বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা
আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ
X
#
(সিকুয়েল অফ #আয়না_বলয়)
__দিল আফরোজ(ঐন্দ্রিলা আদ্রি)
.
ভোরে ঘুম থেকে উঠে আকিব দেওয়াল
আয়নাটা দেওয়ালে লাগিয়ে দিলো। ঈষিকা গভীর ঘুমে। আগে থেকেই আয়না লাগানোর বন্দবস্ত করা ছিলো। ঈষিকা ঘুম থেকে উঠে এটাকে দেওয়ালে দেখলে খুব খুশি হবে। বিছানা থেকেই আয়নায় মুখ দেখা যাবে, এভাবেই আয়নাটা লাগানো হয়েছে।
আজ সারাদিন ব্যস্ততার মধ্যে কাটাতে হবে তাই ঈষিকাকে ঘুম থেকে জাগালো না আকিব। সরাসরি বাথরুমে চলে গেলো গোসল করার জন্য। খাওয়াদাওয়া, আপ্যায়নের দিকটা ওকে দেখতে হবে, দেরি হলে আর গোসল করাই হবে না।
.
শাশুড়ির ডাকে ঘুম ভাঙে ঈষিকার। চোখ মেলে দেখলো আকিব পাশে নেই। দরজা ভেজানো ছিলো। দরজার ওপাশ থেকেই শাশুড়ি ডাকছেন। আড়মোড়া ভেঙে ঈষিকা দরজা খুলে দেয়। ইষিকার শাশুড়ি রেবেকা বেগম বললেন,"বউমা, ঘুম ভালো হয়েছে?"
"জ্বি, মা।"
"তোমাকে সকাল সকাল ডাকতে হলো। এখন খাওয়াদাওয়া সেরে না নিলে পরে খাওয়ার সময় পাবে না। অনেক লোকজন আসবে তোমাকে দেখতে",স্নেহভরে কথা গুলো বললেন রেবেকা বেগম।
"মা, আকিব কোথায়?"
"আকিব অনেক আগেই ঘুম থেকে উঠে কাজকর্ম দেখছে। আজ সারাদিনই ব্যস্ত থাকবে।"
"ও খেয়েছে?"
"খায়নি। তুমি বাথরুম থেকে হাত মুখ ধুয়ে এসো। আমি এখানে বসে অপেক্ষা করছি। তোমাকে ডাইনিং রুমে নিয়ে যাবো।"
বাথরুমে যাওয়ার সময় ঈষিকার চোখে পড়লো দেওয়াল আয়নাটা লাগানো হয়েছে দেওয়ালের ঠিক মাঝখানে। মনে মনে আকিবের কাজের প্রশংসা না করে পারলো না ঈষিকা।
ইষিকা বাথরুম থেকে বের হলে বেবেকা বেগম ওকে ডাইনিং রুমে নিয়ে গেলেন। বিয়ে বাড়ির প্রায় লোকজন তখনও ঘুমে। ওখানে মানুষজন কম। বেশি হট্টগোল থাকলে ঈষিকার অস্বস্তি হতো। ও হাপ ছেড়ে বাঁচলো।
"তুমি বসো। আমি আকিবকে ডেকে আনছি। দুজন একসাথে খাবে।"
আকিবকে নিয়ে এসে রেবেকা বেগম বললেন,"তোমরা খাও। কথাবার্তা বলো। আমি পাশের ঘরেই আছি। কিছু লাগলে ডেকো।"
ঈষিকা শাশুড়ির ব্যবহারে খুব খুশি হলো। শ্বশুর বাড়ির সবাই কেমন হবে, ও তাদের মন মতো চলতে পারবে কিনা এসব নিয়ে ভয়ে ছিলো। কিন্তু এখন ভয় কেটে যাচ্ছে ধীরে ধীরে। শাশুড়ি মা যে অনেক ভালো মানুষ আর ওকে ভালোবাসে সেটা বুঝতে দেরি লাগেনি ওর। দু ননদও মায়ের মতোই। গতকাল রাতে তাদের কথাবার্তায় এমনই প্রকাশ পেয়েছে। রেবেকা বেগম ইচ্ছে করেই ওদের কথা বলার সুযোগ করে দিলেন।
নতুন বিয়ে হয়েছে এখন স্বামীর সাথে একদম কথা বলতে না পারলে খারাপ লাগবে সেটা তিনি বোঝেন।
খেতে খেতে আকিব বললো,"খিচুড়ি রান্না কেমন হয়েছে ঈষি?"
"অসাধারণ। কে রান্না করেছে?"
"আমার মা।"
"এতো মানুষের রান্না একাই করেছেন?"
"একা করেননি। সাথে আরো অনেকে সাহায্য করেছে।"
"মায়ের কাছে রান্না শিখতে হবে", হেসে বলে ঈষিকা।
"হ্যাঁ, শিখে নিও। তুমি নিজেও তো ভালো রান্না করতে পারো। মায়ের কাছে শিখলে ডাবল ভালো পারবে। হা হা হা... "
"আয়নাটা পারফেক্ট জায়গায় লাগিয়েছো। আমি ঘুম থেকে উঠেই মুখ দেখতে পাবো।"
"রাতের বেলা ভূত দেখতে পাবে আয়নায়! হা হা হা..."
"ছাই। বাজে কথা বলো না।"
"আচ্ছা বলবো না।"
"এই শোনো কাজের ফাঁকে আমার সাথে দেখা করে যেও। একা একা ভয় লাগবে।"
"আজকে তোমাকে একা থাকার অবকাশ দেবে না। বউ ভাত না? দেখো কত জন তোমাকে দেখতে আসে। খাওয়া শেষ। এখন আমি যাচ্ছি।"
আকিব চলে গেলো। ঈষিকা শাশুড়ির ঘরে গেলো।
"বসো মা।"
"আপনার রান্না খুব ভালো হয়েছিলো",শাশুড়িকে বলে ঈষিকা।
"আকিবের কাছে শুনেছি তোমার রান্নাও ভালো। সব লোকজন চলে যাক একদিন রান্না করে খাওয়াতে হবে কিন্তু।"
"অবশ্যই করবো।"
"একটা কথা জিজ্ঞেস করবো? কিছু মনে করো না",বেবেকা বেগম বললেন।
রেবেকা বেগমের কথা শুনে ঈষিকা ঘাবড়ে যায়। ও কি কোন ভুল করে ফেলেছে অথবা বেয়াদবি করেছে? যার কারণে মা এভাবে জিজ্ঞেস করছে। ওর মুখে শঙ্কা ফুটে ওঠে।
ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে ঈষিকা জিজ্ঞেস করে,"কি হয়েছে মা?"
আবিরের মা বুঝতে পারে ঈষিকা ভয় পেয়ে গেছে।
তিনি পরিস্থিতি হালকা করার জন্য বলেন,"এই বোকা মেয়ে, তুমি ভয় পাচ্ছো? তেমন কিছু হয়নি। আজ সকালে তোমাদের ঘরে একটা আয়না দেখলাম। ওটা তো আগে ছিলো না। আমি আয়নার ব্যাপারেই জিজ্ঞেস জানতে চাচ্ছি।"
ঈষিকা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে।
"ও এই ব্যাপার। আমি ভেবেছি কোন ভুল করেছি তাই...ওটা আকিব উপহার দিয়েছে আমাকে। সুন্দর আয়নাটা তাই না মা?"
"হ্যাঁ, ভীষণ সুন্দর। কিন্তু ওটা তো বহু বছরের পুরনো আয়না। তাছাড়া ওটা........"
"তাছাড়া কি মা?"
"কিছু না। তোমাদের ঘরে বেশ ভালো মানিয়েছে আয়নাটা। তোমার সুন্দর মুখ আয়নাতে প্রতিফলিত হলে আয়নার সৌন্দর্য বহুগুণ বেড়ে যাবে।"
রাবেয়া বেগম কথা গুলো বললেন বটে কিন্তু তাকে চিন্তিত মনে হচ্ছে এবং গম্ভীর দেখাচ্ছে। ঈষিকার কিছু জিজ্ঞেস করার সাহস হলো না।
"তুমি গোসল সেরে নাও। ঋতু আর রুবা মিলে তোমাকে সাজিয়ে দেবে। লোকজন আসা শুরু হয়ে গেছে।"
"ঠিক আছে মা।"
ঈষিকা নিজের ঘরে চলে যায়।
.
ময়ূরকণ্ঠী নীল শাড়িতে দারুণ দেখাচ্ছে ঈষিকাকে। খোঁপায় তাজা ফুলের মালা জড়ানো। ছিমছাম সাজ। বিয়ের দিনের চেয়ে আজকেই বেশি নজর কাড়া লাগছে ওকে। দু ননদ মিলে ভালোই সাজিয়েছে। দুপুর হয়ে গেছে। এরই মাঝে ঈষিকার ছোট ননদ খাইয়ে দিয়েছে ওকে। আকিব কাজের ফাঁকে দু তিন বার খবর নিয়ে গেছে। ঈষিকার বাড়ির লোকজন, বান্ধু-বান্ধব এসেছে। তাদের খাওয়াদাওয়ার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়েছে। নিমন্ত্রিত অতিথিরা এসে ঈষিকাকে দেখে যাচ্ছে। কথা বলছে। অতিথিদের মাঝে গতকালকের ওই তিনজন গম্ভীর মানুষ এসে উপস্থিত হলো। কেমন রহস্যময় তারা। আকিবের বাবা জামশেদ ওনাদের দেখে হাসিমুখে এগিয়ে এসে বললেন,"আরে তোমরা এসে গেছো। চলো চলো খেতে বসবে। বেলা তো কম হলো না।"
জামশেদ সাহেব হেসে কথা বললেও তারা নির্লিপ্ত। কেমন রোবটের মতো খাওয়ার টেবিলের দিকে গেলো।
খাওয়া শেষ হলে তিনজনের মধ্যেকার মহিলা জিজ্ঞেস করলেন,"ভাবী কোথায়?"
"রেবেকা বউমার ঘরে আছে। এই ঋতু তোর চাচীকে বউ দেখিয়ে আন।"
"তোমরা তিনজনই এসো। মাও ওঘরেই আছে", ঋতু তিনজকে উদ্দেশ্য করে বলে।
ওরা তিনজন ঋতুর সাথে ঈষিকার ঘরে যায়। ঘরের মধ্যে ভীড় হয়েছে। ভীড়ের কারণে ঘরের সুন্দর আয়নাটা দেখা যাচ্ছে না। সবাই বউ দেখায় ব্যস্ত।একজন যাচ্ছে তো আরেকজন আসছে। ভীড় ঠেলে ওদের তিনজকে ঈষিকার সামনে নিয়ে যায় ঋতু।
"ভাবী, এরা হচ্ছে আমাদের একমাত্র চাচা, চাচী আর চাচাতো ভাই। তোমাকে দেখতে এসেছেন।"
ঈষিকা তাদেরকে সালাম দেয়। বসতে বলে। চাচী ঈষিকার পাশে বসে। ঈষিকাকে সোনার আংটি উপহার দেয়। এই প্রথম ওনার মুখে সূক্ষ্ম হাসির রেখা দেখা যায়। উনি ঈষিকা আর রেবেকা বেগমের সাথে হাসি মুখেই কথা বলেন। চাচাতো ভাই জিজ্ঞেস করে ঈষিকা ভালো আছে কিনা। ব্যাস এই পর্যন্তই। আর কোন কথা নাই। কিন্তু চাচা ঈষিকাকে দেখে চমকে উঠে পরক্ষণেই নিজেকে সামলে নেয়! কেউ উনার মুখের বিচলিত ভাব খেয়াল করে না। উনি ঈষিকার সাথে কোন কথাই বলেন না।
(চলবে)
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now