বাংলা গল্প পড়ার অন্যতম ওয়েবসাইট - গল্প পড়ুন এবং গল্প বলুন

বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা

আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ

মিঃ রহমান

"রোম্যান্টিক" বিভাগে গল্পটি দিয়েছেন গল্পের ঝুরিয়ান রিয়েন সরকার (০ পয়েন্ট)

X মিঃ রহমান আজ বেশ দেরি করেই ঘুম থেকে উঠলেন। আগে কখনো এতো দেরি করে ঘুম থেকে উঠেন নি।আজ ই প্রথম। ঘুম ঘুম চোখে উনি মাথা ঘুরিয়ে ঘড়ির দিকে ঝাপসা চোখে তাকাতেই সব ঘুম উড়ে গেলো উনার।অনেক অবাক হয়ে গেলেন। দুপুর ২ টা বাজে।কি আশ্চর্য! এতো দেরি হওয়ার মানে কি! আজ উনার ক্লাসে পরীক্ষা ছিলো। নিতে পারলেন না জরুরী পরীক্ষা টা। ধ্যাত। কখনো এমন লেট হয়না মিঃ রহমানের। উনি অনেক বিরক্তের সাথে খাট থেকে নামলেন। এমন সময় হঠাৎ উনার চোখ চলে গেলো ডাইনিং রুমের দিকে।ডাইনিং রুমের কাঠের চেয়ারে বসে উনার স্ত্রী কি যেনো লিখছে। পড়নে লাল টুকটুকে শাড়ি।এ দৃশ্য দেখে উনার মাথা ব্যথা করা শুরু করলো! কিভাবে এটা সম্ভব! নিশ্চয় উনি ভুল দেখেছেন। কারণ উনার স্ত্রী তো ৫ বছর আগে মারা গেছেন! উনি ই তো কতোটা প্ল্যান করে হত্যা করেছিলেন উনার সো কলড স্ত্রীকে। অথচ আজ এভাবে তার ই বাড়িতে বসে আছে কেন!! "আমি ভুল দেখছি, মরা মানুষ কি এভাবে বসে থাকতে পারে নাকি,আজব!" উনি নিজেকে শান্তনা দিতে লাগলেন বারবার মনে মনে। হঠাৎ করে উনার চোখ গেলো ড্রেসিংটেবিল এর দিকে। পুরো ড্রেসিংটেবিলটা জুড়ে বিভিন্ন আকার ও আয়তনের অসংখ্য পারফিউম রাখা!! অনিন্দিতা তো আগে এভাবেই বিভিন্ন ব্যান্ডের পারফিউম কিনে কিনে সাজিয়ে রাখতো। ওর অনেক শখ ছিলো এটার। এ নিয়ে কতো ব্যঙ্গ বিদ্রুপ করেছিলেন উনি!আজ ও সেগুলো এক ই ভাবে সজ্জিত আছে ড্রেসিংটেবিল এ। অথচ ১২ ঘন্টা আগেও টেবিলটা প্রায় খালিই ছিলো! মিঃরহমান খাটে বসে পড়লেন। মাথা ঘুরতে লাগলো উনার। আবার একবার তাকালেন ডাইনিং রুমের দিকে। এখন আবার অনিন্দিতা খাবার বাড়ছে টেবিলে বসে। মুখ বিষন্ন। উনি তাকিয়েই থাকলেন। হঠাৎ মিঃরহমান কিছু বুঝে উঠার আগেই অনিন্দিতা এবার সোজাসুজি মিঃরহমানের দিকে তাকালো। মিঃ রহমান ভয়ে জমে গেলেন। হঠাৎ উনার মাথায় প্রশ্ন জাগলো আচ্ছা, অনিন্দিতা জানে নাকি যে তার স্বামী ই তাকে হত্যা করেছিলো! অনিন্দিতা মিঃরহমানের দিকে এগিয়ে আসতে লাগলো। নুপুর পরাতে ঝুমুর ঝুমুর আওয়াজ হচ্ছে। কানে ভীষণ লাগছে আওয়াজ টা। অনিন্দিতা রুমের সামনে এসে মিঃরহমান কে বললো "এই খাবার রাখা আছে, খেয়ে নিয়ো। " এই বলে আবার এক আওয়াজ তুলে ড্রয়িংরুম এর দিকে চলে গেলো। এ আওয়াজ বরাবরের মতোই মিঃরহমানের কাছে খারাপ লাগলো। উনি কি করবেন কিছুই বুঝতে পারছেন না। কিন্তু একটা জিনিস বুঝলেন। উনার কপালে আজ খারাবি আছে। অনিন্দিতা নিশ্চয়ই জেনে ফেলেছে যে মি ঃররহমান ই খুন করেছে অনিন্দিতা কে। তাই প্রতিশোধ নিতে আবার আসছে!উনি ভাবতে লাগলেন ।হঠাৎ করে উনার মাথায় এক বুদ্ধি আসলো। উনি তাড়াতাড়ি নিজের মোবাইল খুঁজতে লাগলেন। প্রতিদিন ঘুমানোর সময় যেখানে মোবাইল রাখেন সেখানে নেই। কি ব্যাপার। কই গেলো! উনি হন্য হয়ে খুঁজতে লাগলেন! বালিশ উঠিয়ে দেখেন সেটার নিচে মোবাইল।কিভাবে সেখানে গেলো এ কথা পরে ভাবা যাবে। উনি তাড়াতাড়ি মোবাইলের কনটাক্ট লিস্টে গেলেন। সেখানে গিয়ে বোকা বনে গেলেন। পুরো কন্টাক্ট লিস্ট শূন্য! কোনো নাম্বার মনে নেই তার। উনি ভয়ে এই ঠান্ডার মাঝেও ঘামতে লাগলেন তিনি। বুঝলেন এক্ষুনি বের হতে হবে বাড়ির থেকে। নয়তো উনার কপালে দুঃখ আছে!উনি প্রায় দৌড়ে দরজার দিকে গেলেন। দরজার ছিটকিনি খুলে নব ঘুরালেন। খুললো না আবার ঘুরালেন। কি আজব খুলছেনা কেন! উনি বারবার ঘুরাতে লাগলেন। এমন সময় উনার স্ত্রী পেছন থেকে বললেন "এখনো খেতে বসোনি! আমি কতো কষ্ট করে বানিয়েছি।তোমার প্রিয় বিরিয়ানী!" মিঃরহমান ওর দিকে তাকিয়ে আতংক তে জমে গেলেন! বাধ্য হয়ে নব ছেড়ে দিয়ে স্ত্রীর পিছু পিছু গেলেন। ঘামতে লাগলেন। মাথা চিনচিন করে ব্যথা করছে। উনি একটা চেয়ারে বসে গেলেন। অনিন্দিতা উনার সামনের চেয়ারে বসে প্লেটে খাবার বেড়ে দিতে লাগলো। মিঃরহমান অনিন্দিতার দিকে তাকিয়ে থাকলেন। অনিন্দিতার মুখ ভাবলেশহীন। এক মনে খাবার বেড়ে দিচ্ছে। আগের মতোই সুন্দরী। মিঃরহমান প্লেটের দিকে তাকালেন।উনার প্রিয় বিরিয়ানী। উনি খাবেন কিনা বুঝতে পারলেন না। তবু ও মুখে দিলেন। পুরো অমৃত্যের স্বাদ! মিঃরহমান খেতে লাগলেন।এমন সময় অনিন্দিতা চুড়ি পড়া হাত দিয়ে মিঃরহমানের হাত ধরে বলে উঠলো "আচ্ছা আসাদ,যা করেছিলে তুমি, তার জন্য কি কখনো অনুতপ্ত হওনা?!" মিঃ রহমান অনিন্দিতার এ কথা শুনে থমকে গেলেন। সরাসরি তাকাতেও পারছেন না স্ত্রীর দিকে। অনুভব করলেন, উনার হাত কাঁপছে ভয়ে। অনিন্দিতা মিঃরহমানের দিকে তাকিয়ে আবারো বললো "তাড়াতাড়ি খাবার শেষ করো তো। কাজ আছে।" মিঃরহমান এর গলা দিয়ে অনেক চেষ্টার পর কিছুই নামছেনা। বারবার পানি পান করছেন। অনিন্দিতা- "বুঝলাম, তুমি খেতে আর পারবেনা। আচ্ছা হাত ধুয়ে রুমে আসো।" এই বলে অনিন্দিতা ঝুমুর ঝুমুর আওয়াজ তুলে রুমের দিকে চলে গেলো। মিঃ রহমান তাড়াতাড়ি বেসিনে গিয়ে হাত ধুয়ে তারপর আবারো মেইন দরজা খোলার চেষ্টা করলেন।খুলছেনা! যতোই দরজার নব ঘোরান, কিন্তু শক্ত করে এটে বসেছে যেনো। অবশেষে হাল ছেড়ে দিলেন উনি। ঠিক করলেন, উনি উনার স্ত্রীর কাছে মাফ চাইবেন। অনিন্দিতার মন বরফের মতো, একটুতেই গলে যায়। মিঃ রহমান ধীর পায়ে নিজের রুমে এসে ঢুকলেন। কি ব্যাপার! রুম পুরো অন্ধকার কেনো! উনি হাতড়ে হাতড়ে সুইচ খুঁজে লাইট জ্বালানোর চেষ্টা করলেন।কিন্তু জ্বললোনা। আবছা নীল আলো রুমে। মিঃ রহমানের শিরদাঁড়া বেয়ে ঠান্ডা বাতাসের স্রোত যেনো বয়ে চললো। কতোটা অশুভ লাগছে এই রুমটাকে।! অথচ এই বেডরুমে তিনি কতো সময় কাটিয়েছেন! কখনো তো এমন লাগেনি! অনিন্দিতা আসলেই একটা অশুভ মেয়ে! গ্রাম্য! হঠাৎ মনে প্রশ্ন উকি দিলো "এখন তো আর মানুষ না ও! আত্মা! আগের মতো তো আর নাই ও!" এমন সময় মিঃরহমানের সকল ভাবনার ছেদ পড়ে ঘড়ি ঢং ঢং করে বেজে উঠলো। উনি চমকে গেলেন। কি ব্যাপার! কি হচ্ছে এসব!! উনি দৌড়ে রুমের দরজার কাছে আসলেন। দরজা বন্ধ! অথচ দরজা তো একটু আগেই খোলা ছিলো! এমন সময় মিঃ রহমানের সামনে হঠাৎ করে ছবির মতো দৃশ্য ভেসে উঠলো! সিনেমা হলে যেভাবে ছবি ভেসে ওঠে সেভাবে! এই দৃশ্য তো অনেক চেনা মিঃ রহমানের! সেখানে দেখাচ্ছে মিঃ রহমান স্ত্রীর শরবতে বিশেষ ভাবে আনা বিষ মিশিয়ে দিচ্ছেন। চামচ দিয়ে নাড়ছেন আর হাসছেন। এরপর রুমে আসলেন, অনিন্দিতাকে জড়িয়ে ধরে বলতে লাগলেন "আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি, বিশ্বাস করো। এতোদিন অনেক খারাপ ব্যবহার করেছি আমি!" এই পর্যন্ত চলেই হঠাৎ সব উধাও হয়ে গেলো! মিঃ রহমান এর সামনে আবার কবরের নিস্তব্ধতা নেমে এলো। উনি ঘেমে একাকার হয়ে গিয়েছেন! জীবনে কখনো এতো ভয় পাননি উনি! অথচ আজ! এমন সময় নুপুরের ঝুমুর ঝুমুর শব্দ ভেসে আসতে লাগলো। আস্তে আস্তে যেনো এগিয়ে আসছে শব্দ টা। এই আধারে ভীষণ ভয়ানক শোনাচ্ছে শব্দ টা। অনিন্দিতা কে আবছা ভাবে দেখা যাচ্ছে। মুখ বড়ই বিষণ্ণ। হাতে একটা ডায়রী। আবছা আলোতে মিঃরহমানের দিকে অনিন্দিতা কম্পিত হাতে ডায়রী খানা এগিয়ে দিলো। মিঃরহমান অবাক হয়ে ডায়রী হাতে নিলেন। "পড়ো!" স্ত্রীর গম্ভীর কণ্ঠে চমকে উঠলেন মিঃ রহমান।এখন তো উনিয়ার আগের মতও ধমক দিয়ে অনিন্দিতা কে কথা শুনাতে পারবেনা! তাই আস্তেকরে ডায়রীটা খুললেন! কি আশ্চর্য! এই আবছা আলোতেও মুক্তোর মতো লেখাগুলো যেনো জ্বলজ্বল করছে! সবগুলো অক্ষর একদম স্পষ্ট! মিঃরহমান পড়া শুরু করলেন, "১-২-২০১১ আজ আমার বিয়ের দ্বিতীয় সপ্তাহ। আমি খুব সাধারণ এক পরিবারে বড় হয়েছি। এ পরিবারে বাবা খুব কষ্ট করে টাকা রোজগার করতেন, ভীষণ অভাবের সংসার ছিলো আমাদের। কিন্তু তবুও আজ বাবা আমার বিয়ে নামকরা প্রফেসর মিঃ আসাদ রহমান এর সাথে দিয়েছেন। আমার চাইতেও যেনো আমার বাবা বেশী খুশী ছিলেন! এ বিয়ে দেয়ার জন্য উনি উনার একমাত্র সম্বল সাইকেল টাও বিক্রি করে দিয়েছেন। এ সাইকেল চালিয়েই দূরে আসা যাওয়া করতেন। আমি বাবার উপর এ কারণে ভীষণ রাগ ছিলাম । বাবা আমাকে পরে অনেক বুঝান। আমি বাবাকে বলেছি যে আমি টাকা জমিয়ে একটা সাইকেন কিনে দিবো। বাবা মৃদু হেসে রাজি হয়েছিলেন! কিন্তু কেনো যেনো বিয়ে হওয়ার পর মনে হচ্ছে আসাদ (মিঃ রহমান) আমার প্রতি রাগ! আমাকে পছন্দ করেনা! অবশ্য না করাটাই স্বাভাবিক। আমি এক সাধারণ গরিবের মেয়ে। গ্রামের। হয়তো উনি আমার চাইতেও আরো স্মার্ট সুন্দরী মেয়ে ডিজার্ভ করতো। আমার সাথে বিয়ে হওয়াতে তার মন খারাপ হয়েছে।! তার জীবন নষ্ট হয়েছে! কিন্তু আমার শ্বশুড় শ্বাশুড়ি বড়ই পছন্দ করেন আমাকে! আমি যেনো আমার আরেক মা বাবাকে পেয়ে গিয়েছিলাম এ বাড়িতে এসে!" . । । ২৩-৬-২০১১ এখন সময় রাত ৩-২০ বাজে। সবাই ঘুমাচ্ছে। শুধু আমি ই জেগে! আসলে আমাকে আজকের ঘটনাটা কিছুতেই ঘুমাতে দিচ্ছে না! যতবার ই মনে পড়ছে, কান্না পাচ্ছে ভীষণ! আমি আমার জমানো সব গুলো টাকা দিয়ে আসাদের জন্য অনেক শখ করে এক পাঞ্জাবী কিনেছিলাম আজ। যখন ওর সামনে আগ্রহ করে পাঞ্জাবীটা রাখলাম! ও ভুড় কুঁচকে তাকালো পাঞ্জাবীটার দিকে।তারপর হঠাৎ কেমন তাচ্ছিল্য করে ছুড়ে ফেলে দিয়ে বললো "এমন গাইয়ে টাইপের পাঞ্জাবী তুমি ই পছন্দ করতে পারো!" টেবিলে শরবতের গ্লাস রাখা ছিলো। পাঞ্জাবীটার উপর সব গুলো শরবত ছিটকে পড়ে গেলো! যেনো আমার অন্তর ক্ষত বিক্ষত হয়ে গেলো! আমার চোখে পানি জমতে শুরু করেছিলো! কিন্তু ও! তা দেখেনি! দেখলেও অবশ্য কিছু বলতোনা! উলটো ঝাড়ি দিয়ে আবার মনে করিয়ে দিতো যে আমি গ্রামের এক গরিব ঘরের মেয়ে! আমার ঘুম আসছেনা আজ! আর পারছিনা!,কিছুতেই পারছি না!" । । । ৮-১-২০১২ আসাদ এর সব বন্ধুরা আজ এসেছিলো বাসায়। আমি আম্মার কাছ থেকে সে খবর পেয়ে খুব উৎসাহের সাথে রান্না ঘরে গিয়ে খাবার রান্না করতে লাগলাম তাদের জন্য! মেহমান এসেছে! আসাদ ও নিশ্চয়ই খুশি হবে অনেক! আমি খুব যত্ন করে রাঁধলাম! বেশ অনেক্ষণ ই লাগলো রান্না করতে।! অনেক আইটেম তো! কিন্তু তবুও! আমি রান্না টা অনেক ভালো পারি! আমি জানি আজ এ রান্না খেয়ে আসাদ এর মন গলবেই গলবে! উনার বব্ধুরাও খুশি হবেন নিশ্চয়ই! আমি ঘেমে একাকার হয়ে গেলাম! দুপুরে কিছু খাওয়াও হয়নি! রান্নায় ব্যস্ত ছিলাম! রান্না শেষ হতেই আমি যেই না সেগুলো নিয়ে বসার ঘরে গেলাম, যা দেখলাম তাতে আমার উৎসাহ সব শেষ হয়ে গেলো! কে যেনো আমার আনন্দে ঠান্ডা জল ঢেলে দিলো! আমি দেখলাম কেউ নেই! আম্মাকে জিজ্ঞেস করলাম, আম্মা বললেন আসাদ নাকি বাইরের থেকে খাবার অর্ডার করে খাইয়েছে সবাই কে! আমার পা এর নিচ থেকে মাটি সরে গেলো! এতো কষ্ট করলাম এটা ব্যাপার না! ব্যাপার হলো আসাদ কি একটুও জানাতে পারতোনা আমাকে! কি হতো বললে! আম্মা সব দেখলেন। উনি আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন "তুমি তো মা আমার পছন্দের খাবার গুলো রান্না করেছো! খাবার টা বাড়ো! আমাকে খাওয়াবে না!"? আমি কষ্ট করে হাসলাম। আসলেই আমার শ্বাশুড়ি অসম্ভব ভালো! কিন্তু তবুও, যার হাত ধরে এসেছি এ বাড়িতে, সে যদি নির্দয় হয় তবে কিভাবে আমি নিজেকে সামলাবো!" । । । ৬-৪-২০১২ আজ আবারো বুঝলাম আমি একজন আনস্মার্ট, গেয়ো, আনকালচারড একটা মেয়ে! আসাদ আমাকে সহ্যই করতে পারছেনা ইদানিং! কআরণ টা কি. আমি এতোই অযোগ্য ওর! আমি নুপুর পড়তে ভীষণ পছন্দ করি! নুপুরের শব্দে নাকি আসাদের মাথা ধরে যায়! গ্রামের সংস্কৃতি নাকি এটা! আবার এক বছর আগে আমার শখ হয়েছিলো বিভিন্ন ব্যান্ড এর পারফিউম কিনে তা পুরো ড্রেসিংটেবিল জুড়ে সাজিয়ে রাখা! এ অভ্যাসে আসাদ অবশ্য কিছু বলতোনা। কিন্তু গ্রামের খোটা দিতো প্রতিটাদিন! আমার যে কতো কষ্ট হয় তা কি ও বুঝেনা! আমি যে ওকে ভালোবেসে ফেলেছি কেনো বুঝেনা! ওকে সেদিন ভালোবাসার কথাও বলেছিলাম! ও খুব করে কথা শোনালো আমাকে! ওর প্রতিটা কথা, প্রতিটা শব্দ আমাকে কষ্ট দিয়েছে! আমার নিজেকে পাথর মনে হচ্ছে! আর বাচতে ইচ্ছে করছেনা! আত্মহত্যা ছাড়া কি আর পৎ নেই!" । । । । ১০-৬-২০১২ আল্লাহ! আজ আমি নিজেকে বিশ্বাস করতে পারছিনা! আমার মনে হচ্ছে সব স্বপ্ন! আমার এ কষ্টের জীবনে এ সংবাদ টা আমার সব কষ্ট তুলে নিয়েছে! এতো খুশি আর হয়িনি আমি! আমার ভেতরে ছোট্ট একটা জীবন আস্তে আস্তে বেড়ে উঠছে! ভাবতেই কতো আনন্দ লাগে! আজ আমি অনেক্ষণ বৃষ্টিতে ভিজেছি আনন্দে! আসাদ কে জানাইনি কিছুই! সারপ্রাইজ দিবো! কিছুদিন পর জানাবো।তখন অবশ্যই আসাদ আমার সাথে খারাও ব্যবহার করবেনা , ও খুশি হবে অনেক! ইশ! এতো ভালো লাগছে আমার!" . . . . ১৩-৬-১২ আমি এখন কোনো কিছুতে মন খারাপ করতে পারিনা! কেননা আমার ভেতরে যে ছোট্ট একটা জীবন আছে! ছোট্ট বাবু!! আমার! কিভাবে মন খারাপ করতে পারি! এর ই মধ্যে তো আমি নাম ও ঠিক করে রেখেছি! ছেলে হলে নাম রাখবো "আনন্দ" আর মেয়ে হলে "অপরাজিতা!" অনেক কিছু ভেবে রেখেছি! দুই দিন পর ই আমি ওকে জানাবো! ইশ! ও যে কতো খুশি হবে! আমার প্রতি ঘৃণা আর থাকবেনা! ছোট্ট বাবুটাই আমাদের এক করে দিবে! এ বাড়িতে সারাদিন আনন্দ বিরাজ করবে! তাড়াতাড়ি আয় আমার বাবুটা!" . . . এর পরে আর কিছু লেখা নেই। মিঃরহমান এর চোখের পানি টপটপ করে পড়ছে ডায়রীর পাতায়! উনি অঝোরে কেঁদে উঠলেন! অনিন্দিতা সামনে বসা। আবছা দেখা যাচ্ছে ওকে।! মিঃ রহমান চিৎকার করে অঝোর নয়নে কেঁদে যাচ্ছেন। আজ উনি বুঝতে পারছেন উনি নিষ্ঠুর পাপী! উনি উনার স্ত্রী কেও খুন করেছেন আবার সেই ছোট্ট বাচ্চাটাকেও! মিঃ রহমান কে অনিন্দিতা ধরা গলায় বললো "আমি এ ডায়রী লিখতাম।তুমি তো খেয়াল ই করতেনা! জানো, আমি যেদিন জানাতে চাচ্ছিলাম সেদিনের আগের দিন ই তুমি আমাকে হত্যা করেছিলে! সাথে আমার ছোট্ট বাবুটাকেও!" অনিন্দিতা কেঁদে উঠলো। মিঃ রহমান এর ইচ্ছে করলো ওকে জড়িয়ে ধরতে। ওকে ভালোবাসতে! কিন্তু উনি যে খুনী! উনার বাচ্চার আর স্ত্রীর! অনিন্দিতা আস্তে আস্তে বলে উঠলো "ভালো থেকো, এ গুলো ই জানাতে চাচ্ছিলাম! আমি জানি তোমার বিবেকবোধ আছে। অপরাধবোধ কাজ করছে এখন। তোমার ভুল টা জানাতেই এলাম! চলে যাচ্ছি আমি। ভালো থেকো" অনিন্দিতা মিঃ রহমানের সামনেই আস্তে আস্তে অদৃশ্য হয়ে গেলো। মিঃ রহমান ডায়রীটা বুকে চেপে ধরে আবার অঝোর নয়নে কেঁদে উঠলেন! এ কান্না পুরো বাড়ি প্রতিফলিত করলো! এ কান্না একজন খুনীর! এ কান্না একজন স্বামীর যাকে তার স্ত্রী ভীষণ ভালোবাসতো! এ কান্না একজন পিতার! যার সন্তান ভুমিষ্ঠ হয়ার আগেই নিজ পিতার দ্বারা খুন হয়েছিলো ছোট্ট ভ্রুণটি!" (সমাপ্ত) . . .......Moumita Sikder


এডিট ডিলিট প্রিন্ট করুন  অভিযোগ করুন     

গল্পটি পড়েছেন ৩৩৬ জন


এ জাতীয় গল্প

গল্পটির রেটিং দিনঃ-

গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন

  • গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now
  • MD:Masud Akon
    Guest ৬ বছর, ১০ মাস পুর্বে
    nice story!

  • Saddam
    Guest ৬ বছর, ১০ মাস পুর্বে
    অনেক ভাল লাগল গল্প টা