বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা
আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ
X
'ভাই আর একটু জোরে চালা তো।'- আমি
রিক্সাওলাকে তাড়া দেই। মফস্বল শহরে
রাত বারটার দিকে বাস আশা করা ঠিক না।
তার পরেও কেন জানি মনে হচ্ছে শেষ
বাসটা হয়ত একটুর জন্য মিস করব। তাই এই
তাড়াহুড়া। হয়তো শুনব একমিনিট আগে
ছেড়ে গিয়েছে শেষ বাস।
বাস স্টেশন অন্ধকার, মনে হচ্ছে
ইলেকট্রিসিটি নেই। মরার উপর খাড়ার ঘা
আরকি! আশেপাশে তাকিয়ে কোন
জনমানব চোখে পড়লনা। মনটাই খারাপ হয়ে
গেল। আজ সকাল থেকেই কুফা যাচ্ছে।
কাল সকালে ঢাকায় না পৌছুতে পারলে
বিরাট ক্ষতি হয়ে যাবে।
রিক্সাওয়াল কে বিদায় করে দাড়িযে
রইলাম। দেখা যাক, যদি কোন ট্রাকও পাই
তাও রওনা হয়ে যাব আল্লাহ ভরসা করে।
অষ্পষ্টভাবে শব্দগুলো কানে যেতেই কান
পেতে শোনার চেষ্টা করলাম। বাসের
গায়ে চাপড় দিয়ে ডাকাডাকির শব্দ বলে
মনে হল। আমি একটু সামনে এগুলাম। হ্যা,
ঠিকই। বাসের হেলপার সম্ভবতঃ বাসের
গায়ে জোড়ে চাপড়াচ্ছে আর
প্যাসেন্জার ডাকছে। প্রায় সব বাসগুলোই
এই কাজ করে। প্যাসেন্জার না পেলে
স্ট্যান্ড থেকে একটু দুরে দাড়িয়ে
ডাকাডাকি করতে থাকে। বেশী
প্যাসেনজারের আশায়।
আমি দ্রুত এগুতে থাকি। ’এই বাস এই।’ - আমি
দু একবার হাকও দিলাম। ’আমাকে নিয়ে
যাও। দাড়াও, আমাকে নিয়ে যাও।’
আশ্চর্য। যতই এগুতে থাকি মনে হয় বাস ঠিক
তত দুরেই রয়ে গেছে। ছেড়ে চলে গেল
নাকি? আমি হতাশ হয়ে দাড়াতেই আবারও
শুনলাম বাস চাপড়ানোর শব্দ।
আমি আবছা অন্ধকারে এবার দৌড়াতে
লাগলাম। ’এই দাড়াও এই দাড়াও।’
আমি এগুতে থাকি। আশ্চর্য। সেই একই
ঘটনা। বেটা ড্রাইভার কি আমাকে নিয়ে
ইদুর বেড়াল খোলা শুরু করল নাকি?
কতক্ষন দৌড়ালাম জানিনা। হঠাৎ বাসের
গায়ে হুমড়ি খেয়ে পড়ে গেলাম।
অন্ধকারে খেয়ালই করিনি।
বাসের ভিতরে কোন আলো নেই। দরজার
সামনে গিয়েও কাউকে পেলাম না। কি
ব্যাপার এই বাসটাই কি প্যাসেন্জার
খুজছিল? নাকি অন্যটা।
বাসের গেটে পা দিতেই হঠাৎ যেন প্রান
ফিরে পেল বাসটি। এক মুহুর্ত আগেও
যেটাকে মনে হচ্চিল জনশুন্য। আমি উঠার
পর হঠাৎ সে দৃশ্য পাল্টে গেল। আবার
হেলপারের সেই ডাক। বাসের ভেতরে
যাত্রীদের কথোপকথন। মাঝারি সাইজের
বাস। ভিতর ১৮ থেকে ২০ জনের মত লোক
হবে। সবাই যার যার মত বসে নিজেদের
মধ্যে আলাপ করছে। আমি উঠে পিছনের
দিকে গেলাম। একেবাওে শেষ সিটটা
একদম খালি দেখে ওখানে বসলাম।
দৌড়ে ঘেমে গেছি। একটু রেস্ট নিয়ে
নেই।
’এই যে ভদ্রলোক, এই’ - কেউ আমার জামা
ধরে টান দিল মনে হল! আমি জানালা
দিয়ে উকি দিলাম। অন্ধকারে ঠিকমত
দেখা যাচ্ছেনা। তবে বুঝলাম বাসের
হেলপার আমাকে জানালা দিয়ে
ডাকছে।
’কি হয়েছে’- আমি জিজ্ঞেস করি।
সামনে মানুষের ছায়া। সম্ভবতঃ হেলপার।
’আপনে এই বাসে উঠছেন ক্যান? আপনে এই
বাসে যাইতে চান কেন?’ - জিজ্ঞেস
করে ছায়ামুর্তি।
’কেন অসুবিধা কি? এটা কি রিজার্ভ বাস?
দেখ আমি খুব সমস্যায় পড়েছি। আমার খুব
যাওয়া দরকার’ - আমি সাফাই গাইতে
থাকি।
’আমরাই তিনদিন ধইরা যাইতে চেষ্টা
করতাছি তা পারতাছিনা। আর আপনে
আইজকা আইসাই যাইতে চাইতাছেন?’ - কে
যেন ভিতর থেকে বলে উঠল কথাগুলো।
সম্ভবতঃ বাসের ভিতর থেকে কোন
প্যাসেনঞ্জার।
’আপনি নামেন।’ - হেলপার আমাকে তাড়া
দেয়।
’দেখ আমাকে যেতেই হবে। দরকার হলে
দ্বিগুন ভাড়া দেব। আর বাস তো খালিই
পড়ে আছে। তোমাদের সমস্যা তো ঠিক
বুঝলাম না।’
’সমস্যা আমাদের না। আপনারই হইবো। ভাল
চান তো নামেন’ - হেলপার বলে উঠে।
আমি পাত্তা দিলাম না। মাঝে মাঝে
এরা এরকম ফালতু আচরন করে থাকে।
’আচ্ছা বাসটা এত দেরী করছে কেন?’
বাসের ভিতরেই প্রশ্নটা ছুড়ে দিলাম।
’আমাদের আর একজন বাকি আছে। ও এখনো
আইসা পৌছায় নাই।’ - আবারো ভেতর
থেকেই কেউ একজন বলে উঠল। - ’এই
বুইড়ারে নিতে গিয়াই বাসটা দেরী
কইরা ফালায়। সে জন্যই’- এপাশ থেকে
দীর্ঘশ্বাসের শব্দ শোনা যায়। - ’তারপরও
কেন যে বুইড়া দেরী কইরা আসে’
কি মুশকিল। প্যাসেন্জার বাস আবার
একজনের জন্য দাড়িয়ে থাকে নাকি?
আমি ভাবতে থাকি। আচ্ছা ডাকাত দল
নয়তো! কিছুদুর গিয়ে বাস ডাকাতি শুরু
করবে?
আমার কাছে তেমন টাকা পয়সা নেই।
আসলে বলতে গেলে কিছুই নেই। তাই ভয়
পাওযার কোন কারনই নেই। যা হবার হবে।
পেছনেই বসে থাকব বলে ঠিক করলাম।
বিপদ দেখলে জানালা দিয়ে পগার পার
হতে চেষ্টা করব।
’ঐ খাড়া। আমি আইয়া পড়ছি।’ - বাইরে
কারো চিৎকার শোনা যায়।
একজন বৃদ্ধ। এর জন্যই কি এতক্ষন দেরী করল
বাসটি? কারন বৃদ্ধ উঠতেই মূহুর্তে তুমুল
বেগে ছুটে চলল বাস। ধীরে ধীরে বৃদ্ধ
লোকটি বাসের পেছন দিকে চলে আসল।
আমার ঠিক সামনের সিটে বসার আগে এক
মুহুর্তের জন্য তার সাথে চোখাচোখি হল
আমার। তার চোখ দেখে ভয়ানক চমকে
গেলাম আমি। নির্জিব ঘোলা দুটি চোখ!
মুহুর্তেই গাড়ীর ভেতরে অন্ধকার নেমে
এল। খুব সম্ভবতঃ বাতি নিভিয়ে দিয়েছে
ড্রাইভার! কিন্তু ঐ চোখ দুটো অমন কেন? ও
কি অন্ধ?
আমি একটু তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে পড়লাম।
সারাদিনের ক্লন্তি ভর করল আমার উপর।
কতক্ষন কেটে গেল জানিনা। হঠাৎ
সম্পুর্নরুপে তন্দ্রার ঘোর কেটে গেল।
চারিদিক নিঝুম অন্ধকার, কোন সাড়া শব্দ
নেই। আমি যেন উড়ে চলেছি অন্ধকারে!
চারিদিকে কিছু চোখে পড়লনা। আমি
তো বাসের ভিতর থাকার কথা। বিষয়টা
কি? দ্রুত উঠে দাঁড়াতেই আবার বাসের
ভিতর আলো জলে উঠল। ঠিক আগের মত
করে প্রান ফিরে পেল যেন বাসটি! ধেৎ,
খুবসম্ভবতঃ ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখছিলাম।
আমি আবার ঘুমিয়ে পড়লাম। কতক্ষন
ঘুমিয়েছি বলতে পারবনা। হঠাৎ জোরে
হুইসেলের শব্দে কানে তালা লেগে
গেল। ট্রেনের হুইসেল না? চারপাশে
আবারো সেই অন্ধকার। চিৎকার
চেচামেচির শব্দ শোনা যাচ্ছে। ’আরো
জোরে যা, আরো জোরে’ ’আইজকা পার
হইতেই হইব’ ’জোরে চালা’ ’আমার আইজকা
যাইতেই হইব’ ইত্যাদি ইত্যাদি। হঠাৎ আমার
সামনেই মনে হল সেই বৃদ্ধের গলা শুনলাম।
- জোরে চালা বাবা, আইজকা পার কইরা
দে বাবা, আইজকা পার কইরা দে।’
কানের কাছের ট্রেনের একটানা হুইসেল
আরো বিকট হয়ে বাজছে। - ’অই ড্রাইভার,
জোওে চালা।’ - বুড়ো তাড়া দিচ্ছে
ড্রাইভারকে। আমি আন্দাজে জানালার
দিকে যাবার জন্য চেষ্টা করলাম।
সংঘর্ষের বিকট আওয়াজটা কানে যাবার
ঠিক আগমুহুর্তে বৃদ্ধের চিৎকার কানে
বাজল ’আইজকাও পারলিনা হারামজাদা।’
তারপর আর কিছু মনে নেই।
*************************************
’ভাই আপনে কেডা? বাসের ভিতরে কি
করেন?’ - অস্পস্ট কন্ঠের আওয়াজ কানে
যেতেই আমি ধরমরিয়ে উঠে বসলাম।
কোথায় আমি?
মুখের উপর কেউ ঝুকে ছিল। আমি উঠে
বসতেই সোজা হয়ে দাড়াল। ছেড়া
গেন্জী গায় লুঙ্গি পরিহিত মধ্যবষস্ক একজন
মানুষ।
চারিদিকে তাকাতেই অবাক হয়ে
গেলাম। একটা ভাঙা চোরা বাসের
ভিতরে আধশোয়া আমি। মুহুর্তেই মনে
পড়ে গেল সব। বাস এ্যাক্সিডেন্ট
করেছে। সৌভাগ্য আমার আমি বেঁচে
আছি।
নিজের হাত পা নাক মুখ সব এক নজরে
দেখে নিলাম। কপাল ভালো আমার
কোথাও কোন চোট লাগেনি। তবে
আশ্চর্য হলাম আমি ছাড়া আর কেউ ভিতরে
নেই দেখে। সবাই বের হয়ে গেছে?
আমি একাই পড়ে আছি?
লোকটির সাহায্য নিয়ে বাসের ভিতর
থেকে বের হযে এলাম। রেল লাইনের
ঠিক পাশে প্রায় দুখন্ড হয়ে রয়েছে
বাসটি। পেছনের খন্ডে ছিলাম আমি।
গতকাল রাতে এই বাসেই উঠেছিলাম
আমি। দুমরে মুচড়ে গেলেও চিনতে
পারলাম।
একটু সামনে রেল ক্রসিং দেখতে
পেলাম। ট্রেনটি বাসটিকে এতদুর পর্যন্ত
টেনে হিচড়ে নিয়ে এসেছে!
আশ্চর্যের ব্যাপার আশেপাশে কোথাও
কেউ নেই। এতবড় দুর্ঘটনা ঘটে গেল আর
কেউ এলনা এখানে? নাকি সবাইকে বের
করে নিয়ে গেছে? আমাকে কেউ
খেয়াল করেনি?
’আচ্ছা, বাসের অন্যান্য যাত্রীদের কি
অবস্থা? কেউ কি মারা গেছে?’ - আমি
জিজ্ঞেস করি লোকটিকে।
লোকটি সন্দেহজনক দৃষ্টিতে তাকাল।
আমার প্রশ্নের জবাব না দিয়ে উল্টো
জিজ্ঞেস করল - 'আপনে কে কনতো?
ভাঙ্গা বাসে ঢুকছিলেন ক্যান এত
সকালে?’
’তুমি কে আগে সেইটা বল? বাসের সব
যাত্রীরাই বা কোথায় গেল?’ - আমি
আসলে কিছুই মেলাতে পারছিনা।
’দেখেন মালিক সাব আমারে বাসের
পাহারাদার বসাইছে। কেউ যাতে কিছু
চুরি না কইরা নিয়া যায় সেইটা দেখার
জন্য। আপনেরে দেইখা তো ভদ্রলোকই
মনে হইতেছে। বাসে উঠছিলেন ক্যান
সেইটা কন’
এই ব্যাটার আচরন রহস্যময়। কিছু একটা গুব্লেট
হয়ে গেছে মনে হচ্ছে। - ’আরে বোকা
তুমি বুঝতে পারছনা গাড়িটা রাতে
এক্সিডেন্ট করেছে আর আমি ভাগ্যগুনে
বেঁচে গেছি।’ - আমি বোঝানোর চেষ্টা
করি লোকটিকে।
আবারো অদ্ভুত সন্দেহজনক দৃষ্টিতে
তাকাল লোকটা আমার দিকে। - ’দেখেন
উল্টাপাল্টা কথা কইয়েননা। তিনদিন ধইরা
গাড়ীর ভিতরে পইরা রইছেন আর কেউ
দেহে নাই কইবার চান?’
এনবার আমার অবাক হবার পালা। ’তিনদিন
মানে? আমিতো গতকাল রাতে বাসে
উঠেছিলাম।’ - আচ্ছা এই লোক
উল্টাপাল্টা কথা বলছে কেন। আমি
চারিদিকে আর কেউ আছে কিনা
দেখলাম।
’আফনে আহেন তো আমার সাথে।
মাস্টারের সাথে কথা কই।’ - লোকটি
আমার হাত টানতে লাগল।
’মাস্টারটা আবার কে?’ - আমি ঝটকা দিয়ে
হাত ছাড়িয়ে নিলাম। ব্যাটা একটা আস্ত
পাগল।
ঐ যে ’আঙ্গুল তুলে ক্রসিংএর পাশে
রেলএর ঘরটা দেখাল। চলেন লাইন
মাস্টারের লগে কথা কই।
গুড আইডিয়া। এই পাগলের সাথে কথা
বলার চেয়ে মাস্টারের সাথে কথা বলাই
উত্তম। আমিও রাজি হলাম।
’কিরে ব্যটা রমজাইন্যা ডাকস ক্যান’।' -
লোকটির ডাকে ভিতর থেকে রেলের
পোষাক পরা একজন - খুব সম্ভবতঃ ক্রসিংএর
ডিউটিরত গার্ড হবে - বের হয়ে এল।
’দেখেন এই লোক’ - আমার দিকে আঙ্গুল
তুলে দেখাল সে - ’আমাগো গাড়ির
পিছে শুইয়া আছিল সক্কাল বেলা। হেয় কয়
হেও এক্সিডিন হইছে।’
আশ্চর্য! সেও সন্দেহজনক দৃষ্টিতে তাকাল
আমার দিকে। - ’আপনেরে দেইখা তো
ভদ্রলোক মনে হয়। কি করেন আপনে?’
আমি বল্লাম। সব শেষে এও বল্লাম যে,
গতকাল রাতে ঐ বাসে ছিলাম আমি এবং
এক্সিডেন্ট এর কবলে পড়েছি।
ওরা দুজন মুখ চাওয়া চাওয়ি করল। - ’কথা
সইত্য।’ - লোকটি বলতে শুরু করল। -
’এক্সিডিন হইছে। গার্ডের ভুলের কারনে
খুব খারাপ এক্সিডিন হইছে। থানা পুলিশ
অনেককিছু হইয়া গেছে। কিন্তু
সেইডাতো গত পরশুদিন। ১১ তারিখ
রাইতে। আর আইজতো ১৩ তারিখ তাইনা?’
সত্যিই আজ তের তারিখ। গতকাল সন্ধায়
জরূরী ফোন আসে ঢাকা থেকে। রাতেই
যেতে হবে। গতকাল ১২ তারিখ উপজেলা
লেভেলে বড় একটা প্রোগ্রাম হয়েছে
আমাদের প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে। গত
এক মাস ধরেই এই ১২ তারিখ আমার মুখস্ত।
আমার নীরবতা দেখে লোকটি আবারো
বলতে শুরু করল - ’আর গতরাইতে এতবড়
এক্সিডেন্ট হইলে এইখানে মানুষ থাকতো
না? আর লাশগুলা গেল কই? এত তাড়াতাড়ি
উধাও হইয়া গেল?’
’এবার আমার অবাক হবার পালা। লাশগুলো
মানে? লোকজনও মরেছে নাকি?’
’এতবড় একটা এক্সিডিন। মানুষ মরবো না? এয়
কয়কি? এইখান থাইকা ছেঢ়ড়াইয়া বাসটা
দুইটুকরা কইরা ফালাইলো আর আপনে ’-
হতাশ শোনাল লোকটির গলা।
আসলে সত্যিই। বেশ বড় এক্সিডেন্টই
হয়েছে। রাতের ঘটনা একটুমনে করার
চেষ্টা করলাম। ট্রেনের দ্রুত হুইসেল, বাস
ট্রেন সংঘর্ষেও শব্দ, চিৎকার, কান্না -
তারপর আর কিছু মনে নেই। কিন্তু এতবড়
দুর্ঘটনায় আমার কিছুই হলনা? অবাক হয়ে
ভাবি আমি। কোথাও একটু ছড়েও যায়নি
আমার। আশ্চর্য!!
’হায় কপাল এ কিয়ের মইধ্যে পড়লাম সক্কাল
বেলা’ - দেখি রমজান নামের লোকটিও
অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
’খাড়ান খাড়ান, এক মিনিট। আপনেরে
একটা জিনিস দেখাই।’
লোকটি মুহুর্তেও মধ্যে ঘরে ঢুকে একটা
দৈনিক পত্রিকা নিয়ে এল। ’আইজ তো ১৩
তারিখ তাইনা? এইযে দেখেন ১১
তারিখের পেপার।’ - আমাকে পত্রিকার
তারিখটা ভাল করে দেখিয়ে নিল আগে।
দেখছেন তারিখ? এবার দেখেন। পুরো
পত্রিকা মেলে ধরল সে। হেডিং দেখে
তাজ্জব বনে গেলাম। মর্মান্তিক সড়ক
দুর্ঘটনায় ১৭ জন নিহত।
ঠিক নিচেই প্রকাশিত ছবিটা দেখে
শিউরে উঠলাম আমি। সারি সারি লাশের
ছবির; ইনসেটের ছবিটা চিনতে এতটুকু কষ্ট
হলনা। সেই বৃদ্ধের মুখ - যে শেষ মুহুর্তে
ড্রাইভারকে লক্ষ করে বলে উঠেছিল -
’আইজও পারলিনা হারামজাদা।’
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now