বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা
আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ
X
ভালবাসার রকমফের
..
..
- ভাই একটু আস্তে চাপ দিন। আঙ্গুলে খুব ব্যাথা। (আমি)
- আরে ভাই চাপ না দিলে তো ছাপ উঠবে না ঠিকমত। (দোকানদার)
- ঠিক আছে যত জোরে মন চায় চাপ দিন।
..
অবশেষে মেট্রিক পরীক্ষা দিয়ে একটা সীম কিনে ফেললাম। মেট্রিক মানে বায়োমেট্রিক আরকি। আগের দুইটা সীমই আমাদের রান্নাঘরের চুলায় ইতিমধ্যেই বাষ্পে পরিনত হয়েছে।
আগের দুটো সীমের সাথে সাথে বিশেষ একজন মানুষের নাম্বারটাও বাষ্প হয়ে গেছে। এর ফলে আমার মনে কোন ব্যাথা নেই। শুধু মনটা মাঝে মাঝে কেমন যেন করে উঠে।
..
আজ একসপ্তাহ হয়েছে রাইশার সাথে কথা বা দেখা হয়না। আমি ইচ্ছে করেই ওর সাথে দেখা করিনা। আর কোনদিন করতেও চাইনা।
আর যাতে কোনদিন ওর মুখ দেখতে না হয় সেই ব্যবস্থাও করছি।
কিন্তু আমি কি পারবো রাইশাকে না দেখে থাকতে? হ্যা হয়তো কিছুদিন কষ্ট হবে, কিন্তু ধীরে ধীরে সবকিছু সয়ে যাবে। একদিন হয়তো আমার স্মৃতির অতল গহ্বরেও রাইশার কোন চিহ্ন থাকবে না।
মানুষের প্রকৃতিটা এমনই। অনেকদিন যদি কারো সাথে যোগাযোগ না থাকে তাহলে আপনাআপনি সেই মানুষটিকে ভুলে যায়।
আমিও ভুলে যাবো। হ্যা আমি অবশ্যই ভূলে যাবো।
..
রাইশা ছিল আমার স্কুল জীবন থেকে শুরু করে কলেজ জীবন এবং বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের সবচেয়ে কাছের বন্ধু। শুধু বন্ধু না, তার চেয়ে বেশি কিছু। স্কুল জীবন থেকেই আমি রাইশার প্রতি দূর্বল ছিলাম। এখনো আছি, এবং হয়তো যতদিন ভূলতে না পারবো ততদিন থাকবো।
আমি মনে মনে রাইশাকে ভালবাসতাম। আমি আমার মনের কথা রাইশাকে অনেক ভাবে বলেছি। কিন্তু রাইশা প্রতিবারই ফাজলামো মনে করে আমার প্রস্তাব উড়িয়ে দিয়েছে।
একদিনের কথা বলছি শুনুন.....
- রাইশা এই রাইশা।
- গরুর মত চিল্লাচ্ছিস কেন?
- আমি গরু?
- না তুই গেছো গরু।
- গেছো গরু কিরে?
- তা জেনে কি করবি? ডাকছিলি কেন তাই বল।
- আমি তোকে ভালবাসি।
- আমিও।
- সত্যি বলছিস তো?
- নাহ মিথ্যা বলছি।
- এই তুই কি আমার মনের কথা কখনো বুঝবি না?
- কে বলেছে তোর মনের কথা বুঝি না? আমি তোর মনের কথা বুঝি।
- ও আচ্ছা। তাহলে বল আমার মন এখন কি চায়?
- তোর মন এখন ঘাস খেতে চায়। কারন তুই যে গরু, হিহিহি।
..
এভাবেই প্রতিবার আমার ভালবাসার কথা রাইশাকে বলেও পাত্তা পাইনি। তাই একসপ্তাহ আগে রাইসাকে খুব সিরিয়াসলি আমার ভালবাসার কথাটা বলেছিলাম।
- রাইসা একটা কথা ছিল।
- হুম বল তোর কথা।
- সিরিয়াসলি বলছি কিন্তু। মন দিয়ে শুনবি।
- হুম বল।
- দেখ আমি তোকে ভালবাসি। সেই স্কুল থেকে আমি তোকে ভালবাসি। তোকে অনেকবার বলেছি কিন্তু তুই পাত্তা দিলি না। তাই আজ তোর কাছে এব্যাপারে জানতে চাই।
- দোস্ত এটা কখনো সম্ভব নয়।
- কেন সম্ভব নয়? কারণটা কি?
- কারণ আমি অন্য কাউকে ভালবাসি।
..
কথাটা শুনে সমস্ত দেহে বিদ্যুতের ঝাঁকুনি খেলাম। চরমভাবে মন এবং দেহে একটা অবসাদ এসে ভর করলো।
- ভা..ভালবাসিস? কিন্ত কাকে ভালবাসিস? আমাকেতো কখনো বলিসনি।
- তোকে বলার প্রয়োজন মনে করিনি। তোকে সব কথা বলতে আমি বাধ্য নই।
রাইশার মুখে এই কথা শুনে দুচোখ দিয়ে নিজের অজান্তে টপটপ করে পানি পড়তে শুরু করলো।
তারপর সেখানে আর দাঁড়ালাম না। সোজা বাসায় এসে নিজের রুমে ঢুকে দরজা আটকে দিলাম। সেদিন সারারাত কেঁদেছিলাম।
..
তারপর সীমগুলো রান্নার চুলায় ফেলে দিলাম। ফেসবুক আইডি ডিএক্টিভেট করলাম।
ইউনিতে যাওয়াও বন্ধ। এবং এখান থেকে অন্য কোথাও চলে যাওয়ার ব্যবস্থা করছি।
..
অবশেষে ঠিক করলাম চট্টগ্রাম চলে যাবো। আমার চাচা ওখানেই থাকেন। সেখানে থেকেই বাকি লেখাপড়া সমাপ্ত করার ইচ্ছা মনে রয়েছে।
চট্টগ্রামে যাবো এটা আমিই ঠিক করেছি। কিন্তু এখন কেন যেন যেতে ইচ্ছে করছে না। মনে হচ্ছে রাইশাকে ছেড়ে আমি কোথাও বেশিদিন থাকতে পারবো না।
কিন্তু না আমাকে পারতেই হবে। এবং আমি অবশ্যই পারবো।
..
আজ শনিবার। সোমবারে আমি চট্টগ্রামে চলে যাবো। বুকের ভেতর কেমন একটা ঝড় বইছে। মন একবার বলছে চলে যাবো, আরেকবার বলছে রাইশাকে ছাড়া আমি বাঁচতেই পারবো না।
শেষবারের মত রাইশাকে দেখতে ইচ্ছে করছে। ওই পাষানি হয়তো আমাকে ভালবাসে না। কিন্তু আমার এই পাগল মন যে মানছে না। বার বার রাইশার কাছে ছুটে যাচ্ছে। এখনই এই অবস্থা। দূরে চলে গেলে আমার কি হবে তাই ভাবছি।
..
ইউনির সামনে দাঁড়িয়ে আছি। আগামীকাল চলে যাবো। রাইশাকে শেষবারের মত দেখার ইচ্ছেটাকে দমন করতে পারলাম না। অন্ত্যত বিদায় বলতে তো পারি।
ইউনিতে ঢুকে বন্ধুদের সাথে দেখা করলাম না। কারন দেখা হলেই কৌফিয়ত তলব করবে। কোথায় ছিলাম, এতদিন আসিনি কেন, কি সমস্যা ব্লা ব্লা ব্লা।
আমি খুঁজছিলাম একজনকেই। সে আর কেউ নশ, রাইশা। অনেকক্ষন খোঁজার পর পেলাম তাকে। দূর থেকে দেখলাম একটা ব্যাঞ্চে বসে আছে মাথাটা নিচু করে। দেখে মনে হয় মাটির উপর পড়ে থাকা কিছুর দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে আছে।
একবার মনে হলো ফিরে চাই। কি দরকার আর মায়া বাড়িয়ে?
আবার চিন্তা করলাম এসেছি যখন দেখা করেই যাই। হয়তো আর কোনদিন দেখা হবে না। আর দেখা হলেও হয়তো তখন রাইশার কোলে থাকবে তার সন্তান।
দোনামনা করে এগিয়ে গেলাম রাইশার দিকে। একেবারে কাছে গিয়ে দাঁড়ালাম। মাত্র দুইহাত দুরত্ব রয়েছে আমার আর রাইশার মাঝে। কিন্তু আশ্চর্য, রয়ইশা এখনো একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মাটির দিকে। খুবই মনমরা লাগছে তাকে।
আমি একটু জোরে একটা কাশি দিলাম। কাশির শব্দে রাইশা চমকে আমার দিকে তাকালো।
রাইশার মুখটা দেখে অনেকটাই চমকে উঠলাম। মায়াময় মুখটা আজ কেমন যেন ফ্যাকাশে লাগছে। চোখের নিচে কালি। ঠোটদুটো শুকনো খটখটে।
নিজের অজান্তেই আবার চোখে পানি চলে এলো। শত হলেও এখনো তো তাকে ভালবাসি।
..
কি এমন হতে পারে রাইশার? যার কারনে এই কয়েকদিনেই ওর এত পরিবর্তন?
এসব কথাই ভাবছিলাম। এমন সময় আমাকে অবাক করে দিয়ে রাইশা উঠে দাঁড়িয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরলো।
ঘটনার আকষ্মিকতায় আমি পাথর হয়ে গেলাম। একটু পরেই বুঝতে পারলাম রাইশা কাঁদছে। কারন আমার শার্ট ভিজে গেছে রাইশার চোখের পানিতে।
কখন যে আমিও রাইশাকে জড়িয়ে ধরলাম টেরই পাইনি।
টানা দুই মিনিট রাইশা আমাকো জড়িয়ে ধরে রাখলো। তারপর বলে উঠলো,
- তুই এমন কেন? আমাকে কষ্ট দিতে তোর ভাল লাগে তাইনা?
এমন কথা শুনে আমি অবাকের উপরে অবাক হলাম। আমি কিছু বলতে যাবো তার আগেই,
- তুই এতদিন কোথায় ছিলি? তোর ফোন বন্ধ কেন? তুই জানিসনা আমি তোকে কতটা ভালবাসি?
আমি নিজের কানদুটোকে বিশ্বাস করতে পারছি না। মনে হচ্ছে সবই স্বপ্ন। চোখ খুললেই স্বপ্নটা ভেঙ্গে যাবে।
একটু পরে রাইশা আমাকে তার আলিঙ্গন থেকে মুক্ত করলো। তবে কান্নার গতি আরো বেড়ে গেছে ওর।
কিছুক্ষন দুজনেই চুপ। শুধু রাইশার কান্নার শব্দ ছাড়া আর কিছুই শোনা যাচ্ছে না।
আমি রাইশাকে বললাম,
- রাইশা কান্না থামা।
- আমি কাঁদলে তোর কি?
- আমার কষ্ট লাগে।
- তাহলে আমাকে ছেড়ে কোথায় ছিলি এতদিন? তুই নাকি আমাকে ভালবাসিস। এই তোর ভালবাসার নমুনা? (কান্না করতে করতে)
- কি করবো বল? তুই যে অন্য কাউকে........।
- চুপ আর একটা কথাও বলবি না। আমি শুধু তোকে ভালবাসি। আার কাউকে না।
..
রাইশার কান্নাটা এখন কিছুটা কমেছে। তবে এখনো ওর চোখে পানি।
- ওইদিন বললি কেন যে তুই অন্য কাউকে ভালবাসিস?
- বলেছি কারন আমি তোকে আমার জীবনের সাথে জড়াতে চাইনি। কারন ভালবাসার পরিনতি কি হয় তা আমি জানি।
- কিভাবে জানিস? জানতে পারি?
- আমার বোনকে চিনিস?
- হ্যা।
- আমার বোনও ভালবেসে বিয়ে করেছিল। কিছুদিন তার সংসার সুখেই কেটেছিল। কিন্তু কিছুদিন যাওয়ার পর থেকেই ওদের সংসারে অশান্তি শুরু হয়। প্রতিদিন ঝগড়া ছিল তাদের রুটিনের মত। আমার দুলাভাই অনেকবারই আমার বোনের গায়ে হাত তুলেছে। এটাই হচ্ছে ভালবাসার পরিনতি।
এই কারনেই তোকে আমি আমার জীবনের সাথে জড়াতে চাইনি। আমি চাইনি আমাদের পরিনতিটাও আমার বোনের মত হোক।
- তাহলে এখন কেন জড়াচ্ছিস আমাকে তোর জীবনে?
- কারণ এই কয়দিনে আমি বুঝে গেছি তোকে ছাড়া আমার জীবন অর্থহীন।
- তাই নাকি?
- হ্যা। সাইকেল যেমন এক চাকা দিয়ে চলতে পারেনা তেমনি আমিও তোকে ছাড়া চলতে পারবো না। তুই এই কয়েকদিন আসিসনি। আমি প্রতিরাতে তোর জন্য কেঁদেছি। তোর নাম্বারে হাজারবার ফোন দিয়েছি। কিন্তু তোকে পাইনি।
- জানিস সাইকেল কিন্তু এক চাকা দিয়ে চলে। আমি দেখেছি।
- (ভ্রু কুচকে) কি বললি?
- হ্যা দেখেছি, সার্কাসে।
- দেখ মেজার খারাপ করিস না।
- করলে কি করবি?
- মারবো তাহলে।
- ঠিক আছে মার।
..
রাইশা আমার পিঠে আস্তে একটা থাপ্পড় দিল। তারপর আমার কাঁধে মাথা রাখলো। ওর একটা হাত আমি শক্ত করে ধরে রেখেছি। কখনোই আমাদের ভালবাসার পরিনতি যেন রাইশার বোনের মত না হয় সেই চেষ্টাই আমি করবো।
ওহ ভুলেই গেছি। আমাকে এখনি ফোন দিয়ে চট্টগ্রাম যাওয়ার বাসের টিকেটটা বাতিল করতে হবে।
..
লেখকঃ আরমান হোসেন
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now
নীলারণ্য
User ৬ বছর, ২ মাস পুর্বে