বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা
আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ
X
"তোমার আব্বা, আম্মা তো হসপিটালে। আজ তোমাদের বাসায় আসি?"
আসিফ খুব আগ্রহ নিয়ে কথাটা বলে। শশী মনে মনে ভাবছে কি বলবে। খালি বাসায় আসিফকে আসতে দেওয়া ঠিক হবেনা।
"এখন তোমার আসার দরকার নাই। আব্বা সুস্থ হোক। তারপর এসো।"
শশী এক নিঃশ্বাসে বলে ফেললো। কিন্তু আসিফ নাছোড়বান্দা। সে বাসায় আসবেই। তাই আরেকটা অজুহাত বের করে শশীকে বললো,
"আচ্ছা, এখন আসবো না। কিন্তু তোমার হাতের বিরিয়ানি খেতে খুব ইচ্ছে করছে।"
শশীও চায় আসিফকে নিজের হাতের বিরিয়ানি খাওয়াবে। তাই সে ঝটপট বলে ফেলে,
"তুমি আগামীকাল বিকালে পার্কে আসবে। আমি রান্না করে নিয়ে আসবো। তারপর তোমাকে নিজ হাতে খাওয়াবো।"
"আচ্ছা। দেখি আমি আসতে পারি কিনা। এখন ফোন রাখি। জরুরি কাজ আছে।" বলে আসিফ ফোন কেটে দেয়।
.
আসিফ শশীর হবু স্বামী। প্রায় একবছর ধরে তাদের সম্পর্ক। দুজন পারিবারিকভাবে পরিচিত। তাই পরিবারের সম্মতিতে তাদের বিয়ে ঠিক হয়। আসিফ পড়াশোনা শেষ করা বেকার ছেলে। রিলেশনের আগে শশীর প্রতি সে খুব কেয়ারিং ছিলো। শশীর সব কথা মনোযোগ দিয়ে শুনতো, তাকে বেশি সময় দিতো অর্থাৎ সে শশীর জন্য সারাক্ষণ ফ্রি ছিলো। এসব ব্যাপার দেখে শশী আসিফের প্রতি দুর্বল হয়ে যায়। একসময় তাদের রিলেশন শুরু হয়।
.
শশী খুব ইমোশনাল মেয়ে। আসিফকে মনেপ্রাণে ভালোবাসে। ভবিষ্যতে তার আদুরে বউ হতে চায়। কিন্তু আসিফ ইদানীং কেমন জানি পাল্টে গেছে। শশীর প্রতি এখন সে আগের মতো কেয়ারিং না। এমনকি শশীকে ঠিকমতো সময়ও দেয়না। শশী ভেতরে ভেতরে অভিমান করলেও আসিফ সেটা বুঝেনা। তবুও আসিফের প্রতি শশীর ভালোবাসার কোনো কমতি থাকেনা।
.
শশী কখনো বাজারে যায়নি। এই প্রথম সে একা একা বাজারে গেলো। বিরিয়ানি রান্নার মালমসলা কিনে বাসায় চলে আসলো। তারপর নিজের হাতে সুন্দরভাবে বিরিয়ানি রান্না করে। একসময় বিকেল হয়ে যায়। শশী তাড়াতাড়ি একটা বক্সে বিরিয়ানি নিয়ে পার্কে চলে গেলো। এদিকে আসিফ আসার কোনো খবর নেই। শশী বারবার কল করলেও আসিফের ফোন ব্যস্ত দেখাচ্ছে। এক ঘন্টা চলে গেলো। তবুও আসিফ আসেনা। শশীর খুব মন খারাপ হচ্ছে। শেষবারের মতো ফোন করলে আসিফ রিসিভ করে বলে,
"এতবার কল দিচ্ছো কেনো? দেখছোনা ব্যস্ত আছি। বাসায় মেহমান আসছে। এখন আমি আসতে পারবোনা।"
"কি বললা? আসতে পারবেনা মানে? মেহমান আসবে আমাকে আগে বলোনি কেনো? এখন যেভাবেই হোক আসো।"
শশী জেদ করে ফোন কেটে দেয়। একটু পর আসিফ পার্কে চলে আসে। আসিফ এসেই মেজাজ দেখিয়ে বলে,
"কি হলো? বললাম না আসতে পারবোনা? তুমি আমাকে আসতে বাধ্য করলা।"
শশীও এদিকে রাগে ফুঁসছে। সে বলে,
"আজ তোমার এখানে আসার কথা ছিলো। আমার জন্য কি তোমার একটু সময়ও হয়না? ফ্রেন্ডসদের সাথে তো সারাদিন বাইক নিয়ে ঘুরাঘুরি করো। আমি সময় চাইলেই তোমার সকল ব্যস্ততা শুরু হয়ে যায়। বলো কেনো? কেনো? কেনো?"
আসিফ চুপ হয়ে গেলো। কোনো কথা নেই মুখে। তারপর শান্তভাবে বলে,
"দেখো, তোমার আবেগ খুব বেশি। এতো আবেগ থাকা ভালো না। বাস্তবতা বুঝতে শেখো। আমার কাছে তোমার চেয়ে আমার ব্যস্ততা গুরুত্বপূর্ণ। আর তুমি তো এখনো আমার বউ হওনি।"
"তারমানে, তোমার কাছে আমার কোনো মূল্যই নেই? তোমার ব্যস্ততাই সব? আমি এখনো বউ হইনি বলে সময় দিবানা? অনেক সহ্য করেছি তোমার এই ব্যস্ততা। একটা মেয়ে বাসায় ছোটো ভাই বোনকে একা ফেলে শুধু তোমার জন্য বিরিয়ানি রান্না করে এনেছে আর সেই তুমি আমাকে ব্যস্ততা দেখাচ্ছো? তাহলে থাকো তোমার ব্যস্ততা নিয়ে। যেহেতু তোমার কাছে আমার কোনো গুরুত্বই নেই তাই এখন এই সম্পর্ক রাখার কোনো মানে হয়না। তোমার দেওয়া বিয়ের আঙটি ফিরিয়ে দিচ্ছি।"
শশী হাত থেকে বিয়ের আঙটি খুলে ফেলে। "এই নাও তোমার আঙটি" কথাটা বলেই শশী আসিফের হাতে আঙটি দিয়ে কাঁদতে কাঁদতে পার্ক থেকে বের হয়ে যায়। আসিফ শশীকে একটিবারও আটকায়না।
.
তখন প্রায় শেষ বিকেল। পশ্চিম আকাশে সূর্যটা লাল হয়ে প্রায় ডুবুডুবু অবস্থা। শেষ বিকেলের আলোর মতো তাদের সম্পর্কের প্রদীপটাও নিভে গেলো। পরাজিত হলো শশীর নিষ্পাপ ভালোবাসা। আসিফের মতো ছেলেগুলো শুধু মেয়েদের কাছে আসতেই জানে। ভালোবেসে প্রিয়তমাকে ধরে রাখতে জানেনা। অবহেলায় আর অভিমানে শশীরাও একসময় নিশ্চুপ হয়ে যায়। ভালোবাসতে ভুলে যায়।
.
লেখকঃ Ahnaf H Farabi
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now
আবির
User ৬ বছর, ১০ মাস পুর্বেAnar
Guest ৬ বছর, ১০ মাস পুর্বে