বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা
আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ
X
শুরু থেকে শেষ
..
..
' তুমি জীবনে সুখি হতে পারবে না। আমাকে কষ্ট দিয়ে কখনই ভাল থাকতে পারবা না তুমি। এটাই তোমার নিয়তি। আবার অভিশাপও বলতে পারো।'
মাঝরাতে মাঝে মাঝে হঠাৎ এই কথাগুলো শুনে ঘুম ভেঙ্গে যায়। তখন বুকের ভেতর চরম ব্যাথা করতে থাকে। চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে হয় ' নীলা তোর অভিশাপ লেগে গেছে রে। দেখে যা সত্যি তোকে ছাড়া আমি ভাল নেই, আর সুখ? সেতো অনেক পরের ব্যাপার। প্রতিটা রক্ত কনিকা আজ আমার বিরুদ্ধে চলে গেছে। তোকে আজ আমার বড্ড প্রয়োজন।'
..
- ডাক্তার আমার কি বাঁচার কোন লক্ষন আছে? (আমি)
ডাক্তার আমার কথা শুনে ভোতা মুখে তাকিয়ে থাকে। আমি জানি ডাক্তার আমাকে একটা উত্তরই দিবে। তা হচ্ছে মৃত্যু। কিন্তু ডাক্তাররা এতটা নির্দয় নয় যে রোগির মুখের উপর এই কথাটা বলবে।
এখন প্রতিনিয়তই নীলাকে খুঁজছে এই দুচোখ। প্রতিদিনই কেউ না কেউ দেখা করতে আসে আমার সাথে। কিন্তু প্রতিদিনই আমাকে হতাশ হতে হয়। কারণ নীলা যে আসে না।
..
নীলা ছিল আমার কলেজ জীবনের বান্ধবী। খুবই কাছের একজন ছিল সে। কখন যে সে আমার আরো কাছে এসে পড়ে তা আমি বুঝতেই পারিনি।
তবে কলেজ জীবনে আমরা দুজনের কেউই নিজের মনের কথা খুলে বলিনি। অনার্স প্রথম বর্ষে উঠার পর প্রথমবার আমরা একে অপরকে আমাদের মনের কথা বললাম। তাও অনেক নাটকীয় ভাবেই।
সেদিন ছিল ১৪ই ফেব্রুয়ারী। ইশিতা সেদিন একটা নীল শাড়ি পরে এসেছিল, আর আমি লাল পাঞ্জাবি। হাতে একটা লাল গোলাপ ছিল আমার, আর নীলার হাতেও ছিল একটা লাল গোলাপ।
- কিরে আজ তো একেবারে লাল বাহাদুর হয়ে এসেছিস। (নীলা)
- হুম আর তুই নীল পরী হয়ে। (আমি)
- ওইটা কি দেখছিস?
নীলা যেদিকে আঙ্গুল দিয়ে দেখাচ্ছে সেদিকে তাকিয়ে দেখলাম একটা গরু আপন মনে ঘাস খাচ্ছে।
- হুম দেখলাম তো। একটা গরু।
- তুই জানিস গরুরা লাল রং একেবারেই পছন্দ করে না।
নীলার কথা শুনে আমার বুকটা ধড়াস করে উঠলো। মাথাটা ঘুরঘুর করতে লাগলো। হায় হায় এখন যদি গরুটা আমার দিকে তেড়ে আসে?
- নীলা চল এখান থেকে অন্য কোথাও গিয়ে বসি।
- কেন গরু দেখে কি হাওয়া বেরিয়ে গেছে নাকি?
- ধুর বাজে বকিস না। চল তো ওইদিকে।
- আচ্ছা চল।
..
- কিরে ফোনে বললি যে কি একটা গুরুত্বপূর্ন কথা বলবি? (নীলা)
- তুই তো নিজেও বলেছিলি যে তুইও একটা গুরুত্বপূর্ণ কথা বলবি। বল তুই আগে বল।
- নাহ তুই আগে বল।
- নাহ তুই আগে।
- বললাম না তুই আগে বল।
নিজের মনের কথাগুলো মনে মনে গুছিয়ে নিলাম। গলাটা হঠাৎ অস্বাভাবিক ভাবে কাঁপছে। কথা বেরুবে কিনা সন্দেহ।
- নীলা আমাদের প্রথম দেখা হওয়ার কথা মনে আছে?
- হ্যা আছে।
- সেদিন তোকে আমি আপনি করে বলেছিলাম তাই না?
- হুম।
- তারপর আমরা যখন বন্ধু হলাম তখন তুই করে বলতে শুরু করলাম। তাই না?
- হ্যা।
- আপনি আর তুই মাঝখানে কিন্তু আরেকটা শব্দ রয়ে গেছে।
- কোনটা?
- তুমি। তোকে আজ থেকে তুমি ডাকার অনুমতি দিবি?
- মানে?
- মানে আমার এই হৃদয় বলছে তোমাকে চাই, আমার প্রতিটা রক্ত কনিকা আমায় বলছে তোমাকেই চাই। ভালবাসি নীলা ভালবাসি তোমায়।
আমার কথা শুনে নীলা বেশ কিছুক্ষন গুম হয়ে বসে ছিল। আমি তখন শুধু আশেপাশে কোন গরু আছে কিনা তাই দেখছিলাম। বলা যায়না কখন এসে গুতো মারে।
- তোর বলা শেষ? এবার আমি বলি? (নীলা)
- হ্যা শেষ। (আমি)
- আমার সবচেয়ে প্রিয় কি জানিস?
- নীল প্রজাপতি।
- নীল প্রজাপতি পেলে আমি কি করি জানিস?
- ধরে বয়ামে ভরে রাখিস।
- তুই কি আমার নীল প্রজাপতি হবি?
- মানে?
- তোকে নীল প্রজাপতির মত আমার মনের বয়ামে আটকে রাখতে চাই আজীবন।
- প্রোপোজের বদলে কাউন্টার প্রোপোজ?
- তুমির বদলে নীল প্রজাপতি।
- হা হা হা হা।
..
সেই ছিল আমাদের শুরু। হাতে হাত ধরে নতুন করে পথ চলা। একেকটা দিন ছিল একেকটা স্বপ্নের মত।
মনে করতাম সুখের বুঝি আর কোন শেষ নেই। আর কখনো হবেও না। কিন্তু আমি কি জানতাম সুখ আমার কপালে খনিকের জন্য এসেছে? নাহ জানতাম না।
আমাদের নতুন পথচলার তিন বছর চলছে। হঠাৎ একদিন আমার জ্বর উঠলো, প্রচন্ড জ্বর। দুই দিনের মাথায় ভাল হয়ে গেলো। তার কিছুদিন পর আবারো জ্বর, সাথে পুরো শরীর ব্যাথা তো আছেই। এভাবে প্রায় একমাস কেটে গেল। যখন দেখলাম শরীর ভাল হওয়ার কোন লক্ষন নেই তখন শহরের বড় একজন ডাক্তারের শরনাপন্ন হলাম।
..
অনেকগুলো পরীক্ষা করাতে বললো। সব পরীক্ষা করালাম। এবং কিছুদিন পর যা শুনলাম তা শোনার জন্য আমি মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না।
- আরমান তোমাকে কিভাবে কথাটা বলবো বুঝতে পারছি না।
- আমার কি হয়েছে ডাক্তার সাহেব?
- দেখো তুমি আরো আগে এলে হয়তো কিছু একটা হতো। তবে এখন কিছু করার নেই হয়তো।
- কি হয়েছে বলুন প্লীজ।
- তোমার লিউকেমিয়া হয়েছে।
..
লিউকেমিয়া নামে কোন রোগের নাম এর আগে শুনিনি। তাই ডাক্তারের দিকে তাকিয়ে থাকলাম। আমার বাবা আমার পাশে ছিলেন। তার মুখটা হঠাৎ করেই কালো হয়ে গেল।
- লিউকেমিয়া মানে?
- ব্লাড ক্যান্সার।
মূহুর্তেই পায়ের নীচ থেকে মাটি সরে যেতে লাগলো আমার। মাথাটা ফাঁকা হয়ে গেছে। শরীরটাও হালকা হয়ে গেল। মনে হচ্ছে এখনি উড়ে যাবো আকাশে।
..
গবেষনা অনুযায়ি ক্যান্সারে আক্রান্ত মানুষদের মধ্যে ৭০ ভাগের বয়স ৬০ থেকে ৮০ বছর। আর আমার বয়স কত? মাত্র ২৪ বছর।
ভাগ্যের নির্মম পরিহাস আর কাকে বলে?
..
এর পর অনেক চেষ্টা করেছি, অনেক লড়াই করেছি। কিন্তু ফলাফল কি জানেন? ফলাফল শূন্য, শুধুই শূন্য।
ধীরে ধীরে ভেতর থেকে নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছি আমি। যতই মৃত্যুর কাছাকাছি আসছি ততই নীলার প্রতি আমার টান তীব্র হচ্ছে। জানি এই টান থাকাটা বর্তমানে অর্থহীন। কিন্তু এখন আর নিজের প্রতি কোন নিয়ন্ত্রন নেই।
..
কিছুদিন পরপর রক্ত পরিবর্তন করাচ্ছি। কিন্তু কোন লাভ হচ্ছে না। ডাক্তার বলছে, যদি প্রাথমিক অবস্থায় ধরতে পারতো তাহলে হয়তো কিছু একটা করা যেত। কিন্তু যখন ধরা পড়েছে তখন কারো কিচ্ছু করার নেই।
..
দেখতে দেখতে আরো একটা ভালবাসা দিবস চলে এসেছে। আমাকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। কঠিন সিদ্ধান্ত।
নীলা আজ পরে এসেছে একটা হালকা গোলাপি রঙের শাড়ি। আর আমি? একটা বিবর্ণ টিশার্ট। যেখানে জীবনটাই ধূসর সেখানে রঙচঙে পোশাক পরে ভাল থাকার চেষ্টা করে কি লাভ।
নীলা কাছে এসেই কোন কিছুর তোয়াক্কা না করেই আমাকে জড়িয়ে ধরলো। ওর উষ্ণ আলিঙ্গনে আমি আবদ্ধ। আমারও ইচ্ছে হচ্ছিল নীলাকে জড়িয়ে ধরি। কিন্তু মৃত্যু নামক শৃঙ্খলে আজ আমি আবদ্ধ।
- কি ব্যাপার তোমাকে আজ এমন লাগছে কেন? তুমি ঠিক আছো?
- হ্যা ঠিক আছি। জ্বরের কারণে একটু দুর্বল লাগছে।
- ও আচ্ছা চলো কোথাও ঘুরে আসি আজ।
- হুম যাবো। তার আগে কিছু কথা বলার ছিল।
- কি কথা চলো যেতে যেতে বলি।
- নাহ এখানেই বলতে হবে।
- ঠিক আছে বলো।
- আমার মনে হচ্ছে আমাদের এই সম্পর্কটা আর সামনে নিয়ে যাওয়া ঠিক হবে না।
আমার কথা শুনে নীলা থমকে গেল। ওর চোখের দৃষ্টি স্থীর। অনেকখানি অবাক হয়েছে বুঝতে পারছি।
- কি..কি ব.বলতে চাও তুমি?
- অনেক ভেবেছি আমি। আমার সাথে তোমাকে মানায় না। আমি তোমার চেয়ে ভাল কাউকে পাওয়ার আশা করি।
- মানে?
- মানে খুবই সোজা, তুমি তোমার মত কাউকে খুঁজে নাও। আমার সাথে তোমার যায়না। I want breakup.
- তাহলে সেদিন কেন বলেছিলে ভালবাসি?
- ওটা ছিল আবেগ। আসলে অনেকদিন একসাথে চলেছি। হয়তো একটু দূর্বলতা জন্মেছিল তোমার প্রতি। তাই........
..
কথা শেষ করার আগেই নীলার কোমল হাতটা সজোরে এসে আমার গালে আঘাত করলো।
চারপাশের অনেকেই আমাদের দিকে তাকাচ্ছিল। হয়তো ভাবছে আমি নীলাকে প্রোপোজ করেছি আর সে জবাবে থাপ্পড় উপহার দিয়েছে।
- আবেগের বশে ভালবাসি বলেছিলে? তোমার ব্র্যাকআপ চাই?
- হুম।
- ঠিক আছে দিয়ে দিলাম তোমায় মুক্তি। তবে মনে রেখো তুমি জীবনে সুখি হতে পারবে না। আমাকে কষ্ট দিয়ে কখনই ভাল থাকতে পারবা না তুমি। এটাই তোমার নিয়তি। আবার অভিশাপও বলতে পারো।
..
নীলা চলে যাচ্ছে। ওর চোখে পানি। চোখ মুছতে মুছতে সে যাচ্ছে।
আমার চোখেও পানি। তবে আমি চোখ মুছবো না। ঝরতে থাকুক এই নিয়তি। যা আজ আমায় দূরে ঠেলে দিয়েছে নীলার কাছ থেকে।
যেখান থেকে আমাদের স্বপ্নের পথচলা শুরু হয়েছিল আজ সেখান থেকেই আজ শেষ হলো। ভাল থাকিস নীলা। আমি চলে যাবো, তবে বেঁচে থাকুক আমার ভালবাসা।
..
লেখকঃ আরমান হোসেন
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now
HM.RAFAY
User ৬ বছর, ২ মাস পুর্বেআবরার রাহমান
User ৬ বছর, ২ মাস পুর্বেআনোয়ার হোসেন
User ৬ বছর, ২ মাস পুর্বেMifa
User ৬ বছর, ২ মাস পুর্বে