্ছি ,চুলগুলো তখন এলোমেলো হয়ে বারবার সামনের দিকে এগিয়ে আসছে ।যতই চুলগুলোকে ভালোভাবে রাখার চেষ্টা করছি ততটাই চুলগুলো এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে ।
-দৌড়াচ্ছি আর চুলগুলো ঠিক করতিছি এমন সময়ে কোন একটা শক্ত কিছুর সাথে ধাক্কা খেলাম ,ধাক্কাটা একটু জোরেই পেয়েছিলাম যার কারনে ছিটকে পড়ে যাচ্ছিলাম ।এমন সময় কেউ আমার হাতটা ধরে ফেললো ।যার কারনে প্রানে বেঁচে ফিরলাম ।রাস্তায় কারো সামনে আর পড়ে গিয়ে উজ্জত গেলো না ।যাক বাবা বাঁচা গেলো ।
-কিন্তু চুলগুলো এলোমেলো ভাবে চোখের সামনে থাকায় সেই ব্যাক্তিটাকে দেখতে পাচ্ছিলাম না ।এমন সময়ে ঠান্ডা হাওয়া এসে চুলগুলো চোখের সামনে থেকে সরে গেলো ।উজ্জত রক্ষাকারী ব্যাক্তিটি তখন আমার দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়েই ছিলো ।তখন মনে হচ্ছিলো ,,আমার বফের সাথে আমি শুভদৃষ্টি করতিছি ।উফফফফ,আমার তো কোন বিএফ ই নাই ।
-যাই হোক ,,শুভদৃষ্টিটা ভালোভাবেই সম্পূর্ন হলো ।ছেলেটা আমার দিকে ওভাবে তাকিয়ে ছিলো বলে আমি একটা হাসি দিলাম ।আমার হাসিটি দেখে হয়তো ছেলেটি একটু লজ্জা পেয়েছিলো ।
-আমি ছেলেটিকে কিছু বলার সুযোগ দিলাম না ,নিজেও কিছু বললাম না ,তখন একটা দৌড় দিলাম ।কিছুক্ষন পর পিছনে তাকিয়ে দেখি ছেলেটি আমার পথের দিকে চেয়ে আছে ।
-তাড়াতিড়ি প্রায়ভট এ চলে আসলাম ।সকাল ৭.০০ টায় প্রায়ভেট তখন প্রায় ৭.৪০ বাঁজে ।রুমের সামনে দাঁড়িয়ে আছি আর ভাবতিছি স্যার ,আজকে আমাকে আর কোন স্পেশান ভাষন শুনাবেন ,,আই মিন কিভাবে বকা দিবেন ।
নিশ্চই তিনি প্রথমে বলবেন_
"জীবনে কিছু করতে হলে প্রথমে সময়ের সাথে মানিয়ে চলা শিখতে হবে ,,যারা সময় মতো কাজ করতে পারে না ,তারা জীবনে কখন ও সফল হতে পারে না ।"
-গত চারদিন থেকে উঠাউঠি প্রায়ভেটে দেরি করে এসেছি ।তাই স্যারের ভাষনটা আমার মুখস্ত হয়ে গেছে ।অবশ্য স্যার ওইটা আমার ভালোর জন্যেই বলেন ।কিন্তু কথায় আছে না ,,রাখে হরি মারে কে ??মানে কার কথা কেই বা অত শুনে ??
-ভয় ,ভয় লাগছে একটু ।এক পা ,এক পা করে প্রায়ভেট রুমের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি ।আজ আর একটু না বেশিই ভয় করছে ,,কেননা কাল আবার আমি স্যারকে ওয়াদা করেছি ,প্রতিদিন সময় মতো আসবো ,একদম দেরি করে আসবো না ।কিন্তু কালকে ওয়াদা করছি আর আজকেও দেরি ।কী যে আছে আজ আমার কপালে আল্লাহ তা'লা ই ভালো জানেন ।
-তখন ওখানে দাঁড়িয়ে আল্লাহ তা'লা র কাছে বললাম_
"হে আল্লাহ,,আমাকে আজকের মতো স্যারের ভাষন শুনা থেকে রক্ষা করো ,আর এমনটা হবে না ,কাল যে ঠিক সময় মতোই আসবো ।"
কিন্তু যখনই অন্য একটা দিন আসে ,আর মনে হয় সময় অনুযায়ী ভালোভাবে চলার তখন আর এসব কিথা কিচ্ছু মনেই থাকে না।প্রতিদিনই আল্লাহ র কাছে এই কথাটা বলি ,আজকের মতো বাঁচিয়ে দেও কাল থেকে আর হবে না ।কিন্তু কালকে আবার যাই আর তাই ই হয়,,
নিজেকে এখন ও বদলাতেই পারলাম না ।নিজেই নিজের সাথে করা পাগলামি গুলান মনে পড়লে খুব হাসি পায় ।
-অতঃপর রুমের সামনে চলেই আসলাম ।রুমের দিকে তাকিয়ে হতভম্ব হয়ে গেলাম ।এ কিইইইইইই ।রুমে তালা দেওয়া কেনো ?? কিছুক্ষন পর মনে হলো ,,আজকে তো স্যার পড়াবে না বলেছেন ,স্যারের তোহ আজকে মিটিং আছে ।
-যাহহহ,,এত কষ্ট করে আসাটাই আমার মাটি হয়ে গেলো ।ধুরররর ভালো লাগেনা আর ,,আবার অতদূর হেঁটে যেতে হবে ।অবশ্য এক দিক দিয়ে ভালোই হলো ,আজকে আর স্যারের স্পেশান ,বকা ভাষন শুনতে হবে না ।যাক বাবা ,বাঁচা গেলো ।
-বাসায় আসছিলাম ।একা একে যেতে ভালোলাগছিলোনা ,তাই পাশের দোকান থেকে কতগুলো চকলেট কিনে নিলাম ।তারপর আমি মাথায় ওরনাটা ভালোভাবে পেঁচিয়ে ,দুই ঘাড়ে ব্যাগ নিয়ে ,চকলেট খাইতে খাইতে বাসায় আসছিলাম ।এমন সময় মনে হলো ছেলেটাকে একটা sOrRY বললেই পারতাম ।বেচারী,,আমাকে বাঁচালো আমি তাকে ধন্যবাদ ও জানালাম না ।অস্বস্তি হতে শুরু করলো তখন ।কবিরা চলে যাবার আগে বলে দিয়েছেন_
"করিয়ে ভাবিও না কাজ আর ভাবিয়া করিও কাজ "।
আর আমি একদম এর বিপরীত ।কাজ করার পর এখন ভাবতিছি ।মনে মনে ঠিক করলাম ,কখন ও দেখতে পেলে ছেলেটাকে sOrRY & ThanQ বলবো ।
ওইটা ভাবছিলাম আর সামনের দিকে এগিয়ে আসছিলাম ।এতো দিন অন্যের শুভদৃষ্টি দেখতাম আর আজ অন্যকে বিনা পয়সায় সিনেমা দেখালাম ।বাহ!!,আমার তোহ তুলনায় হয় না ।
বাসায় ফিরে আসলাম ।এসে আম্মুর একবুজ্জু বকুনি হজম করে নাস্তাটা সেরে নিলাম ।ছুটির দিনে কিছুই করার থেকে না ,হেডফোন লাগিয়ে গান শুনছি_
"চোখে চোখে কথা বলো ,হৃদয়ে রাখ হৃদয়,,মনে মনে ভাসি চলো ,হয়ে যাক না প্রনয়।"..
-গানটি শুনে সকালের দৃশ্যটা চোখের সামনে ভেসে উঠছে বারবার ।সেই মায়াবী চোখ ,,আপলক দৃষ্টি আমার মন কেড়ে নিয়েছে যে ,
যাই করিনা কেন বারবার মায়াবী চোখ,ও তার মুখটির কথা মনে পড়ছে ।একা একা একটু মুচকি মুচকি হাসছি ।
-সারাটাদিন বয়ে গেলো ।কোন কাজেই মন বসে না ,ঘরে থাকতেও মন চায় না ।তখন আমার ভাল্লাগেনা রোগ শুরু হলো ।কিন্তু এই ভাল্লাগেনা রোগের ডাক্টারকে তখনও পাশে পেলাম না ।
পরের দিন সকাল বেলা_
আজ একটু আগেই ঘুম থেকে উঠেছি ।সেই ভোর ৫.০০টা থেকে এলার্ম দিয়ে রাখছিলাম ,প্রতি দশ মিনিট পর পর এলার্ম বাজ ছে আর আমি এলার্ম অফ রাখছি ,আবশেষে ৬.৩০ এ উঠে পরেছি ।আমি আবার কাউকে কিছু প্রমিস করলে তা প্রানদিয়ে হলেও রাখার চেষ্টা করি।
আজ একটু তাড়াতাড়িই প্রায়ভেট এ পৌছে গেলাম ।বেঞ্চ এ বসে ছিলাম ।হঠাৎ দেখলাম উজ্জত বাঁচানো ,মায়াবী চোখওয়ালা সেই ছেলেটি প্রায়ভেটের গেটের সামনে আসছে ।
-তাকে দেখে আমি তার দিকেই চেয়েই আছি ।ঠিক আগের দিন সেই সকাল তার মতোই ।সে এসে স্যারকে সালাম দিলো ।স্যার পিছনে তাকিয়ে একটা হাসি দিয়ে সালামের উত্তর নিয়ে ভিতরে আসতে বললো ।
-শুধু আমি একাই তাড়াতাড়ি এসেছিলাম ,মায়াবী ছেলেটাকে স্যার আমার পাশেই বসিয়ে দিলেন এবং উনি আমাদের সামনেই বসলেন ।
-তারপর স্যার বললেন_
জানো তিনা এ হচ্ছে শাহি ,,আমার বিদ্যালয়ের ফাস্ট বয় ,এমনকি দিনাজপুর জেলাতেও এ ফাস্ট হয়ছে ।আমি গর্বিত শাহিকে পেয়ে ।তখন শাহি বললো ,
'ধন্যবাদ ,স্যার '।
স্যার তখন আবারো বললো_
শাহী এই মেয়েটি হচ্ছে তিনা ,,আমার প্রায়ভেটের সবচেয়ে মিষ্টি মেয়ে ,যার একটা হাসিতেই সবকিছু ওলোট_পালট হয়ে ঠিক হয়ে যায়।একটু লেজি কিন্তু খুব ভালো ছাএ্রী।
-শাহি আমার দিকে তাকিয়ে বললো_
মিষ্টি মেয়েটির সাথে পরিচিত হয়ে বেশ ভালো লাগছে !!
-আমি ;জি ,,শুকরিয়া ,আপনি একদিন ওয়াল্ড বেষ্ট হবেন !
-শাহি একটি হাসি দিয়ে বললো হুম চেষ্টা করবো ?
প্রতিদিন যেভাবে প্রায়ভেট এ থাকি আজ তার তুলনায় শত গুন শান্ত মেয়ে হয়ে আছি ।এতোদিন শুধু পড়া দিতো আমি নিতাম কিন্তু কিছুই বুঝতাম না ,না বুঝলে প্রশ্ন ও করতাম না ।কিন্তু আজ একটু আলাদা ।মনোযোগ সহকারে প্রায়ভেট পড়লাম ।সবকিছু বুঝলাম ও ।
-প্রায়ভেটের মধ্যে অবশ্য শাহিকে একটিবার ধন্যবাদ জানানোর কথা ভাবলাম ,কিন্তু কল্পনা শুধু কল্পনায় রয়ে গেলো ,ধন্যবাদ জানানোর কোন সুযোগ ই পেলাম না ।
-প্রায়ভেট শেষে বাসায় আসছিলাম ,হঠাৎ মনে হলো কেউ আমার পিছনে রয়েছে ।পিছনে ঘুরতেই দেখি শাহি আসছে_রাস্তার মাঝেই দাঁড়িয়ে পিছনে ঘুরে ছিলাম ।তখন শাহি আমাকে বললো_
-শাহি ;হঠাৎ দাঁড়িয়ে গেলা যে ,,?
-আমি ;হুম,তোমায় একটা কথা বলার ছিলো ?
-শাহি ; আমাকে ,হুম বলে ফেলো ?
-আমি ; ThanQ,,
-শাহি ;স্বগতম ,কিন্তু কেনো ?
-আমি ;কালকে আমাকে বাঁচানোর জন্যে ?
-শাহি ;ওহহ, তাই বুঝি ,আসলে তোমাকে sorry বলতে চাই ?
-আমি ;কিসের জন্যে ?
-শাহি ;কালকে আমি ফোন টিপতে টিপতে আসছিলাম তো তাই ধাক্কাটা ওভাবে....
-আমি ;আর এতে ,সরি বলার কী আছে ,ভাগ্যিস ধাক্কা টা খেয়েছিলাম নাহলে তোহ এই বেস্ট বয় টার সাথে আমার ভালো পরিচয় ই হতো না ।
-শাহি ; ওহ,তাইনা ?তুমি তো খুব মিষ্টি কথা বলো ।
-আমি ;কিছুই বললাম না ,শুধু একটু মন উজার করে হাসলাম ।
-শাহি ;বাহ,,হাসলে তোমাকে দেখতে আরোও সুন্দর লাগে ।
-আমি ;জি ,ধন্যবাদ
-শাহি ; তোমার বাসা এপাশে কোথায় ?
-আমি ;এইতো সামনে ,তোমার ?
-শাহি ;আমার বাসা এসেগেছে ,সাবধানে বাসা যেয়।
শাহির সাথে হাঁটতে হাঁটতে টের ই পাই নী কিভাবে সময় শেষ হয়ে গেলো ।অবশেষে আমিও বাসায় পৌছে গেলাম _
অতঃপর_
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now
¤-বকুল রায়-¤
Golpobuzz ৪ বছর, ২ মাস পুর্বে