বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা
আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ
X
গল্পঃ হারানো বন্ধু
লেখাঃ Muhammd Zobayer Islam
.
শেষ পর্ব
.
আমরা তখন ক্লাশ টেনে,প্রথম সাময়িক পরীক্ষার পর থেকে কল্পনা বেশি স্কুলে আসত না।বাড়িতে সমস্যা।বাড়িতে ঔর থাকা খুব প্রয়োজন ছিল।তাছাড়া স্কুল আসা যাওয়ার পথেও অনেকে ওকে ডিস্টার্ব করত।আমি যখন ওদের বাড়ি যেতাম,এসব ঝগড়া,কান্না শুনে ভালো লাগত না।তাই ওদের বাড়ি যাওয়া অনেক কমাই দিছিলাম।কিন্তু আমাদের সম্পর্কে সেরকম একটা প্রভাব পড়ে নি।
.
কল্পনার একটা চাচাত ভাই ছিল,ইমরান,খুবই খারাপ।সব সময় মাস্তান,বখাটে ছেলেদের নিয়ে ঘুরে বেড়াত।
.
একদিন, সন্ধ্যার একটু আগে আগে, আমি ওদের বাড়ি থেকে ফিরছিলাম।কলেজ গেটের একটু আগে রাস্তায় কয়েকটা ছেলে আমার সাইকেল আটকায়।কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই আমাকে মারতে শুরু করে।রড তালা,বেল্ট আর হকিস্টিক দিয়ে ওরা নির্মম ভাবে আমাকে মারে।মাথা ফেটে গিয়েছিল,পায়ের একটা হার ভেঙ্গে গিয়েছিল।শুধু অজ্ঞান হওয়ার আগে শুনতে পেয়েছিলাম ইমরাইন্যার হাসির শব্দ।সেদিন আমার কি দোষ ছিল,এখনো জানি না।
.
একমাসের মতো হাসপাতালে ছিলাম।কল্পনারা কেউ আমাকে দেখতে যায় নি।আমার খুব খারাপ লেগেছিল।মাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম ওদের কথা।মা বলেছিল ওরা ভালো আছে।দেখতে আসবে তোকে।
কিন্তু ওরা আসেনি আর ।
একমাস পর যখন সুস্থ হয়ে বাড়িতে ফিরলাম,জানতে পারলাম ওরা নাকি বাসা ছেড়ে কোথায় চলে গেছে কেউ জানে না।মোবাইল বন্ধ ! আমার অসুস্থতার কারনে আম্মু এ কথা আমাকে জানায় নি।ওদের বাসায় গিয়ে দেখি সব কিছু দখল করে আছে ওদের চাচারা।তারপর পরিচিত অনেক জায়গায় খুজেছি।অনেককে জিজ্ঞেস করেছি।কোথাও ওদের পাইনি।
.
আমি অনেক ভেঙ্গে পড়েছিলাম।সব সময় ওদের কথা ভাবতাম ।
কোথায় আছে কল্পনা ? নিরাদ কি এখনো দুষ্টামি করে ? আন্টিকে বুঝি আর ঝগড়া করতে হয় না ?ওরা ভালো আছে তো ? নাকি কল্পর চাচারা . . . . . . না না।ওরা ঠিক আছে।
.
ওদেরকে হারিয়ে আবার আগের মতো চুপচাপ ,শান্ত হয়ে যাই।কিছুই ভালো লাগে না।কারো সাথে বন্ধুত্ব করতেই ভয় লাগে।হারানোর ভয়।সে সময়ে আম্মু ছাড়া আমার কোন ভালো বন্ধু ছিল না।আম্মু সব সময় আমাকে সঙ্গ দিত।আমাকে বুঝাত।
বেশিরভাগ সময়ে ঘরের ভিতর থাকি।বই,সিনেমা ,ল্যাপটপ দিয়েই সময় কেটে যায়।ধীরে ধীরে অনেকটা স্বাভাবিক হয়।কিন্তু আগের স্মৃতি কখনোই মুছে যায় নি।
.
তারপর ঢাকা ভার্সিটিতে চান্স হয়ে গেল।ঢাকা চলে আসলাম।এখানেও মেস,ভার্সিটি আর লাইব্রেরিতে কেটে গেল দেড় বছরের মতো।ভালোভাবে গড়ে উঠে নি কোনো নতুন সম্পর্ক ,বন্ধুত্ব।মনে মনে খুঁজতে থাকি পুরাতন সেই মানুষগুলোকে।তারপর আজ,হঠাৎ করেই বুঝি অবসান হলো এতো দিনের অপেক্ষার . . . .নাস্তা খেতে খেতে কথা হচ্ছিল-
---আচ্ছা আন্টি ,সেদিন কি হয়েছিল যে সবাইকে ফেলে ,কাউকে কিছু না জানিয়েই চলে আসতে হলো ঢাকায় ?
---সব বলছি বাবা।শোন।
তোমাকে যেদিন ওরা মারল,সেদিনেই কল্পনার বড় চাচা এসে তিনদিনের ভিতর বাড়ি ছেড়ে চলে যেতে বলল।সে সময়ে সাহায্যের জন্য অনেকের সাথে যোগাযোগ করেছিলাম।কেউই এগিয়ে আসে নি।তাছাড়া ওদের হুমকেকে সবাই ভয় পায়,কেউ হয়ত কিছু করতে পারত না।চতুর্থ দিনে ওরা এসে আমার সাথে ঝগড়া বাধিয়ে দিল।ভাংচুর করল অনেক আসবাব পত্র।পরের দিনেই বাড়ি ছেড়ে না দিলে শেষে তো মেরে ফেলার ই হুমকি দিল।
সেদিন রাতেই কে যেন এসে কল্পনার দিকে এসিড ছুড়ে মারল।একটু দূর থেকে ছুড়েছিল বলে ওর মুখে পড়ে নি।গলা ও ঘাড়ের কিছু অংশ ঝলসে যায়।এই কাজ যে করেছিল মুখ না দেখলেও চিনতে পেরেছি কে সে . . .
আমি বুঝতে পারছিলাম,ওরা যেকোনো ভাবে আমাদের এখান থেকে তাড়াবেই।তাই তাড়াতাড়ি সিদ্ধান্ত নিলাম।কল্পনাকে ডাক্তার দেখিয়ে,প্রয়োজনীয় কিছু জিনিসপত্র,কাগজপত্র আর টাকা পয়সা নিয়ে সে রাতেই ঢাকা রওনা দিলাম।সাথে ঘুমন্ত নিরাদ আর অসুস্থ কল্পনা !
.
---হুমমম।তারপর ? (আমি)
---আসার পথে মোবাইলটাও হারিয়ে গেল।তাইতো আর যোগাযোগ করা সম্ভব হইনি,কারো সাথে।আন্টি বলেই যাচ্ছে -
ঢাকায় আমার এক পুরোনো বন্ধু থাকে।ওর বাসায় উঠলাম।কিছুদিনের মধ্যেই বুঝতে পারলাম বন্ধুর স্ত্রীর সাথে বনিবনা হবে না।উনাদের বাসা ছেড়ে দিয়ে উঠলাম এক মেসে,ছাত্রীদের।
আমি ওদের রান্না করে দিতাম,একটু আধটু পড়াও দেখাই দিতাম।এর বিনিময়ে আমাদের খাওয়াটা হতো।কিছুদিনের মধ্যে একটা চাকুরি পেয়ে গেলাম।স্থানীয় কিন্ডার গার্টেনে।এভাবেই অনেক কষ্টে বেচেঁ আছি।এখন অবশ্য নিজেদের ভাড়া করা ফ্লাটে থাকি।চাকুরিও পাল্টাইছি।
.
---এখন বুঝছো তো,কেন তোমাদেরকে জানাইনি ?ওরা যদি জানে যে আমরা ঢাকায় আছি তো এখানেও আসতে পারে।কারণ আমি বাসা,মার্কেট ছেড়ে দিলেও লিখে দেইনি।যাতে নিরাদরা একদিন তাদের পিতৃনিবাসে ফিরে যেতে পারে।
---হুমম,আন্টি ।ভালো করেছেন।
এতোক্ষণে চুপচাপ শুনছিলাম।প্রথম লক্ষ করলাম কল্প হিজাব পড়া নাই।ওর ঘাড়ে কালো একটা দাগ।
---বাবা,তুমি কাউকে আমাদের ঠিকানা দিয়ো না।আর সময় পেলে আমাদের এখানে এসো।
.
---আচ্ছা,আন্টি।আসার চেষ্টা করব।
---আচ্ছা,কল্প নিরাদ কই ?
---নিরাদ তো এখন স্কুলে।আসবে হয়ত একটু পর।
---হুমম।ও এবার কিসে পড়ছে ?
---সিক্সে।পিএসসিতে বৃত্তি পাইছে।
---ওউউ . . . গুড।
.
ওদের সাথে অনেক্ষণ কাটালাম,অনেক সুখ দুঃখের কথা হলো,গল্প আড্ডা হলো।মাঝখানে অনেক বড় ব্যাগ নিয়ে,ক্লান্ত চোখে নিরাদ আসল।স্কুল থেকে।অনেক বড় আর হ্যান্ডসাম হইছে।পকেট থেকে চকলেট বের করে দিলাম।ও অনিচ্ছা সত্ত্বেও নিল।আমাকে নাকি ভালো মতো চিনতেই পারছে না !
.
খাওয়া শেষ করে,বিকেলের দিকে যখন মেসে ফিরলাম,ততক্ষণে অনেক বড় একটা চিন্তা মাথা থেকে নেমে গেছে।অনেকদিন পর প্রাণ খুলে হাসছি।অনেক অপেক্ষার পর ফিরে পেয়েছি আমার হারানো বন্ধু,হারানো ফ্যামিলিকে . . . . .
.
.
.
গল্পঃহারানো বন্ধু
লেখঃ Muhammd Zobayer Islam (কাল্পনিক জুবাই)
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now
মুন্নি আক্তার♥
User ৬ বছর, ৭ মাস পুর্বেMuhammd Zobayer Islam
User ৬ বছর, ৭ মাস পুর্বে