বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা
আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ
X
মাঝরাতে বাচ্চার কান্নার আওয়াজে ঘুম ভেংগে যাবার মত ভয়াবহ কিছু আর কিছু হতে পারে না।
.
আমি চোখ খুলে তাকিয়ে উপরে সিলিং দেখি, পাশে ফিরে তাকিয়ে দেখি রেখা একদম মৃত মানুষের মত চোখ বন্ধ করে পরে আছে। এদিকে তুতুলের কান্নার আওয়াজ বাড়ছেই। এইটুকুন বাচ্চা কি তার ফুসফুসের জোর!! আমি প্রচন্ড ক্লান্ত শরীর নিয়ে বহুকষ্টে বিছানায় উঠে বসি। আমার আর রেখার মাঝখানে ছোট্ট ছোট্ট কোলবালিশ দিয়ে আলাদা করে রাখা নরম কাথার উপর থেকে তুতুল বাবুকে আলতো করে তুলে নেই। ডাইপারটা ঝুলে গেছে। চেঞ্জ করাতে হবে। আমি একবার রেখার দিকে তাকালাম। বেচারি সারাদিন প্রায় পাগলের মত বাচ্চাটাকে নিয়ে ছুটাছুটি করে এখন ক্লান্ত ভংগিতে বেঘোরে ঘুমুচ্ছে। নাহ তাকে ডাকবো না। নিজেই ওয়েট টাওয়েল টিস্যু, হ্যান্ডওয়াস, নতুন #ডায়পার এনে নাকে ক্লিপ লাগিয়ে ডায়পার চেঞ্জ করতে শুরু করলাম। তুতুল হবার আগেই এসব হাবিযাবি কিনে ঘর ভরে ফেলেছিলাম। জানতাম কাজে লাগবে!!
.
বিয়ের আগে যে রেখাকে আমি ভালোবাসতাম সে রেখা ছিলো প্রচন্ড বোল্ড। সবসময় সে মুখ বাঁকিয়ে বলতো, "আমাকে ভালোবাসিস কেন? আমি ম্যারেজ ম্যাটেরিয়াল না। বিয়েটয়ে বাচ্চাকাচ্চা এসব আমাকে দিয়ে হবে না!" আমি হাসতাম। তার চুলগুলোতে হাতবুলাতে বুলাতে বলতাম "দুনিয়ার কেউই বিয়ের আগে ম্যারেজ ম্যাটেরিয়াল থাকে না, হয়ে যায়" সে আরো বেশি মুখ বাঁকাতো।
.
বিয়ের পর বাচ্চা নেবার ব্যাপারে তার সাথে আমার দীর্ঘ সময় ধরে আলোচনা হতো। সে মাত্রই তার এমএস কোর্স কমপ্লিট করে একটা ভালো জবে ঢুকেছে, স্কলারশিপ নিয়ে পিএইচডি করতে বাইরে যাওয়ার সুযোগ হাতে। এদিকে আমার আম্মু অস্থির হয়ে গেছেন একটা সুসংবাদ পাবার জন্য। বুঝতে পারলাম রাগারাগি করে লাভ হবে না। আমি তখন রেখার সাথে একটা চুক্তিতে এলাম। আমরা একটা বাবু নিবো। তারপর লম্বা গ্যাপ। এর ভেতরে সে তার ডক্টরেট শেষ করবে। দরকার হলে আমিই বাসায় থাকবো। হাজার হোক কনসিভ করবে রেখা, বাবা হিসেবে আমারও তো কিছু স্যাক্রিফাইস করা উচিৎ!!
.
আমি বাচ্চাকাচ্চা দেখাশুনার উপর লম্বা লম্বা কোর্স করতে লাগলাম বাসায় বসে বসে। আমার আম্মুকে বাসায় এনে রাখতে পারলেই হতো, কিন্তু রেখা আর আম্মু একবাসায়- কল্পনা করতেই ঘাম বেরিয়ে যায়। তাছাড়া আম্মু ঢাকায় আসতে পছন্দ করেন না, গ্রামের বাড়িতে সব গুছিয়ে নিয়ে সেখানেই নাকি ভালো আছেন। শুধুমাত্র মেয়ে হয়ে জন্মিয়েছে বলে নিজের সব স্বপ্ন-লক্ষ্য বিসর্জন দিতে বাধ্য করবো, আমি সেরকম মানুষ হতে পারবো না। বাচ্চা-কাচ্চা আমার ভালোই লাগে। আমিই না হয় হলাম হোম-ড্যাড!!
.
জন্মের পর তুতুলকে প্রথম যখন রেখার কোলে তুলে দেওয়া হলো আমি তখন তার চোখের দিকে তাকিয়ে ছিলাম। একরোখা, ঠান্ডা মেয়েটার চোখে কি জানি ঘটে গেলো, সে কাঁদতে লাগলো, অন্যরকম সে কান্না। সে অপার্থিব এক আনন্দে কাঁদছে। আমি বুঝতে পারলাম, মেয়েটা বদলে যাচ্ছে, চিরজীবনের জন্য। আমাকে অবাক করে দিয়ে কয়েকদিন পর সে যখন লাজুক ভাবে বললো "তোমার আম্মুকে বলো না কয়েকদিন আমাদের সাথে এসে থাকতে" তখন আমি পুরোপুরি নিশ্চিত হলাম- নিজের সন্তানের জন্য একটা মেয়ে তার শ্বাশুড়ি তো বটেই দরকার হলে বনের বাঘের সাথেও মিলমিশ করে ফেলবে!!
.
রেখার মেটারনিটি লিভ প্রায় শেষের দিকে। কিন্তু আমি স্পষ্টই বুঝছি তার আবার জবে যাবার বিন্দু মাত্র ইচ্ছে নাই। একটা ছোট্ট বাচ্চা মানুষকে কি তীব্রভাবেই না বদলে দেয়। রেখার দুনিয়াটা এখন তুতুলে আটকে গেছে, সে এখন সারাদিন তাকে গল্প শোনায়, গান গেয়ে শোনায় আরো কতকিছু যে বলে, তুতুল বড় বড় চোখ খুলে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে আর চুকচুক করে দুধ খায়। আমি অফিস থেকে ফিরে তাদের কান্ডকারখানা দেখি। রেখাকে দেখি। মেয়েটার চেহারায় কেমন একটা মায়া মায়া ভাব চলে এসেছে। খুব ছোটবেলায় মা কে হারানো মেয়েটা তার সমস্ত স্বত্তাদিয়ে মা হবার আপ্রাণ চেষ্টা করছে। ক্যারিয়ার ডক্টরের এসব হঠাৎ খুব দুরের জিনিস হয়ে গিয়েছে। যেদিন তার লিভ শেষ হয়ে যাবার কথা সেদিন সকালে সে আমাকে একটা খাম ধরিয়ে দিলো।
"কি এটা?"
"ইউ নো"
"সিরিয়াসলি? রেজিগনেশন লেটার? তুমি জানো আমি চাইলে প্রক্সি দিতে পারি তুতুলকে, দরকার হলে বুয়া রেখে..."
.
মেয়েটার চোখ ধ্বক করে জ্বলে উঠলো, "খবরদার! আমার তুতুলকে নিয়ে এরকম চিন্তা করলে তোমার বারোটা বাজাবো আমি!!" আমি খাইসেরে বলে মানে মানে কেটে পড়লাম। মা জাত রাগলে ভয়ংকর হয়ে যায়!!
.
তুতুলের কান্না থেমেছে। ডায়পার চেঞ্জ করে তুতুলকে মায়ের বুকের কাছে শুইয়ে দিলাম। আমার দিকে কিছুক্ষণ সন্দেহপূর্ণ চোখে তাকিয়ে সে মায়ের বুকের ভেতর চলে গেলো। আমি সব গুছিয়ে এসে আবার শুয়ে শুয়ে রেখা আর তুতুলকে দেখতে লাগলাম। রেখা ঘুমের ঘোরেই তুতুলকে আদর করছে- দৃশ্যটাতে কিছু একটা আছে আমার চোখ ভিজে গেলো। প্রতিটা মেয়েই শেষমেস একজন মা- কঠিন টাইপের একটা মেয়ের ভেতরেও যে গুলুগুলু টাইপের একটা ছোট্টবাচ্চা লুকিয়ে থাকে সেটা দেখার জন্য তার হাতে একটা পুতুল ধরিয়ে দিলেই হয়- আর সেই পুতুলটা যদি হয় নিজের রক্তমাংস দিয়ে তৈরী নিজের বাবু তাহলে একটা মেয়ে সেই পুতুলটাকে নিয়ে সারাদিন খেলার জন্য দুনিয়ার বাকি সব হাসতে হাসতে বাদ দিয়ে দিতে পারে।
সংগৃহীত ।।।।
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now
রূপকথার রাজকন্যা
User ৬ বছর, ২ মাস পুর্বেlemon
Guest ৬ বছর, ২ মাস পুর্বেঅন্ধকারে আলোর ছোঁয়া(আরব)
User ৬ বছর, ২ মাস পুর্বেমাহমুদ হাসান মুন্না
Golpobuzz ৬ বছর, ২ মাস পুর্বেশঙ্খচিল
User ৬ বছর, ২ মাস পুর্বেরূপকথার রাজকন্যা
User ৬ বছর, ২ মাস পুর্বেরূপকথার রাজকন্যা
User ৬ বছর, ২ মাস পুর্বেRana
User ৬ বছর, ২ মাস পুর্বেশঙ্খচিল
User ৬ বছর, ২ মাস পুর্বেMifa
User ৬ বছর, ২ মাস পুর্বেরূপকথার রাজকন্যা
User ৬ বছর, ২ মাস পুর্বেMifa
User ৬ বছর, ২ মাস পুর্বেরূপকথার রাজকন্যা
User ৬ বছর, ২ মাস পুর্বেSuborna Akhter Zhumur
User ৬ বছর, ২ মাস পুর্বেরূপকথার রাজকন্যা
User ৬ বছর, ২ মাস পুর্বেSuborna Akhter Zhumur
User ৬ বছর, ২ মাস পুর্বেরূপকথার রাজকন্যা
User ৬ বছর, ২ মাস পুর্বেরূপকথার রাজকন্যা
User ৬ বছর, ২ মাস পুর্বেFahad
Guest ৬ বছর, ২ মাস পুর্বে