বাংলা গল্প পড়ার অন্যতম ওয়েবসাইট - গল্প পড়ুন এবং গল্প বলুন

বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা

আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ

উপকূলে সংঘর্ষ ৮ম পর্ব

"রহস্য" বিভাগে গল্পটি দিয়েছেন গল্পের ঝুরিয়ান আর.এচ জাহেদ হাসান (০ পয়েন্ট)

X উপকূলে সংঘর্ষঃ ক্রমিক-৭ এডমিরাল নৌকা নিয়ে সাগরের পাড়ে এসে পৌছলেন। তার সাথে নৌবাহিনীর কয়েকজন সামরিক অফিসার। এডমিরালের গায়ের পোষাক রক্তে রঞ্জিত। তার একটি পা আগুনে ঝলসে গেছে। খৃস্টানদের মিনজানিকের গোলার আঘাতে তার জাহাজে আগুন ধরে গিয়েছিল। সে আগুন নেভানো সম্ভব হয়নি। জাহাজটি পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। তিনি কয়েকজন অফিসারসহ নৌকা নিয়ে কোনরকমে কুলে এসে পৌছেছেন। সালাহউদ্দিন আইয়ুবী আলেকজান্দ্রিয়া বন্দরের জেটিতে দাঁড়িয়ে পর্যবেক্ষণ করছিলেন যুদ্ধের অবস্থা। এডমিরাল তাড়াতাড়ি তার কাছে পৌঁছলেন। তিনি সংক্ষেপে দ্রুত সুলতান আইয়ুবীর কাছে যুদ্ধের অবস্থা বর্ণনা করে বললেন, ‘আমাদের অর্ধেক জাহাজ এরই মধ্য ধ্বংস হয়ে গেছে। কিন্তু খৃস্টানদেরও ক্ষতির পরিমাণ কম নয়। যুদ্ধ চালিয়ে গেলে তারা বেশিক্ষণ টিকতে পারবে না।’ সুলতান তাকে বললেন, ‘দুশ্চিন্তা করো না, অবশিষ্ট জাহাজগুলোও এখন যুদ্ধে নেমে পড়েছে।’ নৌবাহিনীর প্রধান আইয়ুবীকে বললেন, ‘খৃস্টান বাহিনীর সবচেয়ে বেশী ক্ষতিসাধন করা গেছে মাল বোঝাই জাহাজগুলোর। এ সব জাহাজে খাদ্যশস্য, ঘোড়া ও অস্ত্রপাতি বোঝাই। বোঝাইয়ের কারণে জাহাজের গতি ছিল মন্থর। ঘোরাতে ফিরাতেও অনেক সময়ের দরকার হতো। আমার জাহাজ ছিল যেমন হালকা তেমনি দ্রুতগতি সম্পন্ন।’ এডমিরাল বা আমীরুল বাহার এত বেশী আহত ছিলেন যে, তার শরীর ও মাথা ঘুরছিল। সুলতান আইয়ুবী তার চিকিৎসককে জলদি ডেকে পাঠালেন। কিন্তু এডমিরাল তার জখমকে তেমন গুরুত্ব দিলেন না। সুলতান আইয়ুবীর হেডকোয়ার্টার ছিল সাগর তীরের এক পাহাড়ী উপত্যকায়। তিনি আমীরুল বাহারকে নিয়ে হেডকোয়ার্টারে গেলেন। তাকে চিকিৎসকের হাতে তুলে দিয়ে এক উঁচু টিলায় দাঁড়িয়ে তাকালেন সমুদ্রের দিকে। সূর্যের প্রথম কিরণে সাগর ও সাগর তীরে এক ভয়ংকর দৃশ্য ফুটে উঠলো। যতদূর দৃষ্টি যায় সমুদ্রের মাঝে জাহাজগুলো উন্মত্ত ষাঁড়ের মত ধাওয়া করে ফিরছে। অনেক জাহাজে তখনো আগুন জ্বলছিল। কিছু জাহাজের মাস্তুল ভেঙ্গে গিয়ে খান খান। কারো পাল অকেজো হয়ে যাওয়ায় জাহাজগুলো একই জায়গায় টালমাটাল অবস্থায় দুলছিল। সাগরের মাঝে অসংখ্য লোককে সাঁতার কাটতে দেখা গেল। সমুদ্রের উত্তাল তরঙ্গ মৃতদের লাশগুলোকে সাগর তীরে এনে জড়ো করছে। চূড়ান্ত হামলার জন্য সুলতান যে জাহাজগুলো পাঠিয়েছেন সে জাহাজগুলোকে তিনি কোথাও দেখতে পেলেন না। একটু পর। পশ্চিমে বহু দূরে সাগরের বুকে মাস্তুলের অগ্রভাগ দেখা গেল, পরে পালও দৃষ্টিগোচর হলো। জাহাজগুলো সারিবদ্ধভাবে একে অন্যের সাথে একটা সমান্তরাল দূরত্ব বজায় রেখে যুদ্ধস্থলের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। সুলতান আইয়ুবী সঙ্গীর দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘তোমাদের জাহাজগুলো ছুটে আসছে।’ প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে আমীরুল বাহার বাইরে এসে দেখেন সুলতান সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে আছেন। তিনি সুলতানের দৃষ্টি অনুসরণ করে তাকালেন সাগরের দিকে। দেখলেন, মুসলিম নৌসেনারা জাহাজগুলো নিয়ে ছুটে আসছে যুদ্ধের মূল কেন্দ্রের দিকে। তিনি সুলতান আইয়ুবীকে কিছু না বলেই উপত্যকা থেকে নিচে নেমে এলেন। তিনি একটি নৌকায় চড়ে বসলেন। নৌকাটি দশ দাঁড়ের এক দ্রুতগামী তরী। নৌকার পালে বাতাসের টান পড়লো। ছুটলো যুদ্ধস্থলের দিকে। সহসা সুলতান আইয়ুবীর দৃষ্টি গিয়ে পড়লো সেই নৌকার ওপর। আহত আমীরুল বাহারকে আবার যুদ্ধের ময়দানে ছুটতে দেখে সুলতান আইয়ুবী চিৎকার করে উঠলেন, ‘সাঈদী! তুমি ফিরে এসো। তোমার পরিবর্তে আমি যুদ্ধ পরিচালনার জন্য আবু ফরিদকে পাঠিয়ে দিয়েছি।’ আমীরুল বাহারের নৌকা ততোক্ষণে অনুকূল হাওয়ায় ছুটতে শুরু করেছে। তিনি উচ্চস্বরে হাত নেড়ে বললেন, ‘সামান্য জখমের বাহানায় যুদ্ধের ময়দান থেকে দূরে থাকা ভীরু এবং কাপুরুষদের কাজ। আমাকে ক্ষমা করুন সুলতান, যেখানে আমার সৈনিকরা অকাতরে শহীদ হচ্ছে আমাকে তাদের সাথে শামিল হতে দিন। আল্লাহ হাফেজ।’ আমীরুল বাহারের নৌকাটি দ্রুত সরে যেতে লাগলো উপকূল থেকে। এক সময় দৃষ্টির আড়াল হয়ে গেল। এ সময় এক কাসেদ ছুটে এসে সুলতানকে সালাম দিল। আইয়ুবী তার দিকে তাকিয়ে সালামের জওয়াব দিয়ে বললেন, ‘কি সংবাদ নিয়ে এলে তুমি?’ দূত বললো, ‘আলেকন্দ্রিয়া বন্দর থেকে তিন মাইল উত্তর-পূর্ব কোণে খৃস্টান সৈন্য অবতরন করেছে। সেখানে এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে।’ সুলতান আইয়ুবী মনযোগ দিয়ে সংবাদ বাহকের কথা শোনলেন। তার কথা শেষ হলে বললেন, ‘তুমি এখনি আবার সেখানে ছুটে যাও। আমি যা যা বলছি, সেনাপতিকে গিয়ে সেই মত কাজ করতে বলবে। বলবে, এটা সুলতানের হুকুম।’ তিনি কিছু নির্দেশনা দিয়ে কাসেদকে পূনরায় ফেরত পাঠিয়ে দিলেন। কাসেদ বিদায় হলে তিনি আবার সমুদ্রের দিকে তাকালেন। সেখানে দাঁড়িয়েই দেখতে লাগলেন যুদ্ধের গতিবিধি। এক পর্যায়ে তিনি দেখতে পেলেন, খৃস্টানদের একটি যুদ্ধ জাহাজ প্রায় সাগরের তীরে এসে গেছে। মুসলিম নৌবহরের একটি জাহাজ তাকে ধাওয়া করে নিয়ে এসেছে এখানে। খৃস্টান জাহাজের দিশেহারা সৈন্যরা ক্রমাগত এলোপাথারি তীর বর্ষণ করে যাচ্ছে। মুসলিম জাহাজের সৈন্য ও মাল্লারা সেদিকে ভ্রুক্ষেপ না করে বেপরোয়াভাবে ছুটছে জাহাজটির দিকে। দেখতে দেখতে, তারা খৃস্টান জাহাজটিকে ধরে ফেলল। একদল লাফিয়ে উঠে পড়ল খৃস্টানদের জাহাজে। শুরু হলো হাতাহাতি যুদ্ধ। খৃস্টানরা মৃত্যুর পূর্বে শেষ কামড় বসালো মুসলিম সৈন্যদের ওপর। একসাথে কয়েকজন করে ছুটে এলো মুসলিম সৈন্যদের মোকাবেলা করার জন্য। প্রথম দিকে যারা জাহাজে চড়ল তাদের অনেকেই শহীদ হয়ে গেলো। তবে এ অবস্থা বেশীক্ষণ চললো না, আরো কিছু মুসলিম সৈন্য জাহাজে চড়তেই পাল্টে গেল দৃশ্যপট। একটু পরেই জাহাজ মুসলিম অধিকারে চলে এলো। কিন্তু এর জন্য যে ত্যাগ স্বীকার করলো মুসলিম জানবাজরা তার বর্ণনা দেয়া কোন কলমবাজের পক্ষে সম্ভব নয়। নিবেদিতপ্রাণ মুসলিম নৌসেনারা তাদের দেহের শেষ রক্তবিন্দু দ্বীনের জন্য নিঃশেষে ঢেলে দেয়ার আকাঙ্ক্ষা নিয়ে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছিল। তাদের সীমাহীন সাহস, বীরত্ব, নৈপুণ্য ও কোরবানী দেখে স্তম্ভিত হয়ে যাচ্ছিল খৃস্টান সৈন্যরা। একসাথে একাধিক জাহাজের সাথে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া, শত্রু জাহাজে অসংখ্য সৈন্য দেখার পরও তাতে লাফিয়ে চড়ার প্রতিযোগিতা, তীরের আঘাতে ঝাঁঝরা হয়েও সম্মুখে অগ্রসর হওয়া, এসব দেখে খৃস্টান সৈন্যদের মনোবল একেবারেই ভেঙ্গে গেল। উপায়ন্তর না দেখে খৃস্টানরা তাদের জাহাজ নিয়ে যুদ্ধের আওতা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার প্রাণপণ চেষ্টা শুরু করলো। খৃস্টান বাহিনীর মেরুদণ্ড ভেঙ্গে গিয়েছিল রাতের অতর্কিত আক্রমণেই। এতক্ষণ তারা যুদ্ধ করছিল অনেকটা নিরুপায় হয়ে, কিছুটা ক্রুশের সামনে দাঁড়িয়ে তাদের শপথের কথা স্বরণ করে। তা ছাড়া সকাল পর্যন্ত তারা আশা করছিল, সুলতান আইয়ুবী যত বড় যুদ্ধবাজই হোক, সামান্য সংখ্যক নৌশক্তি নিয়ে সে কতটুকুই বা তাদের ক্ষতি করতে পারবে! সকাল হলে দিনের আলোয় আইয়ুবীর জাহাজ একটা একটা গিলে খাবে তারা। ধ্বংস করে দেবে আইয়ুবীর ক্ষুদ্র নৌবহর। চিরতরে মিটিয়ে দেবে যুদ্ধের সাধ। কিন্তু সূর্যের তাপ যতই বাড়ল, ততই বাড়ল তাদের পালানোর আগ্রহ। দিনের শেষ প্রহরে তাদের অবস্থা এমন দাঁড়ালো যে, তাদের পালানোর আগ্রহও নিঃশেষ হয়ে গেল। ভীতি আর হতাশা গ্রাস করলো তাদের। গুটিকয় মুসলমানের হাতে তাদের বিপুল বিশাল শক্তির শোচনীয় পরাজয় ও ধ্বংস দেখে তাদের হাত-পা যে অসাড় হয়ে গেল। তাদের যে অল্প সংখ্যক সৈন্য সাগর তীরে অবতরণ করেছিল, তাদের অধিকাংশই আলেকজান্দ্রিয়ার রাতের যুদ্ধে নিহত হয়েছিল। তিন চার মাইল দূরে উত্তর-পূর্ব দিকের যুদ্ধেও পরাজয় বরণ করেছিল তারা। যারা তখনো নিহত হয়নি তারা সকলেই অস্ত্র সমর্পণ করে বন্দীত্বকে কবুল করে নিল। সুলতান আইয়ুবীর রিজার্ভ বাহিনীর দ্বিতীয় দলটি এখনও যুদ্ধে অংশই নেয়নি। সুলতান আইয়ুবীর নিয়োজিত সংবাদ বাহকরা সামগ্রিক যুদ্ধ পরিস্থিতির খবর নিয়মিত এবং সারাক্ষণই সুলতানকে অবহিত করে যাচ্ছে। এ সংবাদের ওপর ভিত্তি করেই তিনি তার যুদ্ধ পরিচালনা করে যাচ্ছেন। যখন তিনি বুঝলেন, খৃস্টান বাহিনীর দম ফুরিয়ে এসেছে, এখন তারা যে যুদ্ধ চালাচ্ছে তা ব্যর্থ প্রচেষ্টা ছাড়া আর কিছুই নয়, তখন তিনি দ্বিতীয় দলকে অনুমতি দিলেন যুদ্ধের ময়দানে ঝাপিয়ে পড়ার। ইমরানের সংবাদ অনুসারে বায়তুল মোকাদ্দাস থেকেও শত্রু সৈন্যের বহর আসার কথা। সে দিকে নূরুদ্দিন জঙ্গী ওঁৎ পেতে বসে আছেন। সুলতান আইয়ুবীও সে দিকে লক্ষ্য রেখে প্রতিরক্ষার জন্য সৈন্য সমাবেশ করলেন। যখন তিনি দেখলেন খৃস্টান নোইবাহিনী সমুদ্র পথে পালিয়ে যাচ্ছে, তখন তিনি তৃতীয় যে দলটিকে নিজের কমান্ডে রিজার্ভ রেখেছিলেন, তাদেরকে বললেন, ‘পলায়নপর খৃস্টান সৈন্যদের ধাওয়া করো এবং শত্রু সেনাদের ধরে আনো।’ সূর্য ডোবার শেষ কিরণ এস পড়ল সাগর জলে। রক্তলাল পানিতে কচুরিপানার মত ভেসে বেড়াচ্ছে লাশ আর লাশ। সুলতান আইয়ুবী তাকিয়ে দেখলেন, সাগরের যুদ্ধভূমি এখন ফাঁকা। খৃস্টান নৌবাহিনীর প্রায় সমস্ত জাহাজই জ্বলেপুড়ে শেষ হয়ে গেছে। সে সব জাহাজের অধিকাংশই ডুবে গেছে সাগর জলে। এখনও যেগুলো ডুবেনি তাও ডুবোডুবো করছে। পলায়নরত যে সব জাহাজ ধরে আনার জন্য পাঠানো হয়েছে একটু আগে, দূর থেকে সেগুলোর মাস্তুল ও বাদাম দেখা যাচ্ছে। ক্রমশ সেগুলোও দূরে চলে যাচ্ছে। যুদ্ধে লিপ্ত মুসলিম নৌবহরের যেগুলো ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচতে পেরেছে, সেগুলো ফিরে আসছে কূলে। সুলতান অনুমান করলেন, তার অর্ধেক নৌবহর মিশরের জন্য কোরবান হয়ে গেছে। জাহাজের ডিঙ্গি নৌকাগুলোও ফিরে আসছে সাগর তীরে। তাতে উপচে পড়া মুসলিম নোউবাহিনীর আহত ও ক্লান্ত সৈনিক। সুলতান আইয়ুবী উপকূলে দাঁড়িয়ে এ দৃশ্য দেখছিলেন। একটি নৌকা সুলতান যেখানে দাঁড়িয়েছিলেন তার কাছে এসে ভিড়লো। নৌকার ওপর একটি লাশ কাপড় দিয়ে ঢাকা। সুলতান আইয়ুবী উচ্চস্বরে জিজ্ঞেস করলেন, ‘এটা কার লাশ?’ ‘আমীরুল বাহার সা’দী বিন সাঈদীর!’ এক মাল্লা বললো। সুলতান আইয়ুবী দৌড়ে নৌকার কাছে ছুটে গেলেন। লাশের ওপর থেকে কাপড় সরিয়ে দেখলেন, এডমিরালের লাশ রক্তে রঞ্জিত। একজন নৌ অফিসার সুলতানের সামনে এসে দাঁড়ালেন। বিষাদমাখা কন্ঠে তিনি বললেন, ‘মাননীয় সুলতান, মুসলিম জাতির অভিভাবকদের জন্য আমীরুল বাহার এক অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত রেখে গেলেন। সংকটময় মুহূর্তে যে জাতির কর্ণধারগণ সবার আগে এগিয়ে যায় জীবন বিলিয়ে দিতে সে জাতির কোন সন্তান জাতির প্রয়োজনের চাইতে নিজের জীবনকে অধিক গুরুত্বপূর্ণ ভাবতে পারবে না কোনদিন। আমাদেরকে আমীরুল বাহার শিখিয়েছেন কিভাবে নিঃশঙ্কচিত্তে লড়াইয়ের ময়দানে ঝাঁপিয়ে পড়তে হয়। শত্রুদের এক জাহাজের কাছে গিয়ে তিনি নিজে সবার আগে শত্রু জাহাজে লাফিয়ে উঠে পড়লেন। তাকে জাহাজে লাফিয়ে পড়তে দেখে শত্রুদের প্রচণ্ড বাঁধা উপেক্ষা করে আমাদের বীর মুজাহিদগণ তাকে অনুসরণ করে। জাহাজে উঠেই তিনি অসীম বিক্রমে বেপরোয়া আক্রমণ চালান। খৃস্টানরা টিকতে না পেরে হাতিয়ার ফেলে সারেন্ডার করলে তিনি জাহাজে মুসলিম পতাকা উড়িয়ে দেন। এ সময় খৃস্টানদের চারটি জাহাজ আমাদের ঘেরাও করে ফেলে। আমরা আমীরুল বাহারের নেতৃত্বে শত্রুদের দু’টি জাহাজ পুরোপুরি ধ্বংস করে দিতে সক্ষম হই। কিন্তু অন্য দু’টি জাহাজ আমাদের ওপর গজব ঢেলে দেয়। তাদের সম্মিলিত আক্রমনে আমাদের জাহাজ ধ্বংস হয়ে যায়। আমীরুল বাহারসহ আমাদের অধিকাংশ সাথী শহীদ হয়ে যান। আমরা কয়েকজন কোন রকমে তার লাশ ডিঙি নায়ে তুলতে সমর্থ হই।’ সুলতান আইয়ুবী আমীরুল বাহারের লাশের হাত ধরে দাঁড়িয়ে ছিলেন। তিনি সেই হাতে চুমু দিয়ে বললেন, ‘বন্ধু আমার! ভাই আমার! তোমার জিম্মাদারী তুমি সর্বোচ্চ সাফল্যের সাথেই পালন করেছো। আমাদের এ বিজয়ের মহানায়ক তুমি, তুমিই সাগর বিজেতা আমীরুল বাহার। ইতিহাস বলবে, এ বিজয়ের কৃতিত্ব আমার। কিন্তু হে আল্লাহ, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, এ বিজয়ের সকল কৃতিত্ব এই সব শহীদ এবং শাহাদাতের জন্য পাগলপারা জিন্দাদীল মুজাহিদের।’ তিনি তৎক্ষণাৎ আদেশ দিলেন, যত নৌকা আছে সমস্ত নৌকা নিয়ে সাগর চষে বেড়াও। যেখানে যত শহীদের লাশ আছে খুঁজে বের করো। আদবের সাথে সেই সব লাশ নিয়ে এসো এই উপকূলে। কোন শহীদের লাশ যেন সমুদ্রে পড়ে না থাকে। সমস্ত শহীদদেরকে এই সমুদ্র তীরে দাফন করা হবে। সাগরের সুশীতল স্নিগ্ধ হাওয়া তাদের কবরগুলোকে চিরকাল যে সুশীতল করে রাখে।’ উপস্থিত মুজাহিদরা সাথে সাথে নৌকা নিয়ে ছড়িয়ে পড়ল সুবিশাল সমুদ্রবক্ষে। এ যুদ্ধে শহীদের সংখ্যা ছিল অসংখ্য। o বায়তুল মোকাদ্দাস থেকে খৃস্টান বাহিনীর যে বিরাট সৈন্যদল স্থল পথে মিশরের দিকে অগ্রসর হওয়ার কথা ছিল, অর্ধেক রাস্তা পেরিয়ে এলো তারা। খৃস্টান নৌবাহিনীর শোচনীয় পরাজয়ের কোন খবর তাদের কানে পৌঁছেনি। ফলে অহংকার ও আনন্দের দ্যুতি খেলা করছিল তাদের চেহারায়। এই স্থল বাহিনীর নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন খৃস্টান জগতে মশহুর যোদ্ধা বীর শ্রেষ্ঠ সম্রাট রিজনেল্ট। তিনি তার বাহিনীকে তিনটি দলে বিভক্ত করলেন। অগ্রাভিযানে পাঠালেন প্রথম দলকে। দ্বিতীয় দলকে মধ্যবর্তী বাহিনী হিসেবে অগ্রগামী বাহিনী থেকে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে অগ্রসর হওয়ার হুকুম দিলেন। তৃতীয় দলকে বললেন, ‘অনেক দূর দিয়ে মূল বাহিনীর ডান দিক হয়ে অগ্রসর হবে।’ তিন বাহিনীর জন্য তিনজন সেনাপতি নিয়োগ করলেন তিনি। প্রধান সেনাপতি হিসেবে এই সম্মিলিত বাহিনীর মূল নেতৃত্ব ও কমান্ড ছিল রিজনেল্টের হাতেই। তার মনে এ ধারণা বদ্ধমূল ছিল যে, তারা সুলতান আইয়ুবীকে সম্পূর্ণ তার অজ্ঞাতসারে এবং অতর্কিতে হামলা করে খুব সহজেই বিজয় ছিনিয়ে নিতে পারবে। তার চোখের সামনে ভাসছিল তখন কায়রো শহরের ছবি। সঙ্গে ছিল অসংখ্য ঘোড়া গাড়িতে পর্যাপ্ত খাদ্যশস্য। আলেকজান্দ্রিয়ার উত্তর-পূর্ব দিকে বেশ দূরে এক বিস্তীর্ণ বিরাণ এলাকা। এলাকাটিতে জনবসতি নেই বললেই চলে। অসংখ্য উঁচু নিচু টিলা, মাঠ ও কাঁটা ঝোপে পরিপূর্ণ এ মরুভুমির মাঝে ছোট ছোট মরুদ্যান। এ সব মরুদ্যানের পানির কোন অভাব ছিল না। রিজনেল্ট এমনি একটি মরুদ্যানের পাশে ক্যাম্প করলেন। অগ্রবাহিনীকে বললেন আরো এগিয়ে গিয়ে ক্যাম্প করতে। তার ডানের সৈন্য দলটি পরিকল্পনামাফিক বেশ পেছনে ও দূরে ছিল। তখন রাত দ্বি-প্রহর। রিজনেল্টের ক্যাম্পের সৈনিকরা ঘুমে বিভোর। হঠাত সেখানে শুরু হয়ে গেল কিয়ামতের বিভীষিকা। রজনেল্টের ঘুম ভেঙ্গে গেল সৈনিকদের চিৎকার ও চেঁচামেচিতে। ক্যাম্প জুড়ে কেন এত চিৎকার, চেঁচামেচি তিনি তার কিছুই বুঝতে পারলেন না। হঠাৎ এ কিয়ামত কোথেকে নাজিল হলো? আকাশ থেকে নামলো, নাকি তার সৈন্যরা বিদ্রোহ করেছে? এমনি অসংখ্য প্রশ্ন নিয়ে স্তম্ভিত হয়ে বসে রইলেন তিনি। ...............চলবে.............. (বি:দ্র: কেমন লাগলো জানাবেন)


এডিট ডিলিট প্রিন্ট করুন  অভিযোগ করুন     

গল্পটি পড়েছেন ৩১৪ জন


এ জাতীয় গল্প

→ ক্রুসেড-০৯: উপকূলে সংঘর্ষ - আসাদ বিন হাফিজ
→ উপকূলে সংঘর্ষ ৭ম পর্ব
→ উপকূলে সংঘর্ষ ৬ষ্ঠ পর্ব
→ উপকূলে সংঘর্ষ ৫ম পর্ব
→ উপকূলে সংঘর্ষ ৯ম পর্ব
→ উপকূলে সংঘর্ষ ১০ম পর্ব
→ উপকূলে সংঘর্ষ ১১শ পর্ব
→ উপকূলে সংঘর্ষ ৪র্থ পর্ব
→ উপকূলে সংঘর্ষ ৩য় পর্ব
→ উপকূলে সংঘর্ষ ২য় পর্ব
→ উপকূলে সংঘর্ষ ১ম পর্ব
→ উপকূলে সংঘর্ষ ১২শ পর্ব
→ উপকূলে সংঘর্ষ ১৩শ পর্ব
→ উপকূলে সংঘর্ষ ১৪শ পর্ব

গল্পটির রেটিং দিনঃ-

গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন

  • গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now
  • আর.এচ জাহেদ হাসান
    User ৬ বছর, ৬ মাস পুর্বে
    nice