বাংলা গল্প পড়ার অন্যতম ওয়েবসাইট - গল্প পড়ুন এবং গল্প বলুন

বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা

আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ

এবার আমার পালা (পর্ব-১)

"ক্রাইম" বিভাগে গল্পটি দিয়েছেন গল্পের ঝুরিয়ান kamran hasan jamil (০ পয়েন্ট)

X ভুলটা আসলে আমারই। আরও ভেবে দেখার প্রয়োজন ছিল। অল্প বয়সে মা হারানো ছেলেটা সারাদিন মনমরা হয়ে বসে থাকে দেখে ভাবলাম কোন একটা কাজে তাকে ইনভল্ভড রাখতে পারলে খারাপ হয় না! অন্তত কিছুটা সময়ের জন্য হলেও মায়ের অভাববোধটুকু ভুলে থাকতে পারবে। নিষাদের মা অর্থাৎ আমার স্ত্রী নিলুফার মারা গেছে একটা দুর্ঘটনায়। অদ্ভুত সে দুর্ঘটনা! আমাদের বাড়ির ছাদটা বর্ষাকালে শেওলা জমে পিচ্ছিল হয়ে থাকে। ছাদের রেলিং এর একটা অংশ ভাঙা। কতবার নিলুফারকে বলেছি, ছাদে কাপড় শুকাতে দেয়ার সময় সাবধান থাকবে। কিন্তু সাবধান নিলুফার হয়নি, তারই প্রমান দিয়েছে ছাদ থেকে পড়ে গিয়ে। নিষাদকে অন্য কি কাজে ব্যস্ত রাখা যায় ভাবতে ভাবতে প্রথমেই মাথায় এল ফুটবল বা ক্রিকেট খেলার প্রশিক্ষন স্কুলে ভর্তি করিয়ে দেব। কিন্তু ছেলের খেলাধুলার প্রতি খুব বেশি আকর্ষণ নেই। আর মায়ের মৃত্যুর পর তো সেটা আরও কমেছে। ভেবে ভেবে ঠিক করলাম ছেলেকে মুভি দেখার প্রতি আগ্রহী করে তোলা যেতে পারে। কিন্তু সে কেমন মুভি দেখতে পছন্দ করবে? নিষাদের বয়স তখন ১২, বয়ঃসন্ধিকাল দোরগোড়ায়। এ বয়সী একটা ছেলের কি ধরনের মুভি দেখতে ভাল লাগবে? ঠিক করলাম বেশি বেশি এনিমেটেড মুভি দেখাব তাকে। কিন্তু অফিস কলিগ সানাউল্লাহ ভাই বললেন, “আপনার ছেলেকে হরর মুভি দেখান হাসান ভাই। এ বয়সী বাচ্চাদের ভূত প্রেত টাইপের মুভি দেখতে বেশি লাগে” সানাউলাহ ভাই আমাকে একটা হিন্দি হরর মুভির নাম সাজেস্ট করে দিলেন। মুভির নামঃ ছায়া। হিট করা মুভি। আমি জিজ্ঞেস করলাম, “ভাই ছেলে মুভিটা পছন্দ করবে তো? প্রথম মুভিই যদি ভাল না লাগে তাহলে হয়ত আর দেখতে নাও চাইতে পারে”। সানা ভাই বললেন বললেন, “সেইটা মাথায় রেখেই তো বলতেছি। দেখান নিয়ে গিয়ে। দেখবেন, ছেলে আপনার হরর মুভির ভক্ত হয়ে যাবে”। আমার বাড়ির কাছেই একটা ডিভিডি স্টোর আছে। অফিস থেকে ফেরার পথে একটু ঢু মারলাম। দোকানের নামটাও ভারী অদ্ভুত। স্ক্র্যাচ ভিডিও সেন্টার। আমরা সাধারণত ডিভিডি বা সিডি ক্যাসেটে দাগ পড়ে গেলে বলি স্ক্র্যাচ পড়েছে। কিন্তু ডিভিডির দোকানের নাম স্ক্র্যাচ হবে কেন? এই দোকানের সব সিডি নিশ্চয়ই স্ক্যাচ পড়া নয়! নামের ব্যাক গ্রাউন্ড স্টোরিটা জানা দরকার, একদিন দোকানের মালিকের সাথে কথা বলতে হবে। আমি ছবির নাম বলার পর এক কর্মচারী মুভিটা খুজে দিল। অবশ্য খুজে পেতে একটু সময় লাগল। ২০০৩ সালের মুভি, মোটামুটি পুরনো বলা যায়। ইয়াং জেনারেশন নতুনের পূজারী, পুরাতন নিয়ে মেতে থাকার সময় কই ওদের? ডিভিডি নিয়ে বাড়ি ফিরলাম। নিষাদের রুমে উকি দিয়ে দেখি নিষাদ গালে হাত দিয়ে তার পড়ার টেবিলে বসে আছে। সামনে বই খোলা। তবে যে কেউ দেখেই বলতে পারবে তার মানসিক অবস্থান এখন অন্য জগতে, বইয়ের ভেতর নয়। আমি ডাকলাম, "নিষাদ"। নিষাদ জবাব দিলনা। আমার দিকে তাকাল না। তবে এর মানে এই নয় যে সে আমার ডাক শুনতে পায়নি। আমার ধারনা দুই তিন বার ডাকার আগে সে ইচ্ছে করেই জবাব দেয়না। আরেক বার ডাকলাম, "নিষাদ"! এবার উত্তর দিলনা, কিন্তু আমার দিকে ঘুরে তাকাল। আমি মুখে হাসি ধরে রেখে বললাম, "তোমার জন্য আমি একটা হরর মুভি এনেছি নিষাদ' আজ থেকে আমরা একসাথে বসে মুভি দেখব। নিষাদ নির্বিকার। সে হালকা করে মাথা ঝাঁকিয়ে আবার বইয়ের দিকে নজর দিল। রাতে খাওয়ার পর দুজনে বসে গেলাম ড্রয়িং রুমে ডিভিডি প্লেয়ার এর সামনে। মুভির শুরুর ১০ মিনিট না যেতেই নায়ক জন আব্রাহাম আর নায়িকা তারা শর্মার উদ্দাম নৃত্য শুরু হয়ে গেল। বাবা-ছেলে একসাথে বসে দেখার মোটেও উপযোগী নয়। সানাউল্লাহ ভাইয়ের কি কাণ্ডজ্ঞান নেই? তিনি এই মুভি দেখতে রিকমেন্ড করলেন কী করে? অবশ্য আরও মিনিট দশেক পর মুভির ক্লাইমেক্স শুরু হতেই মজা পাওয়া শুরু করলাম। একটা গ্রামে মানুষ কোন একটা রোগে মানুষ মারা যাচ্ছে। তাদের সাহায্য করার কেউ নেই। নায়িকা তারা অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় স্বামীর নিষেধ সত্ত্বেও গেল সেখানে। এবং দুদিন বাদের নায়ক খবর পেল নায়িকা দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছে। এইবার আমি কিছুটা আঁচ করতে পারলাম কেন সানাভাই আমাকে বলেছেন এই মুভিটা দেখতে বলেছেন! এর পরের ঘটনা গুলো রীতিমত গায়ের লোম দাঁড় করিয়ে দেয়ার মত। নায়িকা তারা শর্মা এখন তার স্বামীর সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করছে। নায়ক জন আব্রাহাম একজন ডাক্তার। নায়িকা হাসপাতালের মৃতপ্রায় রোগীদের শরীরে প্রবেশ করে তার সাথে কথা বলার চেষ্টা করছে। মুভিটা খুব একটা ভাল লাগেনি আমার কাছে, নিষাদের কাছেও লাগেনি। কিন্তু দেখলাম নিষাদ হরর বিষয়টা বেশ ফিল করতে শুরু করেছে। পরদিন যখন আমি "নায়না' নামে আর একটা হরর মুভি নিয়ে হাজির হলাম দেখলাম নিষাদের চেহারা অনুভূতিহীন হলেও চোখদুটো চক চক করে উঠেছে। বুঝলাম কাজ হয়েছে! এভাবে ভূত, ১৯২০, ডরনা মানা হ্যায় সহ বেশ কিছু হরর হিন্দি মুভি দেখা হয়ে গেল। এবার শুরু করলাম ইংলিশ মুভি দেখা। একসময় ঝুকে পড়লাম ফ্রেঞ্চ মুভির প্রতি। ক্রমে ক্রমে ব্যাপারটা দুজনের জন্যই নেশায় পরিনত হল। কোনদিন একটা হরর মুভি দেখা না হলে দুজনেরই আর ঘুম আসে না। কিন্তু আমি কখনো ভাবিনি এই হরর মুভি দেখার অভ্যাসটা আমার জন্য মানসিক বিপর্যয়ের বীজ হয়ে দাঁড়াবে। *** ৩ বছর পর একদিন... গুরুত্বপূর্ণ একটা মিটিং ছিল অফিসে, ফিরতে সন্ধ্যা হয়ে গেছে। নিজে ড্রাইভ করে বাড়ি ফিরছি আজ। ড্রাইভারটা ছুটি নিয়েছে কিছুদিনের জন্য। ভাবছি ব্যাটাকে ছাঁটাই করে দেব। দুদিন পর পর এই সমস্যা- সেই সমস্যার কথা বলে ছুটি নেয়। বসিয়ে বসিয়ে বেতন দেয়ার কোন অর্থ হয় না। আজ আমি আর নিষাদ "হাই টেনশন' নামের একটা ফ্রেঞ্চ মুভি দেখব। এটাও যথারীতি কলিগ সানাউল্লাহ ভাইয়ের সাজেশন। মুভিতে কিছু যায়গায় অতিরিক্ত ভায়োলেন্স আছে। নিষাদের ভাল না লাগলে টেনে দিতে বলেছেন উনি। আমি মনে মনে হাসলাম। নিষাদের ভায়োলেন্স দেখার ক্ষমতা সম্পর্কে সানাউল্লাহ ভাইয়ের কোন ধারনাই নেই। জম্বি মুভিগুলোতে হাড় মাংস ছিঁড়ে ছিঁড়ে খাওয়ার দৃশ্য দেখে আমি যখন ভয়ে শিউরে উঠি, তখন দেখি নিষাদ আশ্চর্য এক কৌতূহল নিয়ে টিভির স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকে। স্ক্র্যাচ ভিডিও সেন্টার এর সামনে গাড়ি থামিয়ে হাই টেনশনের একটা ডিভিডি কিনে নিলাম। ভিডিও সেন্টারের ঠিক পাশ দিয়েই একটা সরু রাস্তা আছে। ডিভিডি হাতে এসে গাড়িতে উঠতে যাব তখন রাস্তার দিকে নজর গেল। একটা মেয়েকে দেখছি সরু রাস্তাটা ধরে হেঁটে যাচ্ছে। পরনে সাদা সালোয়ার-কামিজ। কে ওটা? মমতা না? মমতা আমার বাড়ির সামনের বাড়িতে থাকে। সম্ভবত অনার্স পড়ছে মেয়েটা, নিলুফারের সাথে ভাল সম্পর্ক ছিল। নিলুফারের ছাঁদ থেকে পরে যাওয়ার দৃশ্যটা সে দেখে ফেলেছিল। সেই থেকে একটা মানসিক বিকারগ্রস্ত অবস্থার ভেতর দিয়ে যাচ্ছে সে। অ্যাবনরমাল আচার আচরন করছে। কিন্তু মেয়েটি ওদিকে কোথায় যাচ্ছে? এদিকটাতে মানুষজন যায় কম। পরিত্যক্ত নিচু এলাকা, বর্ষা এলেই পানি ওঠে, তেমন কোন বসতিও নেই। একটা বড় জলাশয় আর পুরনো একটা কবরস্থান আছে। আজেবাজে নেশাখোর ছেলেপিলে সব আড্ডা দেয়। মমতাকে পেলে ওরা ছিঁড়ে কুটি কুটি করে খাবে। আমি পা বাড়ালাম। মেয়েটিকে থামান দরকার! মমতা হাটার গতি বাড়িয়ে দিল। আমি দু তিন বার নাম ধরে ডাকলাম। সে ফিরে তাকাচ্ছে না। সামনেই একটা ডোবা, মেয়েটি ঝাঁপিয়ে পরে আত্মহত্যা করতে যাচ্ছে না তো? আমি আরও দ্রুত পা চালালাম। মমতা হঠাৎ দৌড় লাগাল। আমি বুঝতে পারছিনা কী করা উচিত। রাত হয়ে যাচ্ছে, এদিকে মানুষের চলাচল একেবারেই কম। মনে হচ্ছে আজ নেশাখোর ছেলেগুলোও আড্ডা দিচ্ছেনা। মেয়েটিকে এভাবে এখানে ফেলে চলে যাওয়াটা কি ঠিক হবে? মমতার আকর্ষণীয় ফিগার ভেসে উঠল আমার চোখের সামনে। চকিতে একটা সম্ভাবনা খেলে গেল মাথায়। বিরান এলাকা, কাছে ধারে কেউ নেই। মেয়েটি মানসিক ভারসাম্যহীন, কিছু একটা ঘটে গেলে কাউকে বুঝিয়ে বলতে পারবেনা। আমার মধ্যে একটা অদ্ভুত শক্তি আবিস্কার করলাম, পশুর শক্তি। প্রতিটি পুরুষের মাঝে একটা পশুর বাস, আমার ভেতরের পশুটা জেগে উঠেছে। আমিও দৌড় লাগালাম মমতার পেছন পেছন। মেঘের আড়ালে চাঁদ হারিয়ে যাবার সঙ্গে সঙ্গে জোনাকীরা সব এক সাথে জ্বলে উঠে পৃথিবীকে আলোকিত করার বৃথা প্রয়াস চালাচ্ছে । দূর থেকে ভেসে আসা নৈঃশব্দ্য রজনীর নিঃসঙ্গতার করুণ বিলাপ মনে ভয় ধরিয়ে দিতে যথেষ্ট। তবুও মমতার পেছনে পেছনে আমি এমন ভাবে দৌড়াচ্ছি, যেন আবেগহীন, অনুভূতিহীন পাথরের এক মূর্তি। কোথায় যাচ্ছি, কেন যাচ্ছি? কেন মমতা একবারও পেছন ফিরে তাকাচ্ছে না? ইত্যাদি কোনো প্রশ্নই আমার মনে জাগছে না! দৌড়ে চলেছি দ্বিধাহীন চিত্তে অজানার উদ্দেশ্যে। আমাকে এক নেশায় পেয়ে বসেছে, অন্যরকম নেশা। মমতা হঠাৎ দাঁড়াল। তার ঠিক দুই কদম পেছনে আমিও থমকে দাড়ালাম। ভাসমান কালো মেঘের ফাঁক গলে একটু আধটু জ্যোৎস্না গলে পড়ছিল। সেই আলোয় দেখলাম আমরা পুরনো কবর স্থানে এসে পরেছি। কবরস্থানের পাশেই একটা ছোট বাঁশঝাড়। বাঁশগাছগুলোর ছায়া গাঢ় থেকে গাঢ় হয়ে উঠছে। অনেকদিন পর দৌড়েছি, হাঁপাচ্ছি কুকুরের মত। মেঘ ফুঁড়ে হঠাৎ চাঁদটা বেরিয়ে এল। পাতলা কামিজ পড়েছে মমতা, বুকের ওড়নাটা দৌড়ানোর সময় গায়েব হয়েছে। চাঁদের আলোয় মেয়েটির অপরুপ দেহসৌষ্ঠব সুস্পষ্ট হয়ে ধরা দিচ্ছে। আমার শরীর শিহরিত হল । মনে হচ্ছে অপার্থিব কোন এক অনুভূতি শক্তি জমা হচ্ছে আমার মাঝে! ভেতরে ভেতরে ক্ষীণ কম্পন শুরু হয়েছে। হঠাৎ মমতা আমার দিকে ঘুরে দাঁড়াল। ঠোঁট টিপে হাসছে। ওকি আহবানের হাসি? আমি আর নিজেকে সামলে রাখতে পারলাম না। ঝাঁপিয়ে পরলাম ওর উপর। মমতাকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে পড়লাম মাটিতে পিঠ ঠেকিয়ে। পিঠের নিচে আলগা মাটির মত লাগছে। সেদিকে তখন খেয়াল করার মত ধৈর্য আমার নেই। দুহাত চলে গেছে প্রয়োজনের খোঁজে, নাকে মুখে গোগ্রাসে গ্রহন করছি নারীমাংসের স্বাদ। মাতালের খেলায় মত্ত আমি। মমতা বাধা দিচ্ছেনা মোটেও। বিকারগ্রস্ত একটা মেয়ে জানেনা এই খেলার পরিনাম। হঠাৎ পিঠের কাছে নরম কিছু একটার স্পর্শ পেয়ে থমকে গেলাম আমি। মনে হচ্ছে মানুষের হাত, কি ভীষণ ঠাণ্ডা! পিঠের নিচে কি কবর ফুঁড়ে একটা হাত বেরিয়ে এসেছে নাকি! ভয়ের একটা অনুভূতি নামল আমার শিরদাঁড়া বেয়ে। আমি মমতাকে ছেড়ে উঠে বসলাম। কোথায় হাত? আমার মনের ভুল হবে হয়ত। অবশ্য কাছাকাছি একটা নতুন ঝকঝকে একটি কবর দেখতে পারছি! একেবারেই নতুন কবর! মনে হচ্ছে কয়েক দিন আগেই কাউকে দাফন করা হয়েছে আমি যতদূর জানি এদিকটাতে এখন আর কাউকে কবর দেওয়া হয়না। তাহলে এটা কার কবর? আরও সামনে তাকাতেই দেখলাম ছোট একটা গর্ত। কবরে কেউ গর্ত করে রেখেছে! গর্তের কাছে গিয়ে উকি দিতেই দেখলাম দুটো কুকুর কিছু একটা নিয়ে কাড়াকাড়ি করছে । মানুষের পা-এর মতো লাগছে! সেই পা থেকে মাংস ছিড়ে মজা করে চিবোচ্ছে লাশ খেকো কুকুরদুটো। এমন সময় প্রচণ্ড জোরে বিদ্যুৎ চমকে উঠল–সেই আলোয় দেখলাম কবরের অন্ধকারে এক সুন্দরী নারী শায়িত, তার গালদুটি সুডৌল, ঠোঁটদুটি লাল! নিলুফার! তাকিয়ে আছে আমার দিকেই! তার চোখ দুটোতে কষ্ট! আচমকা মৃত নিলুফার যন্ত্রণায় চিৎকার করে উঠল! আমি আতংকে শিউড়ে উঠে দু পা পিছিয়ে এলাম! হঠাৎ বাতাস ছাড়াই কবরের পাশের বাশের ঝোপটি এলোমেলোভাবে দুলতে শুরু করল! ভয়ে আমার শরীর ঘামতে শুরু করেছে । ভেতরে ভেতরে প্রচন্ড অস্বস্তি! মমতার দিকে ফিরে তাকালাম। কী আশ্চার্য! মমতা কোথাও নেই! সে যেখানে দাড়িয়ে ছিল ঠিক সেখানে একটি কুৎসিত দর্শন কুকুর দাড়িয়ে আছে । আদমখোর সেই কুকুর বড় বড় চোখে অপলক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে ! কুকুরটাকে আগে কখনো না দেখলেও তার ভয়ংকর চোখ দুটো আমার কাছে পরিচিত মনে হচ্ছে । ভয়ে আমার সর্বাঙ্গ কাঁপছে । আমি ঝেড়ে দৌড় দিলাম । কুকুরটিও আমার পেছনে পেছনে দৌড়াচ্ছে ! আমি সর্ব শক্তি দিয়ে দৌড়াচ্ছি অথচ কেন যেন মনে হচ্ছে একচুলও এগুতে পারছি না। হঠাৎ আমার কাঁধে কেউ একজন হাত রাখল! চমকে দেখি আমার পাশে নিষাদ দৌড়াচ্ছে! নিষাদ এখানে এল কেমন করে? “আমাকে বাঁচাও নিষাদ” আমি অনুনয় করলাম ছেলের কাছে। নিষাদ কিছু বলছে না। ভালভাবে খেয়াল করতেই দেখলাম আসলে এটা নিষাদ নয়! নিষাদের শরীর কিন্তু মুখটা দেখতে কুকুরের মত। নিষাদরুপী একটা কুকুর আমার পিছু নিয়েছে! কুকুরটা আমার কাধ ধরে ঝাঁকাল, “কি হয়েছে ড্যাড!” আমি প্রানপনে নিজেকে ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করলাম। নিষাদ আবার জিজ্ঞেস করল, “ড্যাড, কি হয়েছে? এমন করছ কেন?” আমার ঘোর কেটে গেল। নিজেকে আবিস্কার করলাম ড্রয়িংরুমে, টিভি স্ক্রিনের সামনে। সিনেমা চলছে "হাই টেনশন', একটা খুব ভায়লেন্সের দৃশ্য দেখাচ্ছে! একটা ঢোঁক গিলে বললাম, “কি হয়েছিল আমার?” “তুমি সিনেমা দেখতে দেখতে হঠাৎ অস্বাভাবিক আচরন শুরু করেছিলে! উল্টা পাল্টা বকছিলে!” নিষাদ বলল। আমি উঠে দাঁড়ালাম। পায়ে পায়ে হেঁটে নিজের রুমে চলে আসলাম। শরীরটা ইদানীং খারাপ যাচ্ছে। ডাক্তার দেখানো দরকার। আর হরর মুভি দেখাও বন্ধ করতে হবে। মনের উপর খুব বেশি চাপ ফেলছে! বেডে শুয়ে খেয়াল করলাম নিষাদ এসে মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছে। ভঙ্গীটা আমার খুব পরিচিত। এটা মায়ের কাছ থেকে পেয়েছে সে। এর মানে হচ্ছে নিষাদ কিছু একটা বলতে চায়, অনুমতি দরকার! অনুমতি দিলাম, “কি বলবে বল, নিষাদ!” “আমি একটা কবিতা লিখেছি ড্যাড। ইংলিশ পোয়েম”। আমি হাসলাম। আমিও স্টুডেন্ট লাইফে ভাল ইংরেজি কবিতা লিখতাম। এই প্রতিভা নিষাদ জেনেটিকেলি পেয়েছে। বললাম, “তুমি পড়ে শোনাবে নাকি আমি পড়ব?” “আমিই পড়ে শুনাই?” “শুনাও!” নিষাদ শুরু করল... My Mother seems so far away from me, On that beautiful white shore across the sea. Yet I remember love’s soft glow upon her face, And the feel of her touch and tender embrace. When I am weary from the burdens I’ve borne, And the path is unclear and I feel so forlorn, I remember her loving support was always near, And her advice made the path ahead seem clear. When I feel there is no one who seems to care, Or when the heartache seems too hard to bear, I remember how she always stood by my side, And would tenderly wipe away the tears I cried. When there are moments of great joy and pride, And I wish my Mother was standing at my side, I remember she saw more than I thought I could be, And know I owe my triumphs to her belief in me. When I reminisce about the things she used to say, And I miss her and think she is so far away, I remember what she gave lives on through me, And one day I’ll see her on the shore across the sea. কবিতা শেষ করে নিষাদ আর দাঁড়াল না। ঘুরে চলে যেতে উদ্যত হল।


এডিট ডিলিট প্রিন্ট করুন  অভিযোগ করুন     

গল্পটি পড়েছেন ৬২৫ জন


এ জাতীয় গল্প

গল্পটির রেটিং দিনঃ-

গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন

  • গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now