বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা
আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ
X
নীলু দুই বার বিজ্ঞাপনটা পড়ল। বেশ একটা মজার বিজ্ঞাপন।
কেউ কি আসবেন?
আমি এক নিঃসঙ্গ মানুষ। স্ত্রীর মৃত্যুর পর একা জীবন-
যাপন করছি। সময় আর কাটে না। আমার দীর্ঘ দিবস ও দীর্ঘ
রজনীর নিঃসঙ্গতা কাটাতে কেউ আমাকে দুই লাইন লিখবেন?
জিপিও বক্স নাম্বার ৭৩
দৈনিক পত্রিকায় এ রকম বিজ্ঞাপন দেবার মানে কী? সাপ্তাহিক কাগজগুলিতে এই সব থাকে; ছেলেছোকরাদের কান্ড। এই লোকটি নিশ্চই ছেলেছোকরা নয়। বুড়ো-হাবড়াদের একজন।
‘বাবা, এইটা পড়েছ?’
নীলু জাহিদ সাহেবের হাতে কাগজটা গুঁজে দিল।
‘বাবা, এই বিজ্ঞাপনটা পড় তো!’
জাহিদ সাহেব নিজেও ভ্রু কুঞ্চিত করে দুই বার পড়লেন। তাঁর মুখের ভঙ্গি দেখে মনে হল বেশ বিরক্ত হয়েছেন।
‘পড়েছ?’
‘হুঁ, পড়লাম।
‘কী মনে হয় বাবা?’
‘কী আবার মনে হবে? কিছুই মনে হয় না। দেশটা রসাতলে যাচ্ছে। খবরের কাগজঅলারা এইসব ছাপে কীভাবে?’
নীলু হাসিমুখে বলল, ‘ছাপাবে না কেন?’
‘দেশটা বিলাত-আমেরিকা নয়, বুঝলি? আর ভালো করে পড়লেই বোঝা যায়, লোকটার একটা বদ মতলব আছে।’
‘কই, আমি তো বদ মতলব কিছু বুঝছি না।’
জাহিদ সাহেব গম্ভীর হয়ে বললেন, ‘দেখিস, তুই আবার চিঠি লিখে বসবি না।’
নীলু মুখ নিচু করে হাসল।
‘হাসছিস কেন?’
‘এমনি হাসছি।’
‘চিঠি লিখবার কথা ভাবছিস না তো মনে-মনে?’
‘উঁহু।’
নীলু মুখে উঁহু বললেও মনে-মনে ঠিক করে ফেলল, গুছিয়ে একটা চিঠি লিখবে। দেখা যাক না কী হয়। কী লেখে লোকটি।
রাতে ঘুমুতে যাওয়ার আগে সে সত্যি সত্যি একটা চিঠি লিখে ফেলল। মোটামুটি বেশ দীর্ঘ চিঠি।
জনাব,
আপনার বিজ্ঞাপনটি পড়লাম। লিখলাম কয়েক লাইন।
এতে কী আপনার নিঃসঙ্গতা কাটবে? আমার বয়স আঠার।
আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী। আমরা দু’ বোন। আমার
ছোট বোনটির নাম বিলু। সে হলিক্রস কলেজে পড়ে। আমরা
দু’ বোনই খুব সুন্দরী। এই যা, এটা আপনাকে লেখা ঠিক হল না।
তাই না? নাকি সুন্দরী মেয়েদের চিঠি পেলে আপনার নিঃসঙ্গতা দ্রুত কাটবে?
নীলু
চিঠিটি লিখেই তার মনে হলো যে, এ রকম লেখাটা ঠিক হচ্ছে না। চিঠির মধ্যে একটা বড় মিথ্যা আছে। সে সুন্দরী নয়। বিলুর জন্য কথাটা ঠিক, তার জন্যে নয়। নীলু ছোট্ট একটি নিঃশ্বাস ফেলে দ্বিতীয় চিঠিটি লিখল।
জনাব,
আমার নাম নীলু। আমার বয়স কুড়ি। আপনার নিঃসঙ্গতা
কাটাবার জন্যে আপনাকে লিখছি। কিন্তু চিঠিতে কি কারো
নিঃসঙ্গতা কাটে? আপনার বয়স কত, এটা দয়া করে জানাবেন।
নীলু
দ্বিতীয় চিঠিটিও তার পছন্দ হলো না। তার মনে হলো, সে যেন কিছুতেই গুছিয়ে আসল জিনিসটি লিখতে পারছে না। রাতে শুয়ে-শুয়ে তার মনে হলো, হঠাৎ করে সে এত ব্যস্ত হয়ে পড়েছে কেন? চিঠি লেখারই-বা কী দরকার?
সে নিজেও কি খুব নিঃসঙ্গ? হয়তো-বা। এ বাড়িতে আর দুটি মাত্র প্রাণী। বিলু আর বাবা। বাবা দিন-রাত নিজের ঘরেই থাকেন। মাসের প্রথম দিকের কয়েকটা দিন বাড়িভাড়ার টাকা আদায়ের জন্যে অল্প যা নড়াচড় করেন। তারপর আবার নিজের ঘরেই বন্দি। আর বিলু তো আছে তার অসংখ্য বন্ধুবান্ধব নিয়ে। শুধু মেয়ে বন্ধু নয়, তার আবার অনেক ছেলেবন্ধুও আছে।
মহানন্দে আছে বিলু। তবে সে একটু বাড়াবাড়ি করছে। কাল তার কাছে একটি ছেলে এসেছিল, সে রাত আটটা পর্যন্ত ছিল। এ সব ভালো নয। নীলু উঁকি দিয়ে দেখেছে, ছেলেটি ফরফর করে সিগারেট টানছে। হাত নেড়ে-নেড়ে কথা বলছে। আর বীলু হাসতে-হাসতে ভেঙে পড়ছে। ভাত খাওয়ার সময় নীলু কিছু বলবে না বলবে না করেও বলল, ‘ছেলেটা কে রে?’
‘কোন ছেলে?’
‘ঐ যে রাত আটটা পর্যন্ত গল্প করলি?’
‘ও, সে তো রুবির ভাই! মহাচালবাজ। নিজেকে খুব বু্দ্িধমান ভাবে, আসলে মহা গাধা।’
বলতে বলতে খিলখিল করে হাসে বিলু।
‘মহা গাধা হলে এতক্ষণ বসিয়ে রাখলি কেন?’
‘যেতে চাচ্ছিল না তো কী করব?’
বলতে বলতে বীলু আবার হাসল। বীলু এমন মেয়ে, যার উপর কখনো রাগ করা যায় না। নীলু কখনো রাগ করতে পারে না। মাঝে-মাঝে বাবা দুই-একটা কড়া কথা বলেন। তখন বিলু রাগ করে খাওয়া বন্ধ করে দেয়। সে এক মহা যন্ত্রনা! একবার রাগ করে সে পুরো দুদিন দরজা বন্ধ করে বসেছিল। কত সাধাসাধি, কত অনুরোধ! শেষ পর্যন্ত মগবাজারের ছোট মামাকে আনতে হলো। ছোটমামা বিলুর খাতিরের মানুষ। তাঁর সব কথা সে শোনে। তিনি এসে যখন বললেন, ‘দরজা না খুললে মা আমি কিন্তু আর আসব না। এই আমার শেষ আসা-’ তখন দরজা খুলল। এ রকম জেদী মেয়ে।
নীলুর কোনো জেদ-টেদ নেই। কালো এবং অসুন্দরী মেয়েদের জে কখনো থাকে না। এদের জীবন কাটাতে হয় একাকী। নীলু বাতি নিভিয়ে ঘুমুতে চেষ্টা করল। ছোটবেলায় বাতি নেভানোর সঙ্গে সঙ্গে তার ঘুম আসত, এখন আর আসে না । অনেক রাত পর্যন্ত এপাশ-ওপাশ করতে হয়। পাশের খাটে টেবিল-ল্যাম্প জ্বালিয়ে চোখের ওপর একটা গল্পের বই ধরে আছে বিলু। অনেক রাত পর্যন্ত সে পড়বে। পড়তে-পড়তে হঠাৎ এক সময় ঘুমিয়ে পড়বে, বাতি নেভাবে না। মশারি ফেলবে না। নীলুকেই উঠে এসে বাতি নেভাতে হবে, মশারি ফেলতে হবে।
‘বিলু ঘুমো, বাতি নেভা।’
‘একটু পরে ঘুমাব।’
‘কী পড়ছিস?’
‘শীর্ষেন্দুর একটা বই। দারুন!’
‘দিনে পড়িস। আলো চোখে লাগছে।’
‘দিনে আমার সময় কোথায়? তুমি ঘুমাও-না!’
নীলু ঘুমাতে পারল না। শুয়ে-শুয়ে তাকিয়ে রইল বিলুর দিকে। দিনে-দিনে কী যে সুন্দর হচ্ছে মেয়েটা! একই বাবা-মার দুই মেয়ে-একজন এত সুন্দর আর অন্যজন অসুন্দর কেন? নীলু ছোট্ট একটা নিঃশ্বাস ফেলল।
‘আপা?’
‘কী?’
‘দারুন বই, তুমি পড়ে দেখ।’
‘প্রেমের?’
‘হ্যাঁ। প্রেমের হলেও খুব সিরিয়াস জিনিস। দারুণ!’
‘তাই নাকি?’
‘হুঁ, একজন খুব রুপবতী মেয়ের গল্প।’
‘তোর মতো একজন?’
‘দুর, আমি সুন্দর নাকি? আমাদের তিনতলার ভাড়াটের বৌটির মতো বলতে পার। রানু নাম, দেখেছ।’
‘না তো, খুব সুন্দরী?’
‘ওরে ব্বাপ, দারুণ! হেমা মালিনীর চেয়েও সুন্দরী।’
‘তুই মেয়েটিকে একবার আসতে বলিস তো আমাদের বাড়িতে! দেখব।’
‘বলব। তুমি নিজে একবার গেলেই পার। মেয়েটা ভালো। কথাবার্তায় খুব ভদ্র। ওর বরকে দেখেছ, আনিস সাহেব?’
‘হুঁ।
‘ঐ লোকটা বোকা ধরণের। বোকার মতো কথাবার্তা। আমাকে আপনি-আপনি করে বলে।
‘কলেজে পড়িস, তোকে আপনি বলবে না?’
‘ফ্রক-পরা কাউকে এ রকম এক জন বুড়ো মানুষ আপনি বলবে নাকি?’
‘বুড়ো নাকি?’
‘চল্লিশের ওপর বয়স হবে।’
‘মেয়েটার বয়স কত হবে?’
‘খুব কম। চৌদ-পনের বছর হবে।’
বিলু বাতি নিভিয়ে দিল এবং নিমিষেই ঘুমিয়ে পড়ল। নীলু জেগে রইল অনেক রাত পর্যন্ত। কিছুতেই তার ঘুম এল না। ইদানীং তার ঘুম খুব কমে গেছে। রোজই মাঝরাত না হওয়া অবধি ঘুম আসে না।
রানু চুলায় ভাত চড়িয়ে বসার ঘরে এসে দেখে বাড়িঅলার বড় মেয়েটি ঘরের ভেতর।
‘না জিজ্ঞেস করেই ঢুকে পড়লাম ভাই। আমার নাম নীলু।
‘আসুন, আসুন। আপনাকে আমি চিনি। আপনি বাড়িঅলার বড় মেয়ে। আজ ইউনিভার্সিটিতে যান নি?’
‘উঁহু। আজ ক্লাস নেই। আপনার সঙ্গে গল্প করতে এলাম। কী করছিলেন?’
‘ভাত রান্না করছি।’
‘চলুন, রান্নাঘরে গিয়ে বসি। বিলুর কাছ থেকে আপনার খুব প্রশংসা শুনি।
বিলুর ধারণা, আপনি হচ্ছেন হেমা মালিনী।
রানু অবাক হয়ে বলল, ‘হেমা মালিনীটি কে?’
‘আছে একজন। সিনেমা করে। সবাই বলে খুব সুন্দর। আমার কাছে সুন্দর লাগে না। চেহারাটা অহঙ্কারী।’
রানু মুখ টিপে হাসতে-হাসতে বলল, ‘সুন্দরী মেয়েরা তো অহঙ্কারীই হয়।’
‘আপনিও অহঙ্কারী?’
রানু হাসতে হাসতে বলল, ‘হ্যাঁ। কিন্তু আমাকে আপনি আপনি বলতে পারবেন না। তুমি করে বলতে হবে।
নীলু লক্ষ্য করল মেয়েটি বেশ রোগা কিন্তু সত্যিই রুপসী। সচরাচর দেখা যায় না। চোখ দুটি কপালের দিকে ওঠান বলে-দেবী প্রতিমার চোখের মতো লাগে। সমগ্র চেহারায় খুব সুক্ষ্ম হলেও কোথাও যেন একটি মূর্তি-মূর্তি ভাব আছে।
‘কী দেখছেন?’
‘তোমাকে দেখছি ভাই। তোমার চেহারায় একটা মূর্তি-মূর্তি ভাব আছে।’
রানু মুখ কালো করে ফেলল। নীলু অবাক হয়ে বলল, ‘ও কী! তুমি মনে হয় মন-খারাপ করলে?’
‘না, মন-খারাপ করব কেন?’
‘কিন্তু মুখ কালো করলে কেন? আমি কিন্তু কমপ্লিমেন্ট হিসেবে তোমাকে বলেছি। তোমার মতো সুন্দরী মেয়ে আমি খুব বেশি দেখি নি। তবে এক বার একটি বিহারি মেয়েকে দেখেছিলাম। আমার ছোটমামার বিয়েতে। অবশ্যি সে মেয়েটি তোমার মতো রোগা ছিল না। ওর স্বাস’্য বেশ ভালো ছিল।
‘আপনি কি একটু চা খাবেন?’
‘তুমি আমাকে আপনি করে বলছ কেন? তোমার কি মনে হয় আমার বয়স অনেক বেশি?’
‘না, তা মনে হয় না।’
‘তুমিও আমাকে তুমি বলবে। আর তোমার যদি আপত্তি না থাকে, তাহলে আমি মাঝে-মাঝে তোমার কাছে আসব।’
রানু চায়ের কাপ সাজাতে সাজাতে মৃদু স্বরে বলল, ‘আমাকে মূতি-মূর্তি লাগে, এটা বললে কেন?
নীলু অবাক হয়ে বলল, ‘এমনি বলেছি! টানাটানা চোখ তো, সে জন্যে। তুমি দেখি ভাই রাগ করেছ।’
‘একটা কারণ আছে নীলু। তোমাকে এক দিন আমি সব বলব, তাহলেই বুঝবে। চায়ে কতটুকু চিনি খাও?’
‘তিন চামচ।’
নীলু অনেকক্ষণ বসল, কিন্তু কথাবার্তা আর তেমন জমল না। রানু কেমন যেন অন্যমনস্ক হয়ে পড়েছে। কিছুতেই মন লাগাতে পারছে না। সহজ হতে পারছে না। নীলু বেশ কয়েক বার অন্য প্রসঙ্গ আনতে চেষ্টা করল। ভাসা-ভাসা জবাব দিল রানু। এবং একসময় হালকা স্বরে বলল, ‘আমার একটা অসুখ আছে নীলু।’
‘কী অসুখ?’
‘মাঝে-মাঝে আমি ভয় পাই।’
‘ভয় পাই মানে?’
রানু মাথা নিচু করে বলল, ‘ছোট বেলায় একবার নদীতে গোসল করতে গিয়েছিলাম, তারপর থেকে এরকম হয়েছে।’
‘কী হয়েছে?’
রানু জবাব দিল না।
‘বল, কী হয়েছে?’
‘অন্য একদিন বলব। আজ তুমি তোমার কথা বল।’
‘আমার তো বলার মতো তেমন কথা নেই।’
‘তোমার বন্ধুদের কথা বল।’
‘আমার তেমন কোনো বন্ধুও নেই। আমি বলতে গেলে একা-একা থাকি। অসুন্দরী মেয়েদের বন্ধুটন্ধু থাকে না।
‘রঙ খারাপ হলে মানুষ অসুন্দর হয় না নীলু।’
‘আমি নিজে কী, সেটা আমি ভালোই জানি।’
নীলু উঠে পড়ল। রানু বলল, ‘আবার আসবে তো?’
‘আসব। তুমি তোমার ভয়ের কথাটথা কি বলছিলে, সেই সব বলবে।’
‘বলব।’
নীলু পাঠাবে না পাঠাবে না করেও চিঠিটি পাঠিয়ে দিল, কিন্তু তার পরপরই দুশ্চিন্তার সীমা রইল না। কে জানে, বুড়ো-হাবরা লোকটি একদিন হয়তো বাসায় এসে হাজির হবে। দারুণ লজ্জার ব্যাপার হবে সেটা। নিতান্তই ছেলেমানুষি করা হয়েছে। চা-পাঁচদিন নীলুর খুব খারাপ কাটল। দারুণ অস্বস্তি। বুড়োমতো কোনো মানুষকে আসতে দেখলেই চমকে উঠত, এটিই সেই লোক নাকি? যদি সত্যি-সত্যি কেউ এসে পড়ে, তাহলে সে ভেবে রেখেছে বলবে-এই চিঠি তো আমার নয়। অন্য কেউ তামাশা করে এই ঠিকানা দিয়েছে। আমি এ রকম অজানা-অচেনা কাউকে চিঠি লিখি না।
কেউ অবশ্যি এল না। দেখতে-দেখতে এক সপ্তাহ কেটে গেল। চিঠিরও কোনো উত্তর নেই। লোকটি হয়তো চিঠি পায় নি। ডাকবিভাগের কল্যানে আজকাল তো বেশির ভাগ চিঠিই প্রাপকের হাতে পৌছায় না। এতে ক্ষতি যেমন হয়, লাভও তেমনি হয়। কিংবা হয়তো এমন হয়েছে, ঐ লোকটি অসংখ্য চিঠি পেয়ে পছন্দমতো চিঠিগুলোর উত্তর দিয়েছে। নীলুর তিন লাইনের চিঠি তার পছন্দ হয় নি। সে হয়তো লম্বা-লম্বা চমৎকার চিঠি পেয়েছে। ইনিয়ে-বিনিয়ে অনেক কিছু লেখা সব চিঠিতে।
দশ দিনের মাথায় নীলুর কাছে চিঠি এসে পড়ল। খুবই দামী একটা খামে চমৎকার প্যাডের কাগজে চিঠি। গোটা-গোটা হাতের লেখা। কালির রঙ ঘন কালো। মাখন-রাঙা সে কাগজে লেখাগুলো মুক্তার মতো ফুটে আছে। এত সুন্দর হাতের লেখাও মানুষের হয়! চিঠিটি খুবই সংক্ষিপ্ত।
কল্যাণীয়াসু
তোমার চমৎকার চিঠি গভীর আগ্রহ নিয়ে পড়েছি। একজন ব্যথিত
মানুষের আবেদনে তুমি সাড়া দিয়েছ-তোমাকে ধন্যবাদ। খুব সামান্য
একটি উপহার পাঠালাম। প্লীজ, নাও।
আহমেদ সাবেত
উপহারটি সামান্য নয়। অত্যন্ত দামী একটি পিওর পারফিউমের শিশি। নীলু ভেবে পেল না, এই লোকটি কি সবাইকে এ রকম একটি উপহার পাঠিয়েছে? যারাই চিঠির জবাব দিয়েছে তারাই পেয়েছে? কিন্তু তাও কি সম্ভব?
নাকি নীলু একাই চিঠির জবাব দিয়েছে? নীলুর বড় লজ্জা করতে লাগল। সে পারফিউমের শিশিটি লুকিয়ে রাখল এবং খুব চেষ্টা করতে লাগল সমস্ত ব্যাপার ভুলে যেতে। সে চিঠিটি কুচিকুচি করে ছিঁড়ে ফেলে দিল জানালা দিয়ে। কেন এমন একটা বাজে ঝামেলায় জড়াল?
কিন্তু দিন সাতেক পর নীল আবার একটি চিঠি লিখল। একটি বেশ দীর্ঘ চিঠি। সেখানে শেষের দিকে লেখা – আপনি কে, কী করেন-কিছুই তো জানা নি। আপনার বিজ্ঞাপনটিও দেখছি না। তার মানে কি এই যে আপনার নিঃসঙ্গতা এখন দূর হয়েছে?
নীলু বেশ কিছু দিন অপেক্ষা করল চিঠির জবাবের জন্যে, কিন্তু কোনো জবাব এল না। কেন জানি নীলুর বেশ মন-খারাপ হল। আরেকটি চিঠি লেখার ইচ্ছা হতে লাগল, কিন্তু তাও কি হয়? একা-একা সে শুধু চিঠি লিখবে? তার এত কী পড়েছে?
চলবে.......
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now