বাংলা গল্প পড়ার অন্যতম ওয়েবসাইট - গল্প পড়ুন এবং গল্প বলুন

বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা

আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ

নেকড়ে ও সাত ছাগলছানা

"রূপকথা " বিভাগে গল্পটি দিয়েছেন গল্পের ঝুরিয়ান রিয়াদুল ইসলাম রূপচাঁন (০ পয়েন্ট)

X এক বুড়ি ছাগলের সাতটা ছানা ছিল। সব মা নিজের ছেলেপুলেদের যেরকম ভালোবাসে সেরকমই সে ভালোবাসত তার ছানাগুলোকে। একদিন খাবার জোগাড় করতে তাকে যেতে হল বনে। তাই সাতটা ছানাকে কাছে ডেকে সে বলল, “বাছারা, সাবধানে থাকিস। আমি বনে বেরুলে নেকড়েটাকে ঢুকতে দিস না। ঢুকতে পেলেই তোদের সবাইকে সে গবগব করে খেয়ে ফেলবে। বুড়ো শয়তানটা প্রায়ই ভোল পালটে আসে। তার হেঁড়ে গলা শুনলে আর কালো পা দেখলেই তোরা চিনতে পারবি।” ছানারা বলল, “মামণি, আমরা সাবধানে থাকব। নিশ্চিন্ত মনে তুমি যাও।” হাঁফ ছেড়ে নিশ্চিন্ত মনে তাদের বুড়ি মা পথে বেরুল। খানিক পরেই কে একজন বাইরের দরজায় টোকা দিয়ে বলল, "বাছারা, দরজা খোল। আমি তোদের মা। সবাইকার জন্যে একটা করে জিনিস এনেছি।” কিন্তু তার হেঁড়ে গলা শুনে ছানারা বুঝল নেকড়েটা এসেছে। তাই একসঙ্গে চেঁচিয়ে তারা বলল, “তোমাকে আমরা দোর খুলে দিচ্ছি না। তুমি আমাদের মা নও। আমাদের মায়ের গলা খুব মিষ্টি। তোমার তো হেঁড়ে কুচ্ছিত গলা। তুমি তো নেকড়ে।” তাই শুনে মুদির দোকানে গিয়ে নেকড়ে কিনল বড়ো এক তাল সাদা খড়ি। নিজের গলা মোলায়েম করার জন্য সেটা খেয়ে ফিরে এসে আবার সদর দরজায় টোকা দিয়ে সে বলল, “বাছারা, দোর খোল। আমি তোদের মা। সবাইকার জন্যে একটা করে জিনিস এনেছি।” কিন্তু নেকড়ে তার সামনেকার কালো থাবা রেখেছিল জানালার শার্শিতে। তাই-না দেখে একসঙ্গে ছানারা চেঁচিয়ে বলল, “তোমাকে আমরা দোর খুলে দিচ্ছি না। তোমাদের মতো আমাদের মায়ের পা কালো নয়। তুমি তো নেকড়ে।” নেকড়ে তখন এক দৌড়ে রুটিওয়ালার কাছে গিয়ে বলল, “আমার পা-টা জখম হয়েছে। ময়দার পুলটিস লাগিয়ে দে।” রুটিওয়ালা ময়দার পুলটিস লাগিয়ে দিলে, এক দৌড়ে জাতাওয়ালার কাছে গিয়ে সে বলল, “আমার পায়ে খানিকটা ময়দা-গুড়ো ছড়িয়ে দে।” জাতাওয়ালা ভাবল, “নিশ্চয়ই কাউকে ও ঠকাতে চায়।” তাই সে থানিক দোনোমোনো করতে লাগল ৷ চটে উঠে নেকড়ে বলল, “যা বলছি না করলে তোকে আমি খেয়ে ফেলব।” ভয় পেয়ে জাতাওয়ালা তার পায়ের থাবা সাদা করে দিল। শয়তানটা তৃতীয়বার সদর দরজায় ফিরে এসে টোকা দিয়ে বলল, “বাছারা দোর খোল। আমি তোদের মা। বন থেকে সবাইকার জন্যে জিনিস এনেছি। ছানারা বলল, “আগে তোমার পা-টা দেখাও, তবেই বুঝব তুমি আমাদের মামণি কি না।” তাই শুনে জানালার শার্শিতে নেকড়ে তার পা রাখল। ছানারা দেখল সত্যিই সেটার রঙ সাদা। তাই ভাবল তার কথা সত্যি। তারা দরজা খুলে দিল। নেকড়ে ঢুকতে আঁতকে উঠে তারা চেষ্টা করল লুকিয়ে পড়তে। প্রথমজন দৌড় দিল টেবিলের তলায়, দ্বিতীয়জন লাফিয়ে উঠল বিছানায়, তৃতীয়জন সেঁধুল উনুনের মধ্যে, চতুৰ্থজন পালাল বাসনমাজার ঘরে, পঞ্চমজন ঢুকল পোশাকের আলমারিতে, ষষ্ঠজন ঝাঁপ দিল স্নানের টবে আর সপ্তমজন উঠে পড়ল বড়ো দেয়াল-ঘড়ির মধ্যে। কিন্তু নেকড়ে তাদের সবাইকে খুঁজে বার করে গবগব করে গিলে ফেলল। পারল না শুধু দেয়ালঘড়ির মধ্যেকার সব চেয়ে ছোটো ছানাকে খুঁজে বার করতে। ভোজ শেষ করে হেলতে-দুলতে বাড়ি থেকে বেরিয়ে সবুজ মাঠের এক গাছতলায় গিয়ে হাত-পা ছড়িয়ে অঘোরে সে ঘুমিয়ে পড়ল। খানিক পরেই বন থেকে বাড়ি ফিরল সেই বুড়ি ছাগল। সব-কিছু দেখে চোখ তার কপালে। দরজা খোলা। টেবিল-চেয়ার-টুল ওলটানো। স্নানের টব টুকরো-টুকরো। বিছানার চাদর-বালিশ লণ্ডভণ্ড। ছানাগুলোকে কোথাও সে খুঁজে পেল না। প্রত্যেকের নাম ধরে একেএকে সে ডাকতে শুরু করল। কিন্তু কেউই সাড়া দিল না। শুধু সব চেয়ে ছোটো ছানার নাম ধরে ডাকতে কচি গলায় উত্তর এল, “মামণি, দেয়াল-ঘড়ির মধ্যে আমি লুকিয়ে আছি!” ছানাটাকে নামাতে, তাকে সে বলল, নেকড়েটা কী ভাবে এসে অন্য সবাইকে খেয়ে ফেলেছে। ছানাদের শোকে অনেকক্ষণ সে হাপুস-নয়নে কাঁদল। শোকে-দুঃখে শেষটায় বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়ল সে। সব চেয়ে ছোটো ছানাটা চলল তার পিছন-পিছন। মাঠে এসে তারা দেখে নেকড়েটা ঘুমচ্ছে। তার নাক-ডাকার শব্দে গাছের ডালপালা উঠছে মড়মড় করে। চার দিক থেকে ছাগল-মা তাকে ভালো করে দেখে লক্ষ্য করল তার ফোলা পেটের মধ্যে কী সব যেন ছট্ফট্ করে নড়ছে। সে ভাবল“কী কাণ্ড! মনে হচ্ছে আমার ছানাগুলো এখনো বেঁচে আছে। তাই-না দেখে ছাগল-মা দৌড়ে বাড়ি গিয়ে নিয়ে এল কাচি, ছুঁচ আর সুতো। নেকড়ের পেট সামান্য কাটতে একটা ছানা মাথা বার করল। আরো খানিক কাটতে লাফ দিয়ে বেরিয়ে এল তার ছ-ছটা ছানাই। ছানাগুলো মরে নি। কারণ পেটুক শয়তানটা তাদের চিবিয়ে না খেয়ে আস্ত গিলেছিল। ছানারা সবাই দারুণ খুশি। তাদের মাকে তারা জড়িয়ে ধরল। তার পর মনের ফুর্তিতে তারা লাগল লাফাতে। কিন্তু ছাগল-মা তাদের বলল, “তোরা ছুটে গিয়ে যত পারিস নুড়ি কুড়িয়ে আন। শয়তানটা ঘুমিয়ে থাকতে-থাকতে তার রাক্ষুসে পেটটা আমরা নুড়িবোঝাই করে ফেলব।” ছানারা চটপট নুড়ি এনে সবাই মিলে নেকড়েটার পেট ভরে ফেলল। তার পর ছাগল-মা তাড়াতাড়ি সেটা দিল সেলাই করে। নেকড়েটা একবারও নড়ল-চড়ল না। কোনো দিকেই তখন তার হুঁশ নেই। শেষটায় ঘুম ভাঙতে নেকড়ে যখন পায়ে ভর দিয়ে দাঁড়াল পেটের নুড়িগুলোর দরুন তার পেলো ভীষণ তেষ্টা। সে ভাবল, কুয়ো থেকে জল খাওয়া যাক। কিন্তু যেই-না সে হেলে-দুলে হাঁটতে শুরু করেছে অমনি তার পেটের মধ্যেকার নুড়িগুলো উঠল খড়মড় করে। দারুণ “অবাক হয়ে সে চেঁচিয়ে উঠলঃ “পেটের মধ্যে ঘড়ঘড়, খড়মড়, করছে ও-সব কী? গিলে ছিলাম ছাগল-ছানা কচি-কচি, মনে হচ্ছে ওগুলো সব পাথর-কুচি।” কুয়ো-পাড়ে এসে জল খাবার জন্য যেই-না সে ঝুঁকেছে অমনি নুড়িগুলোর ভারে কুয়োর মধ্যে পড়ে ডুবে সে মরল। মহা ফুর্তিতে সাতটা ছাগল-ছানা সেখানে ছুটে গেল। আর তার পর সেই কুয়োর চার পাশে ছাগল-মায়ের সঙ্গে আনন্দে নাচতে নাচতে চেঁচিয়ে চলল, “নেকড়েটা মরেছে! নেকড়েটা মরেছে।”


এডিট ডিলিট প্রিন্ট করুন  অভিযোগ করুন     

গল্পটি পড়েছেন ৬৪৭ জন


এ জাতীয় গল্প

→ নেকড়ে ও সাত ছাগলছানা

গল্পটির রেটিং দিনঃ-

গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন

  • গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now