বাংলা গল্প পড়ার অন্যতম ওয়েবসাইট - গল্প পড়ুন এবং গল্প বলুন

বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা

আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ

শ্মশান

"ভৌতিক গল্প " বিভাগে গল্পটি দিয়েছেন গল্পের ঝুরিয়ান মোঃ ছহিনুর রহমান বিন মনির (০ পয়েন্ট)

X +++++++++++ শরীফের আজ খুব খুশি খুশি লাগছে। আজ কলেজের শীতকালীন ছুটি শুরু হলো। সে ফরিদপুর রাজেন্দ্র কলেজের ছাত্র। গ্রাম থেকে শহরে এসেছে। শহরে মেসে থেকে পড়ালেখা করে। মনে মনে অপেক্ষা করে কখন কলেজ ছুটি হবে। কলেজ ছুটি হলে সে গ্রামে চলে আসে এবার ১৫ দিনের জন্য কলেজ ছুটি হয়েছে। সে বেশ কিছুদিন গ্রামে থাকতে পারবে। সে ভাবলো আজই রওনা হয়ে যাবে। শরীফের গ্রামের বাড়ি এখান থেকে বেশি দূরে নয়। রওনা হলে ঘণ্টা দেড়েকের মধ্যেই পৌছে যাওয়া যায়। শরীফ বিকালের দিকে রওনা হয়ে গেলো। ভেবেছিলো বেশি সময় লাগবে না, কিন্তু যাত্রাপথে হঠাৎ বাস নষ্ট হলো। সেখানে প্রায় ১ ঘণ্টা নষ্ট। এরপর আবার যেখানে সেখানে যাত্রী তোলা। সবমিলিয়ে গ্রামে পৌছাতেই ওর ৩ ঘণ্টার মত লেগে গেলো। গ্রাম থেকে তার বাড়ি আরো ভেতরের দিকে। এখান থেকে হেটে যেতে ৪৫ মিনিটের মত লাগে। এখন রাত সাড়ে ৮ টা বাজে। এমনিতেই গ্রামের মানুষেরা আগেভাগেই শুয়ে পড়ে। তার ওপর এখন শীতের দিন। রাত ৯টার মধ্যে সবাই খেয়েদেয়ে শুয়ে পড়ে। শরীফ ভাবলো একটা কাজ কিন্তু করা যায়। একটা সংক্ষিপ্ত পথ আছে। ওটা ব্যবহার করলে বড়জোর ২০ মিনিট, এর বেশি সময় লাগবে না। কিন্তু সমস্যা আছে একটা। ওই পথে বাড়ি ফিরতে গেলে একটা শ্মশান পেরিয়ে যেতে হয়। শ্মশানটি নিয়ে অনেক কথা প্রচলিত। শরীফ ওর দাদুর কাছে শুনেছে ওর দাদুর এক বন্ধু নাকি একবার এই শ্মশান পেরিয়ে কোথায় যাচ্ছিলেন। হঠাৎ কী যে দেখলেন, তিনি ভয়ে অস্থির হয়ে দৌড়াতে থাকলেন। এরপর বাড়ি ফিরে তিনি অজ্ঞান হয়ে গেলেন শরীফ সাহসী ছেলে। সে ভূত-প্রেতে মোটেই আস্থাশীল না। সে মনে করে দাদুর বন্ধু হয়ত এই জায়গাটি নিয়ে অনেক ভীত ছিলেন। তার অবচেতন মন হয়ত তাকে কিছু দেখিয়েছিলো যার কোনো বাস্তব অস্তিত্ব নেই। এমন ও হতে পারে আতংক থেকেই তার অজ্ঞান হয়ে যাওয়া। শরীফ হাটতে শুরু করলো। আশপাশে তেমন কোনো বাড়িঘর নেই। সব শুনশান। প্রকাণ্ড একটা অশত্থ গাছ মাথা উচু করে দাঁড়িয়ে আছে। বেশ বাতাস বইছে। কনকনে ঠাণ্ডা বাতাস। শরীফের বেশ শীত করছে। হঠাৎ দেখলো কি যেন একটা তার দিকে আসছে। হলুদ চোখ দুটি উজ্জল। কালো বিড়ালটি শরীফের পা ঘেসে বিপরীত দিকে ছুটে গেলো। যাবার সময় তীব্র দৃষ্টি হেনে ওর দিকে তাকালো। শরীফ একটু চমকে উঠলো। বিড়ালটির ওই দৃষ্টিতে ভয়ংকর কিছু আছে, খুব ভয়ংকর কিছু। শরীফের এখন ভয় ভয় করছে। ও বার বার চেষ্টা করছে ভয়টাকে মন থেকে মুছে ফেলার। কিন্তু পারছে না। ও হঠাৎ খেয়াল করলো ও শ্মশানে পৌছে গেছে। শ্মশানে পৌছে ওর ভয়টা যেন আরো বেড়ে গেলো। কীসের যেন শব্দ শোনা যাচ্ছে, গুনগুন করে কান্নার মত শব্দ। "ধুর, এখানে আবার কাঁদবে কে? কোনো লোকই তো নেই।" শরীফ আপনমনে বললো। ও সামনের দিকে হেটে যাচ্ছে। তার মনে হলো কান্নার শব্দ যেন জোরালো হচ্ছে। হঠাৎ ডানদিকে তাকাতেই ওর চোখ ছানাবড়া হয়ে গেলো। একটা মেয়ে কাঁদছে। মুখটা দেখা যাচ্ছে না। ঘোমটা দেয়া। হঠাৎ মেয়েটি তার মাথার ঘোমটা ফেলে দিলো। তীব্র দৃষ্টি হেনে তাকালো শরীফের দিকে। মেয়েটির বয়স কত হবে? আঠারোর মত বোধ হয়। শরীফের মনে হলো বাতাসের বেগ যেন বেড়ে যাচ্ছে। দুরন্ত বাতাসে মেয়েটির চুলগুলো উড়তে শুরু করেছে। শরীফের মনে হলো মেয়েটি তার দিকেই এগিয়ে আসছে। শরীফ তখনি ঘুরে দাঁড়ালো। ঝেড়ে দৌড় দিলো বাড়ির দিকে। শরীফ দৌড়াচ্ছে। নিজের সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে দৌড়াচ্ছে।পেছনে ফিরেও তাকাচ্ছে না। মেয়েটির মুখোমুখি হবার ইচ্ছা তার নেই। শরীফ তার বাড়ির প্রায় কাছে এসে পড়েছে। ওই তো, বাড়ির পাশের নিমগাছ টি দেখা যাচ্ছে। শরীফ "মা" বলে একটা চিৎকার দিয়েই অজ্ঞান হয়ে গেলো। শরীফ এখন খানিকটা সুস্থ বোধ করছে। ওর দাদু ওর কাছে সব শুনলেন। "শোন, দাদুভাই। ওই শ্মশানের একটা গল্প আছে।" "গল্প?" শরীফকে কৌতূহলী মনে হলো। "হ্যা, গল্প। অনেকদিন আগে, সে প্রায় দুইশো বছর হবে, এই গ্রামেরই এক মেয়ের বিয়ে হলো পাশের গ্রামে এক বুড়োর সাথে। এই আমার মত বুড়ো, বুঝলি। আজ আছে, কাল নেই অবস্থা। মেয়েটির নাম ছিলো আশালতা। ওর বিয়ের মাসখানেক পরেই বুড়ো মারা গেলো। বুড়ো কে চিতায় তোলা হলো, কিন্তু সে তো পরপারে একা যাবে না।" " তাহলে?" শরীফ ঠিক বুঝতে পারছেনা। "আর কী, পতিদেবতার সাথে আশালতাকেও চিতায় যেতে হলো।" " মানে সতীদাহ?" " হ্যা, এইতো বুঝেছিস। আশালতাকে ইচ্ছার বিরুদ্ধে সহমরণ বরণ করতে হয়েছিলো। সেই থেকে প্রতি রাতে, বিশেষ করে সন্ধ্যার পর থেকেই তাকে এই শ্মশানে কাঁদতে দেখা যায়।" "এই শ্মশান পার হতে গিয়ে কেউ মারা যায়নি?" শরীফ প্রশ্ন করলো। " হ্যা, গিয়েছে কেউ কেউ। তবে বেশিরভাগই ছুটতে ছুটতে পালিয়ে আসে। অনেকেই সহ্য করতে না পেরে অজ্ঞান হয়ে যায়।" দাদু উঠলেন। খাবার সময় হয়ে গেছে। শরীফও পিছু পিছু গেলো। শরীফের ভাবতে ভালো লাগছে সে বেচে আছে। তবে আর ওই পথে নয়। এবার থেকে বাড়ি এলে মেইন রোড দিয়ে আসাই ভালো। আশালতার সাথে তার আর দেখা করার ইচ্ছে নেই।


এডিট ডিলিট প্রিন্ট করুন  অভিযোগ করুন     

গল্পটি পড়েছেন ৪২৫ জন


এ জাতীয় গল্প

→ জমিদার বাড়ির শ্মশানে ভূত (শেষ পর্ব)
→ জমিদার বাড়ির শ্মশানে ভূত (পর্বঃ০১)
→ শ্মশানের অতৃপ্ত আত্না
→ শ্মশান কালী
→ শ্মশানের পাশে

গল্পটির রেটিং দিনঃ-

গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন