বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা
আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ
X
নাইমা চমকে ওঠে। সায়েম হঠাৎ করে তাকে জড়িয়ে ধরবে নাইমার ভাবনাতেও এই চিন্তাটা আসেনি। সায়েম ফুসফুস করে কাঁদছে। নাইমা ভেবে পাচ্ছেনা সায়েমকে কি বলবে? স্পষ্ট শুনতে পায় নাইমা সায়েম তাকে সরি বলছে। নাইমা জোর করে সায়েমকে ছাড়িয়ে চেয়ে থাকে তার মুখের দিকে। তারপর বলল, সরি কেনো বলছেন?
সায়েম কিছু বলেনা, মাথা নিচু করে নিচের দিকে চেয়ে বসে আছে। নাইমা আবার বলল, কি হলো কথা বলছেন না যে?
সায়েম একদৃষ্টিতে নাইমার দিকে তাকায়।
নাইমার একটি হাত ধরে বলতে থাকে, আমি এতোদিন তোমার সাথে অনেক খারাপ ব্যবহার করেছি, তোমাকে স্ত্রীর অধিকার না দিয়ে অনেক বড় অপরাধ করে ফেলেছি। আমাকে দয়া করে মাফ করে দাও। আমি এখন থেকে তোমার সাথে আর এরকম করবোনা, চেষ্টা করবো তোমাকে অনেক সুখে রাখার।
সায়েমের কথা শুনে নাইমা কি করবে বুঝতে পারছিলনা। অদ্ভুত চোখে সায়েমের দিকে তাকিয়ে আছে। আজ এমন কি হলো সায়েমের, এতো সহজেই তাকে মেনে নিচ্ছে। সায়েমের কাছে জানতে চাইলো,
আপনার কি হইছে? আপনি এরকম করতেছেন কেন?(নাইমা)
কিছুই হয়নি বলে নাইমাকে আবার বুকের সাথে আটকে ধরলো। গোপন কথা মেয়েদের বলতে নেই, তাহলে একশত একটা প্যাচ ধরে সবকিছু থামা থামা করে দিবে সায়েম সেটা ভালো জানে, তাইতো স্বপ্নের কথাগুলো শেয়ার করেনি নাইমার সাথে। নাইমা সায়েমের বুকে লুকিয়ে আছে, সায়েমের কাছ থেকে নিজেকে ছাড়াতে মন চাচ্ছেনা! স্বামীর প্রথম ছোয়া অসম্ভব এক অনুভূতি, 'বলে বোঝানো দায়'। তারপরও ছাড়াতে হলো, নামাজ পড়তে হবে যে। সায়েম হাসিমুখে নাইমাকে ছেড়ে দিল। এই প্রথম সায়েমের মুখে হাসি দেখতে পেল নাইমা। মনটা একদম জুড়িয়ে গেল তার। নামাজ পড়া শেষ নাইমার। দেখতে পেল, সায়েমও নামাজ পড়ার জন্য তৈরী হলো, 'ইশ টুপি মাথায়, কি সুন্দর লাগছে জামাইটাকে' একটা পাপ্পি দিলে মন্দ হয়না। হিহিহি করে হেসে ওটলো নাইমা। বউয়ের মুখে হাসি শুনে ফিরে থাকায় সায়েম,
'কি হইছে, এতো হাসছো যে? '
'সুন্দর লাগছে তোমায়'
কথাটি বলেই দৌড়ে রুম থেকে বের হয়ে যায় নাইমা।
'পাগলি একটা' বলে হাসি মুখে নামাজ পড়তে যায় সায়েম।
খালেক সাহেব আর তার বন্ধু(নাইমার আব্বা) মসজিদ থেকে নামাজ পড়ে চলে আসছেন। নাইমাকে ডাক দিয়ে খালেক সাহেব বললেন চা দিতে।
'বাবা আপনারা একটু বসেন, আমি চা নিয়ে আসছি'।
নাইমা চা দিতে আসছে। খালেক সাহেব আর নাইমার আব্বা নাইমার দিকে হা করে তাকিয়ে আছেন। আজ মেয়েটিকে অন্যরকম লাগছে। কি হাসি খুশির জোয়ার বইছে মনে। এতোদিনে এরকম একদিনও দেখতে পাননি নাইমাকে। কাছে গিয়ে নাইমা শ্বশুর আব্বা ও নিজের বাবার হা করে থাকিয়ে থাকা দেখে, কিছুটা লজ্জিত স্বরে জিজ্ঞাসা করলো,
'আপনারা আমার দিকে এমন হা করে থাকিয়ে কি দেখছেন বাবা'?
'তোকে খুব সুন্দর লাগছেরে মা, তাই দেখছি'
'কি বলেন বাবা? আমি তো প্রতিদিনই এইরকমই থাকি' কথাটি বলে চা দিয়েই লজ্জায় দ্রুত কেটে পড়ে নাইমা।
ইফাত ঘুম থেকে উটে মা মা বলে রান্নাঘরে নাইমার কাছে গেল।
সায়েমের জন্য নাস্তা তৈরী করছিল নাইমা। ছেলেটা এতো সকাল জেগে ওঠেছে, এখন তাকেই তো আগে ফ্রেশ করাতে হবে। ইফাতকে নিয়ে ওয়াস রুমে চলে যায়। ভালো করে হাত পা আর মুখ ধুইয়ে দিয়ে ইফাতকে নিয়ে আবার চলে আসলো রান্নাঘরে। সায়েমের জন্য নাস্তা নিয়ে ইফাতের হাত ধরে সায়েমের রুমে গেল। সায়েম বই পড়ছে। টেবিলের সামনে নাস্তা রাখলো নাইমা। সায়েম নাইমাকে বসতে বলল। 'ইফাতকে খাওয়াতে হবে, এখন যাই, পরে বসবো'
নাইমা চলে আসে। ইফাতকে নাস্তা করাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।
সায়েম নাস্তা শেষ করে নাইমাকে ডাক দিল।
ইফাতকে কোলে নিয়ে সায়মের সামনে যায় নাইমা।
'আমি একটু বাজারে যাচ্ছি'
'এখন বাজারে যাওয়ার সময় নাকি? সবেমাত্র নয়টা বাজে'।
'একটা দরকার আছে, গিয়েই চলে আসবো'।
'কি দরকার,আমাকে বলা যাবে'?
'তোমার জন্য একটা গিফ্ট কিনতে যাচ্ছি'
'পাগল নাকি তুমি? এতো সকালে গিফ্টের কি প্রয়োজন? আমার কোনো গিফ্ট লাগবেনা। বসে থাকো তুমি, আমি আসছি'
"না" 'আমি যাচ্ছি,'
'কি পাগলামিরে বাবা, এতো সকালে তুমি কি গিফ্টের দোকান খোলা পাবে? বাদ দাও, এখানে বসে বসে ম্যাগাজিন পড়'
'খোলা পাবো, আমি যাচ্ছি'
'সাবধানে যেও'
সায়েম যেতে দরজার বাহিরে পা ফেলল। আবার ফিরে নাইমা কাছে আসার জন্য ডাক দিল। নাইমা কাছে আসলো, কিছুক্ষণের মধ্যেই ঠোটে একটা শিহরণ বুঝতে পারে নাইমা। সায়েম দুষ্টমি করে ফেলছে! তাও ইফাতের সামনে। ছোট হলেও কি বুঝতেও তো পারে। খাড়া বাঁশের মত দাঁড়িয়ে থাকলো নাইমা। সায়েম মিষ্টি করে হেসে চলে গেল। নিচে বাবা আর শ্বশুরকে বসা দেখে সালাম করে, তার বাবার উদ্দেশ্যে বলল,
'বাবা আমি একটু বাজারে যাচ্ছি'
'কেনোরে বাবা, এতো সকাল সকাল বাজারে যাবি কেন'?
'একটু কাজ আছে বাবা'।
আচ্ছা বাবা, সাবধানে যাবি।
সায়েম চলে গেল। খালেক সাহেব আর নাইমার বাবা দুজনই আবার গল্প শুরু করলেন। নাইমা ইফাতকে সাথে নিয়ে রান্নাঘরে আছে। মজার মজার রান্না করছে সে। সায়েম বাহিরে এসে গাড়ী বের করতে লাগলো। আজ গাড়ী সাথে নিতে ভালো লাগছেনা তার। সামান্য পথ, হেঁটে হেঁটেই যেতে পারবে। গাড়ী না বের করেই হাঁটা শুরু করলো। হাসি মুখে হেঁটে হেঁটে এগিয়ে চলছে সায়েম। জাফর এতোদিন জেলে ছিল, সন্তান হত্যার বদলা নিতে পারেনি। গত কয়েকদিন আগেই বের হইছে জেল থেকে, তারপর থেকে সায়েমকে খুজছে সে। চারদিকে তার সাঙ্গপাঙ্গদের বলে রাখছে, সায়েমকে চোখে চোখে রাখতে। তারই একজন সায়েমকে এভাবে একা দেখে ফোন দেয় জাফরকে। গাড়ী করে জাফর দ্রুত চলে আসে। সায়েম ততক্ষণে বাজারে পৌছে গেছে। জাফরের কথামত সায়েমকে তার লোকেরা চোখে রাখছে। সায়েম খুশি মনে নাইমার জন্য কিছু গিফ্ট আর ছেলের কিছু চকলেট কিনলো। বের হয়ে এসে একটা রিকশা ভাড়া করে, বাসার দিকে রওনা হলো। জাফর ফলো করছে সায়েমকে। একটা নির্জন জায়গায় চলে আসলো রিকশা। জাফর রিকশার সামনে গাড়ী থামালো। গাড়ী থেকে বের হলো জাফর। সায়েম যেমনি দেখলো জাফরকে, ওমনি তার হাত-পা কেঁপে ওঠলো। নিজের জান বাঁচানোর জন্য রিকশা থেকে লাফ দিয়ে দৌড় দিলো পেছনের দিকে। জাফরের গুন্ডাপান্ডারা সেদিকটাও ঘিরে রয়েছেন। আজ বাঁচার কোনো আশা নেই। জাফর কতটা খারাপ মানুষ, সায়েম সেটা ভালো করেই জানে। এতোদিন পর খোদা তারদিকেই একটু ফিরে তাকিয়েছিলেন, সেটাও ক্ষণিকের জন্য! অর্পিকে হারিয়ে কতদিন জিন্দা লাশ হয়ে বেঁচে ছিল সে। বিয়ে করে নিজের মুখে হাসি ফুটানোর চেষ্টা করছিল, অর্পি স্বপ্নে এসে সেটাও সাফল্যের পথে এনে দিল। নতুন বউকে পনেরো দিন অধিকার না দিয়ে অনেক কষ্ট দিয়েছে সে, আজ যখন বউকে সব অধিকার ফিরিয়ে দিবে তখনই আল্লাহ তাকে তুলে নিতে চাচ্ছেন দুনিয়া থেকে! উপহার দিতে চাইছিলো নতুন বউকে, নিজের লাশ কি তাহলে উপহারে পরিনত হলো। ছোট বেলায় মা হারা ছেলেটা আজ যখন বাবার লাশ দেখতে পাবে, কি করবে সে? নিজের বৃদ্ধ বাবা যখন একমাত্র সন্তানে লাশ দেখবেন, কি করবেন তখন? এসব ভাবতে চোখের পানি ফেলছিল সায়েম। হঠাৎ পেছনের দিক থেকে একটা গুলি এসে বুক বেদ করে চলে যায়। সায়েম মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। জাফর ও তার লোকেরা তাড়াতাড়ি চলে যায় ঐ স্থান থেকে। রিকশাওয়ালা কেটে পড়ে নিজে বিপদ থেকে বাঁচতে। সায়েমের বুক থেকে অনবরত রক্ত বের হয়ে সমস্ত রাস্তায় গড়িয়ে পড়ে। চারদিকে লোক জড়ো হয়ে আছেন। কেউ একজন পুলিশকে ফোন দিল। পুলিশ আসার পর সায়েমকে নিয়ে হাসপাতালে চলে যায়। কর্তব্যরত চিকিৎসকরা সায়েমকে মৃত ঘোষণা করেন। সায়েমের পকেটে পরিচিতি একটা কার্ড পাওয়া যায়। সায়েমের বাসার ঠিকানা কার্ডটিতে, সেই অনুযায়ী সায়েমকে নিয়ে যাচ্ছে পুলিশ।
বাসাতে গিয়ে সায়েমের আব্বাকে ডেকে আনা হলো। পুলিশরা সায়েমের হত্যার খবর তার বাবাকে বললেন।
ছেলের মৃত্যুর খবর শুনে "সায়েমরে" বলে চিৎকার মাটিতে পড়ে গেলেন। নাইমা রান্না করছিল। শ্বশুর আব্বার এমন চিৎকার শুনে ইফাতকে সাথে নিয়ে দৌড়ে বের হয়ে আসলো। সায়েমের লাশ দেখে অজ্ঞান হয়ে গেলো। নাইমাকে সবাই রুমে নিয়ে গেলেন। খালেক সাহেব ফ্লোরে বসে ছেলের মুখের দিকে তাকিয়ে চোখের পানি ফেলছেন। মুখ দিয়ে কোনো কথা বলতে পারছেন না। ইফাত এক আত্বীয়ের কোলে বসা। বাবার লাশ খুব ভয় পাচ্ছে সে। তার চোখের আড়াল করা হলো বাবার লাশ। নাইমার জ্ঞান ফিরছে, কিন্তু বোবার মত হয়ে বসে আছে। তার চোখে কোনো জল নেই। ইফাতকে কোলে নিয়ে বসে আছে সে। সায়েমকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে শেষ ঠিকানায়। নাইমা চেয়ে আছে ইফাতের দিকে, কেমন নিষ্পাপ একটা বাচ্চা, এত তাড়াতাড়ী এতিম হয়ে গেল। খোদার কি নির্মম পরিহাস, বোঝাই মুসকিল।
শুধুই দীর্ঘ একটা নিঃশ্বাস। সায়েমকে কবরে শায়িত করে চলে আসলেন সবাই। সমস্ত বাসায় কান্নার রোল। খালেক সাহেব এখনও জানেন না, তার ছেলেকে কে খুন করেছে। খোদার দরবারে নালিশ করে নিঃশ্ব হয়ে বসে আছেন। কেউ কি আছে তাকে সান্তনা দেয়ার?
কারোও কোনো ক্ষমতা নেই তাকে সান্তনা দেয়ার তাইতো চৌদ্দদিন শেষ হয়ে গেল, কান্না করেই।
আজ পনেরদিন হয়ে গেল সায়েমের মৃত্যুর। নাইমাকে তার মা-বাবা নিয়ে যেতে চাইলেন। খালেক সাহেব নাইমাকে কিভাবে আটকে রাখবেন? নাইমাকে তার মা বাবার হাতে তুলে দেন। নাইমার কোল থেকে ইফাতকে নিয়ে আসলেন। ইফাত এবার আর কাঁদছেনা। মায়ের দিকে করুণভাবে থাকালো। সে যেন বলতে চাচ্ছে, 'মাগো, বাবা আমাকে ছেড়ে চলে গেছেন, আমার প্রতি তোমারও কি কোনো মায়া নেই, আমাকে একা রেখে যাচ্ছো যে? আমি যে মরে যাবো মা'।
নাইমা ইফাতকে আবার কোলে তুলে নিলো। বাবাকে বলল, 'বাবা আমি কোথাও যাবো না। ইফাত ও আমার বৃদ্ধ বাবাকে ছেড়ে কোথাও যাচ্ছিনা আমি'
খালেক সাহেব নাইমাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলেন। নাইমার বাবা মা আর কিই বা করবেন? মেয়ের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে গ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা দিলেন। নাইমা বাবা আর ছেলে ইফাতকে নিয়ে সংগ্রামী জীবনের পথে পা বাড়ালো। সে নিজেও জানেনা, এই জীবনের শেষ কোথায়?
(খোদা হাফিজ)
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now
Rizu
User ৫ বছর, ১ মাস পুর্বেজানুয়ারি
Guest ৫ বছর, ৬ মাস পুর্বেSayemus Suhan
Golpobuzz ৬ বছর, ৩ মাস পুর্বেFahmida
Golpobuzz ৬ বছর, ৩ মাস পুর্বেSayemus Suhan
Golpobuzz ৬ বছর, ৩ মাস পুর্বেFahmida
Golpobuzz ৬ বছর, ৩ মাস পুর্বে