বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা
আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ
X
-আই লাভ ইউ
-আমার জুতার সাইজ
জানিস তো
-এ কেমন কথা আমি
প্রপোজ করতেই
টিপিকাল জিএফ এর
মতো চাওয়া শুরু!
-দেখ আমি কিন্তু তোর
ফাইজলামি সহ্য করতে
পারছিনা খুব রাগ
হচ্ছে চলে যা নইলে
নাক ফাটিয়ে দেবো
-আমি মোটেও
ফাইজলামি করছিনা,
আমি তোকে সেই
ছোটবেলা থেকেই পছন্দ
করি
- তুই না আমার ভাই
-ধুর কাজিন
-দাড়া আজই কাকিকে
বলবো মেরে তোর
পিঠের ছাল তুলে
ফেলতে
-তুই পারবি না
-কেন ?
- হবু বরকে মার
খাওয়াবি এরকম পাপ
তুই করবিনা আমি জানি
-এহ বর তোকে বিয়ে
করতে বয়েই গেছে
-আমি স্পষ্ট দেখতে
পাচ্ছি তুই নীল
শাড়িতে বউ সেজে
আমার খাটে বসে আছিস
-তুই স্বপ্নই দেখে যা
আমি রাজপুত্রের মতো
ছেলেকে বিয়ে করে
চলে যাবো।হুহ
-এ স্বপ্নকেই সত্য
করবো।
-এই যা তো মাথা গরম
করাবিনা নইলে,
-কি
-গেলি (জুতো খুলে বললো
অনিকা)
.
অনিকাকে জুতো খুলতে
দেখেই ভোঁ-দৌড় দিলো
ইমরান।নইলে অনিকা
সত্যিই জুতোপেটা
করতো! বড্ড রাগী
মেয়েটা পাগলীও বটে।
সম্পর্কে তারা চাচাতো
ভাই-বোন, ইমরান এর
বাবা আর অনিকার
বাবাও চাচাতো ভাই।
সেই স্কুল লাইফ থেকেই
অনিকাকে ভাল লাগতো
ইমরানের আর সেটা
হাই স্কুল না পেরোতেই
প্রেমে রুপান্তরিত
হয়েছিল সে থেকে আজ
পর্যন্ত কয়েক’শ বার
প্রপোজ করেছে আর একই
ঘটনা ঘটেছে।
.
কিছুটা দূরে গিয়ে
থেমে গেলো সে। পিছনে
ফিরে দেখে অনিকা
এখনো সেখানেই
দাঁড়িয়ে আছে। সে আবার
অনিকার কাছে গেলো।
-আবার আসলি কেন?
-হবু বউকে না নিয়ে
গেলে শশুর আব্বা রাগ
করবে তো!
-উফ যা তো এমনি তোর
জন্য লেট হয়ে
গেলো,সবাই চলে গেলো
আর আমি এখনো এখানে
-তাহলে আমার সাথে চল
তাহলেই হয়।
-যাবো না।
- ঠিক আছে আর বলবো না
চল।
-না
-ঐ দেখ কতগুলো
নেশাখোর, ধরে নিয়ে
যাবে পরে কিছু হয়ে
গেলে আমি দ্বায়ি না
-সত্যিই
-হুম
-ওকে আমি গেলাম তুই
থাক।
কিছুদুর যেতেই অনিকা
দৌড়ে এসে তার সাথে
হাটতে শুরু করলো।
তারা হাটতে হাটতে
বাড়ির কাছাকাছি এসে
পড়লো। এর পর যে যার
বাড়ি চলে গেলো। যদিও
রিক্সা পেয়েছিলো
কিন্তু ইমরান ইচ্ছে
করে নেয়নি কারন,
পাশাপাশি চলার মাঝে
এক অন্যরকম আনন্দ আছে!
.
ইমরান বাড়ি ফিরে
দেখে কেউ বাড়িতে
নেই। সে রান্নাঘরে
গিয়ে চাবি নিয়ে ঘরে
ঢুকলো। তার মা সব সময়
চাবি রান্নাঘরের
চুলোর পাশে রেখে যায়।
সে তার রুমে গিয়ে
শার্ট বদলে , ফ্রিজ
থেকে একটি আপেল
নিয়ে খাচ্ছিলো তখনি
তার ছোট ভাই স্কুল
থেকে বাড়ি ফিরে তার
মা কে ডাকাডাকি শুরু
করলো।
-আম্মু বাসায় নেই
( ইমরান)
-ও তাহলে বোধ হয়
অনিকা আপুদের বাসায়
গেছে।
-হতে পারে
ইমরান এক গ্লাস পানি
খেয়ে অনিকাদের
বাসায় গেলো তার
আম্মুর কাছে টাকা
চাইতে, ২ দিন পর
অনিকার জন্মদিন তার
জন্য গিফট কিনতে।
ইমরানের কাছে টাকা
আছে তবে এবার
অনিকাকে বড় একটি
গিফট দিবে সে তার
জন্য কম!
.
সে অনিকাদের বাসায়
গিয়ে দেখে বিরাট
আয়োজন! সে তার মা এর
কাছে গেলো টাকা
চাইতে।
-মা
-কি কিছু খেয়েছিস?
-না
-টেবিলে তো ভাত রাখা
ছিলো
-পরে খাবো, এখন কিছু
টাকা দাও
-কি করবি
-কাজ আছে প্লিজ
-আমার কাছে এখন টাকা
নাই,বাড়িতে গিয়ে
দেবো তুই যা আমি আসছি
-ঠিক আছে , এতো আয়োজন
কিসের?
-অনিকাকে দেখতে
আসবে
-মানে!
-মানে বুঝিস না?
অনিকার বিয়ের কথা
চলছে আজ ছেলেপক্ষ
দেখতে আসবে।
-বুঝেছি, তারা কখন
আসবে?
- রাস্তায় আছে এক্ষুনি
এসে পরবে, তুই এখন যা
আমি আসছি
-হুম
,
ইমরান বাসায় এসে
মাথা ও মন শান্ত রেখে
কি করে এই বিয়ে
ভেস্তে দেয়া যায় তা
ভাবতে লাগলো।
যেভাবেই হোক এ বিয়ে
সে হতে দেবে না! কিন্তু
কিছুতেই সে উপায় খুজে
পাচ্ছে না তাই তার
বন্ধু তারেক কে ফোন
দিলো। তিনবার রিং
হওয়ার পর তারেক ফোন
ধরলো,
-হ্যালো, কি খবর
হারামী হঠাৎ মনে
পরলো যে
-তোদের আবার ভুললাম
কখন? তোরাই তো আমার
জানে জিগার দোস্ত!
-হ্যা জানি, তো কি খবর
তোর?
-ভালোনা দোস্ত
অনিকাকে দেখতে আসছে
, এখন কি করি প্লিজ
ভাই হেল্প মি
- কি!
-হ্যা, এখন কি করা
যায়?
- কি আর করবি বিয়েতে
পোলাও মাংস খা
-চুপ হারামী!
ফাইজলামি বাদ দে
কোনো ভালো আইডিয়া
থাকলে দে, দেখ ভাই তুই
তো জানিস আমি ওকে
কতটা ভালোবাসি।
-উম, তুই এক কাজ কর ,
আন্টিকে বলে দে যে তুই
অনিকাকে ভালোবাসিস
আর অনিকাকে যেন
অন্যখানে বিয়ে না
দেয়।
-তুই সিউর?
-হ্যা,তুই পারবি? তুই
বললে আমি আন্টিকে
তোদের কথা জানিয়ে
দেই।
-এক কাজ কর তুই চলে আয়
।
-শোন আজ আর কিছু করা
যাবেনা , তাছাড়া
দেখলেই বা কি আজ তো
আর হ্যা বলে দেবে না।
দুএকদিন সময় নেবে।
আমি কাল সকালে আসবো
। এখন চিল মার মানে
খাও দাও আরাম ফরমাও
।
,
ইমরান ফোন রেখে
বিছানায় বসে ভাবতে
লাগলো । প্রায় একঘন্টা
পর তার মা আসলো। এসে
ইমরান কে জিজ্ঞেস
করলো
-কত টাকা লাগবে?
-আর লাগবে না
-কেন
-প্রয়োজন নেই।
-ঠিক আছে, পাঁচশ রাখ
দরকার পরলে খরচ
করিস।
-বিয়ের খবর কি?
- মেয়ে কি আর খারাপ
নাকি? পছন্দ হয়েছে ,
কাল পরশু বিয়ের
তারিখ জানাবে।
ছেলে প্রবাসি তার
বাবা চাচারাও
একসাথেই বিদেশ
থাকে। মেয়েটা সুখেই
থাকবে!
- আমরাও কম কিসের
আব্বুও বিদেশ থাকে
মেঝচাচ্চুও শুধু ছোট
চাচ্চু শিক্ষক!
- হ্যা, তাতে কি?
- বুঝনি?
- কিহ! তুই কি আবার
অনিকাকে পছন্দ করিস
নাকি?
- হ্যা!
- আর অনিকা
- অনিকাও
- না, যদি অনিকাও
তোকে পছন্দ করতো
তাহলে বিয়েতে রাজি
হতো? এটা তোর বয়সের
দোষ , শোন বাবা মা
বন্ধুর মত এবং সবচেয়ে
আপন। একটা কথা বলি
শুনে রাখ কাজে দিবে
এই বয়সে প্রেম
পিরিতি হয়না মনে
ফালতু আবেগ কাজ করে
অন্য কথায় বলা যায়
শয়তানে খোঁচায় এই
প্রেম আজ আছে কিন্তু
যখন আরও বুঝতে শিখবি
তখন উপলব্ধি করবি ।
এখন আমার কথা তোর
বোধ এ নাও আসতে
পারে।
- না ওকে আমি
ভালোবাসি আমি
নিশ্চিত ,
- কিন্তু অনিকা তো
বাসে না, নইলে ও তো
মানা করে দিতো
তাইনা বাবা?
- ও চাপে পড়ে করেছে।
- না , বাবা মেয়েরা
কুড়িতেই বুড়ি হয় মানে
জীবনের মানে অল্প
বয়সেই বুঝতে পারে , ও
জানে যে ঐখানে ওর সুখ
আছে। আর তোর সাথে
নেই তুই প্রতিষ্ঠিত
হতে হতে ও
বাচ্চাকাচ্চার মা হয়ে
যাবে। ওর বিয়ে ঠিক
হয়ে গেছে দয়া করে
কোনো ঝামেলা পাকাস
না । বললাম না ৪-৫
বছর পর দেখবি এগুলো
শুধুই আবেগ। এখন দয়া
করে আর ঝামেলা
বাড়ানোর চেষ্টা করিস
না মেয়েটার বিয়ে
হয়ে যেতে দে। দেখবি
কিছুদিন পরই সব ঠিক্
হয়ে যাবে।
- ওকে ছাড়া আর কাউকে
জীবনে বিয়ে করবোও
না আর ওর বিয়ে অন্য
কারো সাথে হতেও
দিবনা দেখে নিও ।
,
ইমরান রাগ বাড়ি
থেকে বেড়িয়ে গেলো।
তার মা পিছন থেকে
ডাকার পরও সে
অনিকাদের বাড়ির
দিকে যাচ্ছিলো। বাড়ি
থেকে বের হতেই
তারেক তাকে ডাক দেয়,
আর জিজ্ঞেস করে,
-কোথায় যাচ্ছিস?
-এইতো সামনেই
-কেন?
-ওর সাথে কথা আছে,
তখনি ইমরানের মা
এসে ইমরান কে টেনে
বাসায় নিয়ে যায় ও
তারেকেও যেতে বলে।
-
ইমরানের মা তারেক
কে জিজ্ঞেস করে ,
তারেক এই বিষয়ে কিছু
জানে কিনা। তারেক
বলে যে সে সব জানতো।
ইমরানের মা তারেক
কে তার ভাইকে ডেকে
আনতে পাঠায়। কেননা
ইমরানের চাচাও
কিছুদিন এর জন্য শহরে
গিয়েছে তাই বাড়িতে
কেউ নেই যে ইমরান কে
বুঝাবে। সে জানে
ইমরান খুব জেদি তাই
তাকে ধমক দিয়ে
বুঝানো যাবেনা। বরং
তারেক এর ভাই ই
বিশ্বস্ত যে বিষয়টা
সামলাতে পারবে।
-
মিনিট দশেক পর
তারেক আসলো । সাথে
তারেক এর বড়ভাই
ইব্রাহিম!
- আসসালামু আলাইকুম
ভাইয়া , (ইমরান)
- ওয়ালাইকুম আসসালাম,
- বসেন
- হুম
তারা খাটের উপর
বসলো আর ইমরান তার
পড়ার টেবিল এ ।
অতঃপর ইমরান কে
জিজ্ঞেস করলো,,
-যা শুনলাম তা কি
সত্যি?
-জি ভাইয়া
-তুমি কি নিশ্চিত তুমি
মেয়েটিকে ভালোবাসো?
-আমি নিশ্চিত আমি ওকে
ভালোবাসি।
-মেয়েটি কি তোমায়
ভালোবাসে?
-হ্যা
-শুনো এ বয়সে কিন্তু
এরকম আবেগ জন্ম নেয়
কিন্তু তা কিন্তু
ভালোবাসা তুমি বলতে
পারবা না আজ আছে কাল
নাও থাকতে পারে।
ভার্সিটি তে আমারও
একটি মেয়েকে ভালো
লাগতো, সে অনেক আগের
কথা আমিও তাকে
প্রপোজ করেছিলাম
কিন্তু সে বলেছিল
এগুলো শুধুই আবেগ , তাকে
বিয়েই বা করবো কবে
আর খাওয়াবোই বা কি!
সবাই সুখ খুজে আর
মেয়েরাও তার খোঁজ
আগে থেকেই শুরু করে ।
মেনে নিলাম সেও
তোমায় ভালোবাসে
তুমিও বাসো! বাবা মা’র
কাছ থেকে কিছু বছর
চেয়েও নিলা, পরে?
একটা ভালো পজিশনে
যেতে যেতে ততদিনে
যদি অন্য মেয়ে তোমার
পছন্দ হয়ে যায়? তখন
তো এই মেয়েটারও
বিয়ে হবেনা, লোকে
বলবে নিশ্চয় মেয়েটার
দোষ তাই ছেলেটা ওকে
ছেড়ে অন্য মেয়েকে
ঘরে তুলেছে। তুমি বুঝতে
পারছো তো আমার কথা?
-হ্যা কিন্তু আমি ওকে
অনেক আগে থেকেই
ভালোবাসি।
-ভুল, ভালো লাগে যাকে
বলে ক্রাশ! আমি তো
তোমার বড় ভাইয়ের
মতই তাইনা?
-হ্যা
-তো আমি কি তোমার
খারাপ চাইবো তুমি আর
তারেক আমার কাছে
সেইম্
তো পাগলামি ছেড়ে
দাও , নিজের দিকে
স্টাডি আর কেরিয়ার
এর দিকে ফোকাস কর
দেখবে সময় এলে
তোমার জন্য যে বেস্ট
তাকেই আল্লাহ তোমার
সাথে দেখা করিয়ে
দিবে। জানোই তো
আল্লাহ সবার জন্য
কাউকে না কাউকে ঠিক
করে রেখেছেন। ভাগ্যে
লিখে রেখেছেন।
-হুম
-এখন আমি চলি, রাত তো
অনেক হলো। ফোনে
আজাইরা টাইম নষ্ট না
করে পড় নইলে ঘুমাও
কিন্তু আমার কথাগুলো
একটু ভেবো।
,
ইব্রাহিম আর তারেক
চলে গেলো। কিন্তু
ইব্রাহিমের কথাগুলো
যেন ইমরানের মাথার
উপর দিয়ে গেলো! তার
মা তার রুমে খাবার
রেখে চলে গেলো।
কিছুক্ষন পর ইমরানের
ভাই আসলো। ইমরান
কানে এয়ারফোন গুজে
চোখ বন্ধ করে গান
শুনছে আর ভাবছে্ তবুও
তার মনে হচ্ছে একবার
ওদের পরিবারের সাথে
কথা বলা উচিৎ
পরক্ষনেই আবার তার
মনে হচ্ছে ইব্রাহিম
ভাই ঠিক ই বলেছে
হয়ত। হাতে সময় খুব কম!
যা সিদ্ধান্ত নেয়ার
শিঘ্রই নিতে হবে
নইলে জীবনভর পস্তাতে
হবে।
,
ইমরানের ভাই ওকে
ধাক্কা দিয়ে জিজ্ঞেস
করলো ,
-ভাইয়া কি হয়েছে, আজ
সবাই এত গুমরো মুখ করে
বসে আছ কেন?
-কিছু হয়নি,
-আমি জানি কি হয়েছে
রোমিও ছ্যাকা
খেয়েছে!
-তাহলে আবার জিজ্ঞেস
করিস কেন?
- মজা লাগে !
-তা তো লাগবেই বান্দর
-একটা কথা বলবো?
-না করলেও তো
বলবি,বল
-আমার না ওই বান্দরনী
টাকে একদম ভালো
লাগেনা,
-ঐ তোর কি করলো?
-থাক সে কথা। ভালো
হইসে ওই এলাকা
ছাড়বে।
-বাতি টা নিভিয়ে দে
আর শুয়ে পড়।
-ঠিক আছে
,
পরের দিন শুক্রবার
তাই এগারোটায় ঘুম
থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে।
অনিকাকে ফোন দেয় ,
কিন্তু অনিকা ফোন
রিসিভ করেনা। সে
মসজিদে যায় জুম্মার
নামায পড়তে।
ফিরার পথে সে
অনিকাদের বাসায়
যায়, গিয়ে দেখে তার
মা ও সেখানে। ইমরান
কে দেখে তার মা
ইশারায় তাকে সাবধান
করে দেয় ।
অনিকার মা ইমরান কে
বলে
‘ অনিকার তো বিয়ে ঠিক
হয়ে গেলো আগামী
মাসের প্রথম শুক্রবারে
বিয়ে সব কিছু কিন্তু
তোকেই দেখতে হবে,
জানিস ই তো আমার
কোনো ছেলে নাই’
‘জ্বি চাচী ’-মুখে
হালকা হয়তোবা মিথ্যে
হাসি দিয়ে ইমরান
বললো।
অনিকার মা বললেন -
‘আজকলকার
ছেলেমেয়েরা তো শুধু
বন্ধু হতেই পারেনা
কিছুদিন গেলেই নাকি
প্রেম শুরু করে দেয়
কিন্তু আমাদের
ছেলেমেয়েগুলো দেখ
দিব্যি বন্ধুর মত রয়ে
গেলো, কোনো
কেলেংকারি বাধায়নি’
তার কথা শুনে ইমরান
কিছুটা অনুতপ্ত অনুভব
করলো। তাদের প্রতি
সবার কত বিশ্বাস! সে
এই বিশ্বাস ভাঙবে না।
যদিও সে শেষবারের
মত অনিকাকে জিজ্ঞেস
করতে চেয়েছিল
অনিকার তার প্রতি কি
সত্যি কোনো ফিলিংস
নেই!
,
সে নক করে অনিকার
রুমে প্রবেশ করলো। আজ
কেনো যেনো একটা
সংকোচ কাজ করছে তার
মনে। অন্যান্য দিন এমন
হয়নি কিন্তু আজ
পরিস্থিতি আর সেরকম
নেই! সব বদলে গেছে।
রুম অন্ধকার অনিকা
ল্যাপটপ এ গান প্লে
করে স্ক্রিনের দিকে
তাকিয়ে আছে দূর থেকে
তার চোখের জল স্পষ্ট
বুঝা যাচ্ছে!
দরজায় শব্দ শুনে
অনিকা সাথে সাথে
চোখের জল মুছে
ল্যাপটপে ফেসবুক লগইন
করে ফেললো!
-কি করিস?(ইমরান)
-এইতো ফেসবুকিং
-লাইট অন করবো?
-কর
ইমরান লাইট অন করে
অনিকার সামনে গিয়ে
দাড়ালো
-দাড়িয়ে আছিস কেন?
-তো কি করবো?
-ঘরে এত্ত বসার যায়গা
সোফা,চেয়ায় একটাতে
বসে পড় চাইলে
এখানেও বসতে পারিস
(অনিকার পাশে)
- না থাক তোর এত কাছে
যাওয়ার দরকার নেই...
হা হা হা তোর হবু বর
জানতে পারলে আমাকে
আস্ত রাখবেনা।(হেসে
দিয়ে)
-হুম
-তুই কি এতক্ষন
কেঁদেছিস?
-না তো! অন্ধকার ছিল
তো তাই এই আলোতে হয়ত
,
-ও আমি আরো ভাবলাম...
-কি?
-কিছুনা। আমি যাই
-কেন?
-ভালো লাগছে না
-ওকে, যা
বলার ছিলো অনেক কথা
কিন্তু ইমরান কিছুই
বলতে পারলো না। কেন
হলো এমন? তাও সে
জানে না।
,
আজ অনিকার বিয়ে!
সম্পুর্ন বাড়ি রঙ
বেরঙের আলোয়
আলোকিত।
হৈচৈ,শিশুদের
চেঁচামিচি,গান-ব
াজনা। আনন্দে ভরপুর!
ইমরান,তারেক ও
সমবয়সি ছেলেরা সকল
কিছুর দেখাশোনা
করছে।
বিগত দিনগুলোতে
ইমরান অনিকার থেকে
দুরত্ব বজায় রেখেছে,
তাদের মধ্যে কোনো
কথা হয়নি। ইমরান
নিজেকে বিভিন্ন কাজে
ব্যস্ত রেখেছে,
বিষয়টা সবাই লক্ষ
করেছে কিন্তু তারা
কিছুই বুঝতে পারেনি।
,
অনিকাকে পার্লার
থেকে বউ সাজিয়ে আনা
হয়েছে। নীল শাড়িতে
অনিকাকে দারুন
লাগছে, ঠিক ইমরান
তার স্বপ্নে যেরকমটা
দেখত। আজ সে সাজ
অনিকা সেজেছে কিন্তু
অন্য কারো জন্য। ইমরান
দূর থেকে এক নজরে
তাকে দেখছে, পাশ
থেকে তারেক তাকে
ডাক দিলো। ইমরান
দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে
সেখান থেকে চলে
গেলো।
,
>>>>দশ বছর পর>>>>
হাস্পাতালে অপরেশন
থিয়েটর এর বাহিরে
অনিকার মা ও তার
শাশুড়ি ঘুড়াঘুরি করছে।
কিছুক্ষন পর ডাক্তার
এসে জানালো
‘অভিনন্দন! মেয়ে
হয়েছে , মিষ্টি
কোথায়? মিষ্টি না
খাওয়ালে কিন্তু
দুজনকেই রেখে দিবো!
হা হা হা’
অনিকার শাশুড়ি বললো ‘
রেখে দাও ’
( কিছুক্ষন নীরবতা)
অনিকার শাশুড়ি হেসে
উঠলো। বুঝতে আর বাকি
রইলো না যে সে মজা
করছিলো! কিছুক্ষন পর
ইমরান দুহাত ভর্তি
মিষ্টির প্যাকেট নিয়ে
এসে সবার মাঝে
মিষ্টি বিলি করতে
লাগলো।
আজ সবার থেকে খুশি
তাকেই মনে হচ্ছে ।
হবার ই কথা আজ সে
বাবা হয়েছে!
,
হ্যা, অবশেষে ইমরান-
অনিকার বিয়ে
হয়েছিলো। তবে খুবই
নাটকীয়ভাবে!
বিয়ের ঠিক আগ
মহুর্তেই অনিকার
ডায়েরী পড়ে যায় তার
মায়ের হাতে। যেখানে
সুস্পষ্ট ভাবে প্রায়
প্রত্যেক পৃষ্ঠাতেই
লিখা ছিলো যে সে
ইমরান কে ভালোবাসে।
অবশ্য একথা অনিকার
মা জানতো তবুও বিয়ে
দিচ্ছিলো। কিন্তু
ডায়েরির শেষ পাতায়
লিখা ছিলো যে সে
ইমরান কে ছাড়া
বাঁচতে চায়না, ইমরান
কে বলেছিল কিন্তু
ইমরান ফ্যামেলির কথা
ভেবে না করে দিয়েছে,
তাই আজ সে বিয়ের পরই
সুইসাইড করবে!
সে দৌড়ে অনিকার রুমে
যায় রুমের সবাই কে
বাহিরে যেতে বলে।
সবাই চলে যাওয়ার পর
অনিকাকে অনেক
বুঝানোর চেষ্টা করে,
কিন্তু অনিকা জানায় ‘
তোমার পছন্দের ছেলের
সাথে বিয়ে দিতে চাও
তো দাও কিন্তু আমি
একদিনও সংসার
করবোনা’
বাহির থেকে কে যেন
এসব কথা শুনে সবাই কে
জানিয়ে দেয়, বিয়েটা
ভেঙে যায়।
লোকজন নানা রকমের
কিৎসা রটাতে শুরু করে
।
অবশেষে সবাই তাদের
বিয়েতে মত দেয়, তারা
ইমরানকে ওয়াদা করায়
যেন সে পড়ালেখায়
মনযোগ দেয় এবং ভালো
পজিশনে প্রতিষ্ঠিত
করে আর তার আগ পর্যন্ত
কিছুটা দুরুত্ব বজায়
রাখে কিন্তু অনিকাকে
ধোকা না দেয়। ইমরান
রাজি হয়ে যায়।
ইমরান সত্যিই তার
কথা রেখেছে, তার
সত্যিকারের
ভালোবাসার প্রমান
দিয়েছে! । নিজেকে
ডাক্তার রুপে
প্রতিষ্ঠিত করে আজ
এলাকার হাসপাতালে
কর্মরত, সে
হাসপাতালেই যেখানে
আজ অনিকা তাদের
মেয়ের জন্ম দিয়েছে।
,
ডাক্তার বললো ‘ চাইলে
আপনিও ভেতরে থাকতে
পারতেন এতে ও আরেকটু
সাহস পেতো’
‘ও এমনি অনেক স্ট্রোং
এখন উল্টো আমি জ্ঞান
হারাতাম, কি করবো
বলুন ওর একটু কষ্টও যে
সহ্য হয়না’
‘আহারে ভালোবাসা
যাও এখন ওকে রুমে
শিফট করা হয়েছে।
‘ওকে আগে এ মিষ্টি গুলো
খান’
তারা ভেতরে গেলো ,
কিন্তু ইমরান অনিকার
দিকে তাকিয়েই দৌড়ে
তাদের মেয়ের কাছে
গেলো ।
ইমরানের শাশুড়ি বললো
‘ দেখেছো নিজের
মেয়েকে পেয়ে বান্দায়
আমার মেয়েকে ভুলে
গেছে!’
‘হুম!’
অনিকা ইমরানের দিকে
তাকিয়ে হেসে বললোঃ
‘চুপ ইডিয়ট! দুজনকেই
প্রায় সমান
ভালোবাসবি হ্যা ওকে
একটু বেশি দিবি তা
বলে আমায় কম দিলে
তোকে মেরেই ফেলবো!
‘এখনো তুই! তুমি বলতে
শিখবা না?’
‘ঐ আমার নাতনী কে
দেখতে দে আমরা
যাওয়ার পর যত পারিস
কথা বলিস।
,
আজ অনিকাকে বাসায়
আনা হয়েছে, সাথে
এসেছে তাদের
পরিবারের নতুন সদস্য!
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now