বাংলা গল্প পড়ার অন্যতম ওয়েবসাইট - গল্প পড়ুন এবং গল্প বলুন

বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা

আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ

"দ্যা সার্পেন্ট গর্ডেস"-----চ্যাপ্টার ২

"ভৌতিক গল্প " বিভাগে গল্পটি দিয়েছেন গল্পের ঝুরিয়ান রিয়েন সরকার (০ পয়েন্ট)

X "দ্যা সার্পেন্ট গর্ডেস" আশরাফুল সুমন -------------------- চ্যাপ্টার ২: এ ফ্যাটাল ডিসিশন সকালে ঘুম ভাঙ্গতে উইলিয়ামের অনেক সময় লাগল। সূর্যের আলো সরাসরি চোখে এসে পড়েছে। চোখ মুছে ফ্রেশ হয়ে নেয়ার জন্যে বাথরুমে ঢুকল সে। চোখে-মুখে পানি দিয়ে নিল ভালোভাবে। মাথা ব্যথাটা আর নেই। অদ্ভুত রকম সতেজ লাগছে শরীরটা। আচ্ছা এমন যদি হয়, যে আগের রাতের সব কিছুই ছিল দুঃস্বপ্ন? তাহলে কেমন হয়? হাত মুখ ধুয়ে সকালের নাস্তা খেতে বসলো উইলিয়াম। নাস্তা প্রায় শেষ, এমন সময় হঠাত মোবাইলটা বেজে উঠল। ইথেন ফোন দিয়েছে। ‘কিরে? এত সকালে কি মনে করে?’ একটু অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল উইলিয়াম। ‘তুই একটু হাসপাতালে আসতে পারবি? ইমারজেন্সি,’ ইথেনের গলাই বলে দিচ্ছে ও খুব ভয় পেয়েছে। ‘কেন?? কি হয়েছে তোর, বল? কোন ক্ষতি হয়েছে তোর?’ অজানা আশঙ্কায় কেঁপে উঠল উইলিয়ামের বুক। ‘আরে আমার কিছু হয় নাই, আমি ভালোই আছি দোস্ত, কিন্তু এইডেন এর অবস্থা খুবই খারাপ।’ ‘কি বলিস!! কি হয়েছে ওর?’ ‘সকালে ওর বউ কল দিল। মেয়েটা খুব কাঁদছিল, বলছিল এইডেন নাকি হাসপাতালে, রাতে নাকি কেমন-কেমন করছিল, অবস্থা খুব খারাপ হয়ে গেলে ওকে হাসপাতালে নিয়ে আসে ওরা। ও নাকি এখন আইসিইউতে আছে। অবস্থা বেশি ভালো নয়, ফিফটি-ফিফটি চান্স।’ কথাটা শুনে আর দেরি করেনি উইলিয়াম। সেই ছোটবেলার বন্ধু এইডেন। ওর কিছু হয়ে গেলে...নাহ আর ভাবতে পারছে না ও। কোন মতে গায়ে একটা টি শার্ট চাপিয়ে খুব দ্রুত গাড়ি ড্রাইভ করে হাসপাতালে চলে এলো। উইলিয়াম, ইথেন আর জ্যাকসন তাকিয়ে আছে আইসিইউর বন্ধ দরজার দিকে। ওখানেই নির্ধারিত হচ্ছে এইডেন এর ভাগ্য। আইসিইউর পাশেই এক বেঞ্চে বসে হাত দিয়ে মুখ ঢেকে কেঁদে চলেছে লিসা, এইডেন এর বউ। উইলিয়াম ওর কাছে গিয়ে বসলো। এরপর খুব শান্ত গলায় বলল, ‘সব আমাদেরকে খুলে বল, কাল রাতে ঠিক কি হয়েছিল।’ মেয়েটা ফুঁপিয়ে উঠল। গোটা দুই মিনিট লাগল ওর স্বাভাবিক হতে। এরপর বলল, ‘গত পরশু যখন তোমরা ইজিপ্ট থেকে আসলে তখন থেকেই ওর শরীর খারাপ ছিল। জ্বর ছিল খানিকটা, শ্বাসকষ্টও হচ্ছিল। আমাদের ডক্টর ছুটিতে গেছেন ১ মাসের জন্য। তাই পাশের এক ফার্মেসি থেকে কিছু ওষুধ এনে খাইয়ে দিলাম। আমি তো ভাবলাম এলার্জেটিক সমস্যা, ইজিপ্টে তো অনেক ধুলো-বালি, এলার্জেটিক সমস্যা হওয়া বিচিত্র কিছু না।’ ‘এরপর কি হলো,’ জ্যাকসন জিজ্ঞেস করল। ‘তারপর গতকাল সন্ধ্যা থেকেই দেখলাম ওর জ্বর বাড়ছে, সেই সাথে বাড়ছে শ্বাসকষ্টটাও। কয়েকবার বমিও করেছে। কাশছিল একটু পর-পর। মাঝ রাতের দিকে ওর চিৎকারে ঘুম ভেঙ্গে যায়। বলে, ওর বুকের উপর কিছু একটা বসে আছে, শ্বাস নিতে প্রচণ্ড কষ্ট হচ্ছে। বুকের ব্যথায় ছটফট করছিল। শুধু বলছিল, কিছু একটা ওর বুকটা চেপে ধরে রেখেছে, ওকে নিশ্বাস নিতে দিচ্ছে না। অবস্থা খুব খারাপ দেখে আমি ওকে সোজা হাসপাতালে নিয়ে এলাম,’ এইটুকু বলেই মেয়েটা আবার ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠল। লিসার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে উইলিয়াম উঠে এলো। সাথে-সাথে আইসিইউর দরজাটাও খুলে গেল। একজন ডক্টর বের হলেন। ‘ডক্টর, রোগীর অবস্থা কেমন দেখছেন? ভালো আছে তো?’ ইথেন জিজ্ঞেস করল। ‘আপনারা খুবই ভাগ্যবান, আর ঘণ্টা দুয়েক দেরি হলে ওর পুরো রেস্পিরেটরি সিস্টেম ফেইলিউর হয়ে যেত। ওকে আমরা বাঁচাতে পারতাম না,’ কপালের ঘাম মুছতে-মুছতে বললেন ডক্টর। ওরা সবাই একসাথে আইসিইউতে ঢুকল। বেডে শুয়ে আছে এইডেন। ওর পুরো শরীর অদ্ভুত রকমের নীল হয়ে আছে। এতো সাধারণ কোন অসুখ নয়...চামড়ার রঙ এভাবে পরিবর্তন হয়ে যাওয়া তো... ‘বিষ এর প্রভাব। কেউ একজন ওকে বিষ প্রয়োগ করেছিল,’ ডক্টর যেন বোমা ফাটালেন। পুরো ঘরে সবাই নিস্তব্ধ হয়ে গেল। অবশেষে জ্যাকসন কথা বলে উঠল। কি ধরনের বিষ এটা? আপনারা ধরতে পেরেছেন? আর ওর শরীর থেকে সব বিষ বের করেছেন তো আপনারা, নাকি?’ ‘চিন্তা করবেন না, উনার শরীর থেকে সব বিষই বের করা হয়েছে, উনি সুস্থ হয়ে যাবেন কয়েকদিনের ভিতরেই। আর বিষটার কথা বলি, ওকে যে বিষটা দেয়া হয়েছিলো ওটার নাম খুব সম্ভবত রাইসিন। গ্যারান্টি দিতে পারব না, কিন্তু লক্ষণ দেখে আমার অন্তত তাই মনে হচ্ছে। ক্যাস্টর অয়েল এর বীজ থেকে তৈরি করা হয় এটা। খুবই ভয়ঙ্কর বিষ। পেশেন্ট এর পুরো শরীর নীল হয়ে যায়, জ্বর উঠে, ভয়াবহ শ্বাসকষ্ট হতে থাকে, বার-বার মনে হতে থাকে যেন বুকটা ভীষণ ভারী হয়ে আছে। ওর তো লাংস এ পর্যন্ত পানি জমে গিয়েছিল, সময়মত না আনলে যে কি হতো...’ ডক্টর খুব বড় করে একটা শ্বাস ফেললেন। *** ‘ব্যাপারটা কি বল তো? এইডেনকে কেউ কেন বিষ দিতে যাবে বল? ও তো কারো সাতেও নেই পাঁচেও নেই। তাই না?’ জ্যাকসন বলল। ওরা এখন হাসপাতালের গ্রাউন্ড ফ্লোর ধরে হাঁটছে। ‘আমিও ব্যাপারটা বুঝতে পারছি না। ওকে বিষ দিতে পারে কেবল তিনজন ব্যক্তি,’ চিন্তিত মুখে বলতে লাগল উইলিয়াম,’ একজন হচ্ছে উইলিয়ামের বাড়ির বাটলার, ২য় জন হচ্ছে ওর পার্সোনাল ডক্টর এবং ৩য় জন হচ্ছে ওর স্ত্রী।’ বাকি দুইজনের ভ্রু কুঁচকে এলো। ‘কি বলতে চাস তুই?’ ‘আমি বলতে চাইছি যে, সাদা চোখে দেখলে একমাত্র এই তিনজনের পক্ষেই বিষ প্রয়োগ করা সম্ভব ছিল, বাইরের কারো পক্ষে সম্ভব নয়, তাছাড়া উইলিয়াম বাইরের খাবার খায় না। বাসায় খায়। তাই এটা সম্ভব যে ওর বাড়ির বাটলার ওর খাবারে বিষ প্রয়োগ করেছে.........’ ‘তো তুই বলতে চাইছিস যে ওর বাটলারই ওকে বিষ দিয়েছে?’ ‘না, কারণ প্রথমত ঐ বাটলার ওদের বাসায় আছে ওর ছোট বেলা থেকে, ওকে কোলে পিঠে করে উনি মানুষও করেছেন, বিষ প্রয়োগ করার ইচ্ছা থাকলে উনি অনেক আগেই করতে পারতেন,’ কপালের ভ্রু কুঁচকে এলো উইলিয়াম এর। ‘হুম, তাহলে কে?’ ‘এরপর বাকি থাকল ডক্টর, কিন্তু উনিও বিষ মেশাননি। কারণ গত এক মাস ধরে উনি ছুটিতে আছেন।’ ‘তাহলে বাকি থাকল আর কে? উইলিয়ামের স্ত্রী?’ ‘হুম...’ ‘ও যদি আমার বন্ধুকে বিষ দিয়ে থাকে, তো কসম খোদার, ওকে আমি খুন করব,’ চেঁচিয়ে উঠল জ্যাকসন। ‘থাম তুই, যাকে বিশ্বাস করিস না তার নামে কসম কাটিস কেন?’ উইলিয়াম বিরক্ত হয়ে জিজ্ঞেস করল। জ্যাকসনকে একটু বিব্রত মনে হলো। সে যে এথিস্ট, সেটাই সে মাঝে-মাঝে ভুলে যায়। আমতা-আমতা করে বলল, ‘না মানে...ইয়ে...গডের নামে কসম কাটলে সুবিধা হচ্ছে যে আমি চাইলেই কসমটা অমান্য করতে পারি...কাউকে জবাবদিহি করতে হবে না...’ অন্য সময় হলে ওরা হেসে উঠতো, কিন্তু এখন পরিস্থিতি অনেক ভয়াবহ। তাই ওরা কেউ হাসল না। কিন্তু লিসা বিষ প্রয়োগ করেছে, এটা আমার মানতে ইচ্ছা হচ্ছে না, কারণ লিসাকে আমি অনেক আগে থেকেই চিনি। এইডেনকে যথেষ্ট ভালোবাসে মেয়েটা। অতএব...’ বলতে-বলতে উইলিয়ামের চোখে কিছু স্মৃতি ভেসে উঠে। মমি...এইডেন...এবং সেই শ্রমিকটা যে মমিটাকে স্পর্শ করার ব্যাপারে এইডেনকে সাবধান করে দিয়েছিল! ‘আহা...! পেয়েছি...এটা আমি এতক্ষণ বুঝিনি কেন,’ উইলিয়াম উত্তেজিতভাবে নিজেই নিজের হাতে কিল দিল। ‘কি পেয়েছিস?? বল, এখুনি বল,’ বাকি দুইজনও উত্তেজিতভাবে হয়ে উঠল। ‘দেখ, তোদের নিশ্চয়ই মনে পড়ে যে এইডেন মমিটার ডালাটা খুলে অনেকক্ষণ ধরে মমিটা পর্যবেক্ষণ করেছে, এমনকি সে অ্যাঙ্গুইসিয়াকে চড়ও মেরেছে। মনে পড়ে?’ ‘হুম, তো? তুই নিশ্চয়ই বলছিস না যে অ্যাঙ্গুইসিয়ার অভিশাপে এইডেন এখন শয্যাশায়ী?’ ‘অবশ্যই না। আবার...অবশ্যই তাই...’ ‘মানে কি?’ প্রচণ্ড বিস্ময়ের সাথে বললো জ্যাকসন। ইথেনকেও বিভ্রান্ত দেখাচ্ছিল। ‘দেখ, আমি তোকে গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারি যে প্রাচীন মিসরীয়রা তাদের রাজ পরিবারের খুব গুরুত্বপূর্ণ মানুষদের মমি রক্ষা করার জন্যে কিছু ভয়াবহ স্টেপ নিয়েছিল, যার মধ্যে প্রধান হচ্ছে যে ওদের মমির উপর বা কফিনের আশে-পাশে খুব সাবধানে কিছু বিষ ছিটিয়ে দেয়া। এর মাধ্যমে এটা নিশ্চিত হতো যে এই মমি বা এর কফিন যে ধরবে বা যে এর সংস্পর্শে বেশিক্ষণ সময় কাটাবে, তার শরীরে বিষক্রিয়া হবে আর সে মারা যাবে। লোকে তখন বলবে যে এটা মমির অভিশাপে হয়েছে, আর ওরাও এটাই চেয়েছিল, অভিশাপের ব্যাপারটা সবার মাথায় ঢুকিয়ে দিয়ে সবাইকে সমাধিতে ঢুকতে নিরুৎসাহিত করা।’ ‘অতএব অভিশাপটা সত্যি, তবে সেটা সায়েন্টিফিকেলি হয়েছে, অলৌকিকভাবে নয়। এখন তুই এটাকে চাইলে অভিশাপ মানতেই পারিস, আবার নাও মানতে পারিস, তোর ব্যাপার। কিন্তু, পুরো ব্যাপারটা সত্য। আর রাইসিন এর ব্যাপারটা বলি, প্রাচীন সমাধিগুলোর আশে-পাশে ক্যাস্টর অয়েল গাছ পাওয়া যেত। ওরা ঐ অয়েল গায়ে মেখে রূপচর্চা করত, আলো জ্বালানোর কাজে ব্যাবহার করত। তবে...সেই সাথে আরও একটা খুব গোপনীয় কাজে ব্যবহার করত...ক্যাস্টর অয়েল গাছ এর বীজ থেকে রাইসিন নামক সাদা রঙের গুঁড়ো বিষ তৈরি করে মমিগুলোর গায়ের উপরে এবং কফিনের ভেতর ছিটিয়ে দেয়া।’ ‘তবে ওর সিম্পটমগুলো শুনে যা বুঝলাম তা হচ্ছে রাইসিন ওর নিঃশ্বাসের সাথে প্রবেশ করেছিল, পেটে যায়নি। সে বেশ কিছুক্ষণ ধরে মমিটার আশে-পাশেই ছিল। খুব কাছ থেকে মমিটাকে পর্যবেক্ষণও করেছে, তাই হয়ত ওর নিঃশ্বাসের সাথে রাইসিন শ্বাসতন্ত্রে প্রবেশ করে। আমার এখনো মনে পড়ছে যে ফিরে আসার সময় ফ্লাইটে ও বার-বার বলছিল যে ওর নিঃশ্বাস নিতে সমস্যা হচ্ছে। বুকটাও ভারী-ভারী লাগছিল বলে বলেছিল। তো, রাইসিনের ইনহেলেশান এ রোগীর মারা যেতে সময় লাগে ৩৬ থেকে ৪৮ ঘণ্টা, এবং আমার হিসেব অনুযায়ী, ওকে হাসপাতালে আনা হয় ৩৬ থেকে ৩৮ ঘণ্টার ভেতরেই। ফলে সে খুবই সৌভাগ্যক্রমে বেঁচে গেছে। আর সার্কোফ্যাগাসের ডালা আর অ্যাঙ্গুইসিয়ার গালে হাত দেয়ার পর যদি ওর হাতে রাইসিন লেগেও থাকে, সেটা ধুয়ে গেছে তখনি যখন ও ইথেনের কাছ থেকে পানি নিয়ে হাত ধুয়েছিল। সেটা যদি না করত, তাহলে ওর পেটেও রাইসিন যেত এবং এত অত্যধিক রাইসিন এক্সপোজারের কারণে সে অনেক আগেই মারা যেত,’ পুরো ব্যাপারটা ব্যাখ্যা করল উইলিয়াম। ‘উরি বাপ...এত কিছু কেমনে আসলো তোর মাথায়?’ দুই বন্ধু অবাক হয়ে গেল। ‘আরও অনেক কিছুই আসছে, শুনবি?’ রাইসিনের ব্যাপারটা যেন উইলিয়ামের মাথাটা খুলে দিয়েছে পুরোপুরি। ‘বলেন?’ ওর দুই বন্ধু মুগ্ধ হয়ে উইলিয়ামের বিশ্লেষণী ক্ষমতা দেখছিল। আর্কিয়োলজিস্ট না হলে এ ছেলে শিউর গোয়েন্দা হত। ‘মনে আছে, সমাধিতে ঢোকার পর আমাদের নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছিল? ঐখানে আমাদের এক শ্রমিক নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে মারাও গেল। এর কারণটাও আমি বুঝতে পারছি।’ ‘বলে ফেল,’ ইথেন বলল। ‘সমাধিটা অন্তত তিন হাজার বছরের পুরনো, সেখানে বাতাস বেরোনোর কোন রাস্তা নেই। ওখানে বিভিন্ন মারাত্মক গ্যাস সৃষ্টি হওয়া খুবই স্বাভাবিক। ঐ শ্রমিকের সমস্ত সিম্পটম এবং আমার প্রচণ্ড মাথা ব্যথা আমাকে একটি গ্যাসের কথাই বার-বার মনে করিয়ে দিচ্ছে। হাইড্রোজেন সালফাইড,’ ধীরে-ধীরে বলল উইলিয়াম। ‘হুম, হতে পারে...সমাধি থেকে আসার পর থেকেই আমাদের দুজনেরও মাথা ধরেছিল, ক্রমান্বয়ে মাথা ব্যথা বাড়তেই থাকে, এই তাহলে কারণ...’ নিজের কপালে হাত বুলিয়ে বলল ইথেন। ‘ঠিক তাই…বেশ কিছুক্ষণ হাইড্রোজেন সালফাইডের সংস্পর্শে থাকলে মাথা ব্যথা করে, নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসে এবং পরিশেষে মানুষ মারা যায়। আমরা সময়মত বেরোতে পেরেছি, তাই বেঁচে গেছি। কিন্তু ঐ শ্রমিকটা পারেনি...বেচারা...’ দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল উইলিয়াম। ‘একটু দাঁড়া...হাইড্রোজেন সালফাইড যদি থেকেই থাকে তাহলে তার ডিম পচা গন্ধ আমরা কেউ পেলাম না কেন?’ হঠাত মনে পড়ায় জিজ্ঞেস করল জ্যাকসন। ‘পাইনি কারণ, হাইড্রোজেন সালফাইডের ডিম পচা গন্ধ পাওয়া যায় কেবল তখনি যখন এর কনসেন্ট্রেশান ১০০ পিপিএম এর নিচে থাকে। কনসেন্ট্রেশান ১০০ পিপিএম এর থেকে যতই উপরের দিকে যেতে থাকে, গন্ধটাও ধীরে-ধীরে গায়েব হতে থাকে। ঐ স্থানে হাইড্রোজেন সালফাইডের কনসেন্ট্রেশান অবশ্যই ১০০ পিপিএম এর যথেষ্ট বেশি ছিল, নাহলে ঐ শ্রমিক মারা যেত না,’ উইলিয়াম বলল। ‘সে নাহয় বুঝলাম, কিন্তু ঐ দুইজন শ্রমিক বুকের ব্যথায় মারা গেল কেন? ওটা তো আর গ্যাসের কারণে না,’ ইথেন জিজ্ঞেস করল। ‘ব্যাপারটা হচ্ছে, সমাধিটা যেহেতু অনেক পুরনো, সেহেতু সেখানে অনেক প্রাণঘাতী ব্যাকটেরিয়া থাকা বিচিত্র কিছু নয়। কিছু ব্যাকটেরিয়া আছে যারা সরাসরি ফুসফুসে আক্রমণ করে সেখানে রক্তপাত ঘটায়। সময়মত চিকিৎসা নিতে না পারলে রোগীর খুব তাড়াতাড়ি মৃত্যু ঘটে। সিউডোমোনাস আর স্ট্যাফাইলোকক্কাস হচ্ছে ঐরকমই দুটি ব্যাকটেরিয়া। ঐ সমাধিতে ঐ জাতীয় ব্যাকটেরিয়া ছিল হয়তো, সেগুলোর কারণেই শ্রমিক দুটো মারা গেছে, মমির অভিশাপে নয়,’ এক নিঃশ্বাসে কথাগুলো বলল উইলিয়াম। ‘ওরেব্বাবা...এ যে সাক্ষাত শার্লক হোমস...অল হেইল উইলিয়াম দ্য গ্রেট,’ বলেই ওর দুই বন্ধু মাথা ঝুঁকিয়ে ওকে কুর্নিশ করতে লাগল। ‘আরে দাঁড়া...দাঁড়া! এখনই কুর্নিশ করিস না। আরও অনেক কিছুই তো এখনও ব্যাখ্যা করতে পারিনি। ঐ শ্রমিকের লাশ গায়েব হয়ে যাওয়া, আমার বাড়িতে ঘটে যাওয়া অদ্ভুত ঘটনা, সেই ম্যাসেজ...ওগুলো এখনো অধরাই রয়ে গেছে। এগুলর যেহেতু পেয়ে গেছি, ওগুলোরও পেয়ে যাবো আসা করি।’ ‘কি ম্যাসেজ!’ অবাক হয়ে বাকি দুইজন জিজ্ঞেস করল। উইলিয়াম একটা লম্বা শ্বাস টেনে ওদেরকে গতরাতের সব কথা বলতে লাগল। *** দুপুরবেলা খাবার খেয়ে ওরা রিসেপসনের সামনে এসে বসল। টিভিতে খবর দেখাচ্ছিল। প্রথমে দেখাল, প্রেসিডেন্ট কোথায় যেন পরিদর্শন এ গিয়েছিলেন তার খবর, তারপর বিরোধী দলের নেতার প্রেস কনফারেন্সের কিছু উল্লেখযোগ্য অংশ। এরপর দেখাল এক রিপোর্টার এর আত্মহত্যার খবর। ছবিও দেখান হলো তার। ছবিটা খুব পরিচিত মনে হচ্ছে... ‘শিট! শিট ম্যান! জাস্ট শিট...!’ উইলিয়াম কনোর আর্তনাদ করে উঠল। ‘কি হয়েছে?’ ‘এই রিপোর্টার কালকে প্রদর্শনীর দিন এসেছিল। ও পাগলের মত অ্যাঙ্গুইসিয়ার ছবি তুলছিল। আমি বুঝলাম না, ও আত্মহত্যা কেন করতে যাবে?’ ‘খবরটা শুনে মাথাটা আবার ঘুরছে...চল বাইরে থেকে হেঁটে আসি,’ জ্যাকসন বলল। ওরা সোজা হাঁটা দিল সামনের দিকে। হঠাত এক মহিলা দৌড়ে এসে উইলিয়ামের শার্ট এর কলার ধরে ওকে এলোপাথাড়ি ঘুষি মারতে থাকে। ‘এই! এই মেয়ে...কি সমস্যা তোমার? ছাড়ো আমাকে...আমি বলছি ছাড়ো...’ ‘তোমার কারণে, শুধু তোমার কারণে আমার ছেলের এ দশা হলো। তোমাকে আমি ছাড়ব না, খুন করব তোমাকে...’ মহিলা পাগলের মত চেঁচাচ্ছে আর উইলিয়ামকে এলোপাথাড়ি ঘুষি মেরে চলেছে। হঠাত মহিলার হাজবেন্ড এসে হাজির হলেন আর মহিলাকে ধরে উইলিয়ামের কাছ থেকে ছাড়িয়ে নিলেন। ‘আই এম সো সরি, স্যার! আমার স্ত্রী আসলে ছেলের এ অবস্থা দেখে শকড হয়ে গিয়েছে। ওর মাথার ঠিক নেই স্যার, প্লিজ আপনি কিছু মনে করবেন না, স্যার...’ লোকটা বলল। উইলিয়াম খুব ভালোভাবে মহিলা আর লোকটাকে দেখল। এদেরকে পরিচিত মনে হচ্ছে, আগেও যেন কোথাও দেখেছে... ‘আপনার ছেলের কি হয়েছে?’ উইলিয়াম জিজ্ঞেস করল। ‘আমার ছেলে আজ সকালে ছাদ থেকে পড়ে গিয়ে পা ভেঙে ফেলেছে। ছোট বাচ্চা...নরম হাড়...বুঝেনই তো। সারতে মাস তিনেক লাগবে। ভয় পাচ্ছি এটা ভেবে যে ও আর আগের মত হাঁটা চলা করতে পারবে কি না,’ চোখ মুছতে-মুছতে বলল লোকটা। ‘কিন্তু উনি আমাকে আক্রমণ করলেন কেন? আমার কি অপরাধ এখানে?!’ উইলিয়াম অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল। ‘গতকাল আমরা আপনার সেই বাংলোতে গিয়েছিলাম, মমিটা দেখার জন্যে। আমার স্ত্রী রাজি ছিল না। কারণ ওর বিশ্বাস যে ঐ মমির কারণেই ৩ জন শ্রমিক মারা গেছে। ওর ধারনা ছিল মমিটা অভিশপ্ত। ওটা দেখতে গেলে আমাদেরও বিপদ হবে, আর হলোও তাই...আর সেই কারণেই ও আপনার উপর ক্ষিপ্ত। কারণ আপনিই ঐ অভিশপ্ত মমিটাকে এখানে এনেছেন।’ ‘আপনার ছেলেকে একবার দেখতে চাই, চলুন,’ উইলিয়াম বলল। ওরা লোকটার পিছু-পিছু ১ম ফ্লোর এ গেল। মহিলাটাকে এখন বেশ লজ্জিত মনে হচ্ছে। বেচারির হয়তো মাথার ঠিক নেই এখন। উইলিয়ামের ওর জন্যে খারাপ লাগতে শুরু করল। কেবিনে ঢুকল ওরা। বিছানায় শুয়ে আছে একটা বাচ্চা ছেলে, সারা গায়ে ব্যান্ডেজ মোড়ানো। মুখটা দেখা যাচ্ছে শুধু। বাচ্চাটাকে দেখেই সে চিনতে পারল। সেই বাচ্চাটা, যে মমিটাকে ভেংচি কেটেছিলো! উইলিয়াম বাচ্চাটার পাশে গিয়ে বসল। বাচ্চাটা অনেক কষ্ট করে চোখ মেলে উইলিয়ামকে দেখল। এত ছোট একটা বাচ্চাকে এই অবস্থায় দেখতে কার ভালো লাগে? ‘বাবু তুমি পড়ে গেলে কিভাবে একটু বলবা?’ ‘আঙ্কেল, আমি ছাদে খেলছিলাম। আমার খেয়ালই ছিল না যে খেলতে-খেলতে আমি কখন কিনারায় চলে এসেছি। হঠাত দেখলাম যে আমি একদম কিনারায় দাঁড়িয়ে আছি। এরপর আমি চলে আসতে চাইলাম। কিন্তু জানো আঙ্কেল, আমার মনে হলো যে আমার পা ঐখানে আটকে গেছে। কিছুতেই এ পাশে আসতে পারছি না। আর এরপর কোথা থেকে যেন প্রচণ্ড দমকা বাতাস এলো...আমার তো মনে হলো ঝড়ই শুরু হয়েছে। এরপর...আমি পড়ে গেলাম...তারপর আর কিছু মনে নেই... ‘মজার ব্যাপার কি জানেন মিস্টার উইলিয়াম? ওই সময় কোন ঝড় হয়নি, কোন দমকা বাতাসও হয়নি। আমি ঘরের আঙ্গিনাতেই ছিলাম। এত জোরে বাতাস বইলে আমি টের পেতাম। কিন্তু না, কোন বাতাস ছিল না,’ বাচ্চাটার বাবা বললেন। উইলিয়াম দাঁতে-দাঁত চিপে সব শুনতে লাগল। রহস্য সমাধানের এত কাছে আসার পর যদি আবার নতুন করে রহস্য তৈরি হয় তখন কেমন লাগে? যেই মুহূর্তে সে আগের কিছু ঘটনার ব্যাখ্যা বের করে ফেলেছে, ঠিক তখুনি নতুন করে আরও দুইটা ঘটনা ঘটল যেগুলোর কোন ব্যাখ্যা নেই। এটা কি কেবলই কো-ইনসিডেন্স? নাকি ওদের কথাই ঠিক? মমিটা আসলেই... বাচ্চাটার মাথায় হাত বুলিয়ে দিল সে। বাচ্চাটা মিষ্টি করে হাসল। দেখে খুব মায়া লাগলো উইলিয়াম এর। ‘ডক্টর, এই বাচ্চাটার যাতে কিছু না হয়। ওর সর্বোচ্চ চিকিৎসার জন্যে যা লাগে সব আমি দেব। কিন্তু ওর যাতে কিছু না হয়,’ ডক্টরকে এ কথাটা বলেই সোজা ঝড়ের বেগে বের হয়ে গেল উইলিয়াম। একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছে সে, এখন সেটা ওকে করতেই হবে, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব। আর কোন কথা না বলে সোজা বাইরে বেরিয়ে এলো উইলিয়াম। ইথেন আর জ্যাকসন অবাক হয়ে তাকিয়ে-তাকিয়ে দেখছিল ওকে। ওরা উইলিয়ামের মন পড়তে চেষ্টা করছে। উইলিয়াম ওদেরকে ইশারায় গাড়িতে উঠতে বলল। এরপর গাড়ি ড্রাইভ করে সোজা চলে এলো ওর নিজের বাংলোর সামনে। গাড়িতে ইথেন আর জ্যাকসন উইলিয়ামকে অনেক জিজ্ঞেস করেছিলো যে সে কি করতে যাচ্ছে, কিন্তু উইলিয়াম কোন জবাব দেয়নি। শুধু ভ্রু কুঁচকে পুরোটা সময় কি যেন ভেবেছে। এই দীর্ঘ সময় সে একটা কথাও বলেনি। গাড়ি থেকে নেমেই সে সোজা গেল সেই রুমে, যেখানে মমিটা রাখা। এরপর কাঁচের বাক্সটার সামনের দিকের অংশটা একপাশে সরিয়ে দিল। ‘ইথেন, জ্যাকসন! একটু হেল্প করত, মমিটাকে বাক্স থেকে নামাব,’ বলেই মমিটাকে নামাতে শুরু করল উইলিয়াম। বাকি দুইজন বেশ অবাক হলেও ওকে সাহায্য করল। ওরা ৩ জন ধরাধরি করে মমিটাকে কাঁচের বাক্স থেকে সরিয়ে কফিনসহ মেঝেতে নামিয়ে দিল। ওটার মুখের দিকে কিছুক্ষণ ঘৃণা ভরা দৃষ্টিতে তাকিয়ে উইলিয়াম নিজের ফোনটা বের করল। পাগলের মত নাম্বার চিপে কোথায় যেন কল করল ও। ‘হেলো, কুপার? কি খবর তোর? হ্যাঁ...না...ভা লো নেই...হ্যাঁ? আছে...সব বলব, তোর জাহাজটা একটু লাগবে। হ্যাঁ, আজ রাতেই লাগবে। ইমারজেন্সি ব্যাপার, না হলে তোকে কল করতাম না এভাবে। না...সেটা পরে বলব...তো ঐ কথাই রইল? ওকে, বাই, সি ইউ ইন ২ আওয়ারস।’ কল কেটে দিয়ে কপালে হাত দিয়ে কি যেন ভাবতে লাগল উইলিয়াম। খুব ধীরে-ধীরে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল সে। ওর কারণে এতগুলো মানুষের বিপদ হয়েছে। এটা আর চলতে দেয়া যায় না। ভুল যখন করেই ফেলেছে, তখন সেই ভুলের মাশুল তাকেই দিতে হবে। ও বড়জোর এটা নিশ্চিত করতে পারে যে তার ভুলের মাশুল যাতে অন্য কাউকে দিতে না হয়। (চলবে) ---------------------


এডিট ডিলিট প্রিন্ট করুন  অভিযোগ করুন     

গল্পটি পড়েছেন ২৬৯ জন


এ জাতীয় গল্প

গল্পটির রেটিং দিনঃ-

গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন

  • গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now