বাংলা গল্প পড়ার অন্যতম ওয়েবসাইট - গল্প পড়ুন এবং গল্প বলুন

বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা

আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ

আশ্রয়

"রোমাঞ্চকর গল্প " বিভাগে গল্পটি দিয়েছেন গল্পের ঝুরিয়ান রিয়েন সরকার (০ পয়েন্ট)

X আশ্রয় ==== . বউ মেয়েকে নিয়ে সকালে গ্রামের বাড়িতে গেছে। শ্বশুরবাড়ি। আমার মেয়ে নিলু এবার অষ্টম শ্রেণিতে উঠবে। কিছুদিন আগে তার সপ্তম শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষা শেষ হয়েছে। স্কুল বন্ধ এখন। শীতকালীন অবকাশ। আমারও ওদের সাথে যাওয়ার কথা ছিল। ছুটির দরখাস্তও দিয়েছিলাম অফিসে। কিন্তু বড়কর্তা বাধ সাধলেন। তার বড় মেয়ের বিয়ে। এজন্য দু-তিন দিন অফিসে আসবেন না। ছুটি চাওয়ায় মাথা নাড়িয়ে বললেন- “জানেন তো, শুক্রবার মেয়েটার বিয়ে। কতো আয়োজন বাকি এখনো। আমি অফিসে বসে মাছি মারবো না ওদিকটা সামলাবো? ছুটি এখন হচ্ছে না। বিয়ের ঝামেলা শেষ না হওয়া পর্যন্ত অফিস আপনাকেই সামলাতে হবে।” অগত্যা কি আর করা। আমার ছুটির ইচ্ছেটা তাই ইচ্ছেই রয়ে গেল। বউ রাগ করে মেয়েকে নিয়ে বাপের বাড়ি চলে গেল। যাওয়ার সময় শাসিয়ে গেলো- “এই চললুম আমি মেয়েকে নিয়ে। তুমি থাকো তোমার কাজ নিয়ে।” বেচারিরই বা কি দোষ? এতো আশা করে ছিলো তার সাথে যাব। তা আর হলো কই। বড়কর্তার মেয়ের বিয়ে ছিল আজ। অফিসের সকলেরই নেমন্তন্ন ছিল সেখানে। বিকেলে খাওয়া-দাওয়ার পর বরযাত্রী আর দেরী করেনি। নিতাইপুর না কি যেন একটা শহরে ছেলের বাড়ি। যেতে ঘণ্টা চারেক লাগবে। বরপক্ষকে বিদায় দিয়ে সোজা বাসায় চলে এসেছি। নিলুর কথা মনে পড়ছে। না জানি মেয়েটা আমার কি করছে। গতবার তো খেলতে গিয়ে হাতটা প্রায় ভেঙেই ফেলেছিল। অনেকদিন প্লাস্টার করে রাখতে হয়েছিল। ওরই বা কি দোষ? বাসায় থাকলে তো সারাদিন চার দেয়ালের মাঝেই আটকে থাকতে হয়। বাইরে যে একটু খেলবে তার কি আর উপায় আছে? মাঠ বলতে তো কিছুর অস্তিত্বই নেই এই শহরে। পার্ক যা আছে একটা তাও অব্যবস্থাপনায় আফ্রিকার রেইন ফরেস্টে পরিণত হয়েছে। গ্রামের খোলা পরিবেশে তাই মেয়েটা পাখির মতো হয়ে যায়।কি রেখে কি করবে ভেবেই পায় না যেন। দীপাকে এতো করে বলি মেয়েটাকে একটু চোখে চোখে রাখতে। কিন্তু তার আবার হিন্দি সিরিয়ালের চাইতেও গল্পের বইয়ের নেশা বেশি। সারাদিন দুটো রান্নাকরা ছাড়া বাকি সময় গল্পের বইয়ের উপরেই পড়ে থাকতে দেখা যায় তাকে। আমার শ্বশুর মশাইয়ের অভ্যাস পেয়েছে আঠারোআনা। মেয়েকে দেখার সময় কই তার? বাসায় একা একা ভালোও লাগছে না এখন। একবার ভাবলাম শ্বশুরবাড়ি গিয়ে দীপাকে চমকে দেই। কিন্তু এতো রাতে যেতে মন সায় দিলো না। সোফায় বসে রিমোট টিপছি। কিন্তু টিভিটা কিছুতেই অন হচ্ছেনা। দীপার সাথে সাথে যেন টিভিটাও রাগ করেছে। আর মনে মনে বলছে- “দেখ একা একা কেমন মজা!” মন খারাপ করে বসে আছি। টি টেবিলের দিকে চোখ পড়তেই দেখলাম একটা বই পড়ে আছে। দীপার কাজ। যেখানে সেখানে বই ফেলে রাখা তার অভ্যাসের মধ্যেই পড়ে। হাজার বলেও ঠিক করতে পারলাম না। হাতে নিয়ে দেখলাম ওটা কোন বই নয়। একটা ডায়রী। চামড়ার মলাটে মোড়ানো বাঁধাই করা ডায়রী। পাতা উল্টাতেই ডায়রীর মালিকের নাম চোখে পড়লো। “ইমতিয়াজ মাহমুদ”। কৌতূহলবশত পড়া শুরু করলাম। ভদ্রলোকের হাতের লেখা খুব সুন্দর। গোটা গোটা অক্ষরে লেখা প্রতিটা শব্দ। গোছানো লেখা। তিনি লিখেছেন- ‘শুক্রবার। অফিস বন্ধ। বিকেল বেলা। স্ত্রী আর মেয়েকে নিয়ে লংড্রাইভে বেরিয়েছি। শহর থেকে অনেক দূরে চলে এসেছি। জায়গাটা অপরিচিত। আগে কখনো আসা হয়নি এদিকে। রৌদ্রজ্জ্বল দিন ছিল আজ সকাল থেকেই। কিন্তু সন্ধ্যা নামতেই ঝড়ো বাতাস শুরু হয়েছে। সাথে ফোঁটা ফোঁটা বৃষ্টি। হটাত করে আগাম সংকেত না দিয়ে আসা দুর্যোগে কিছুটা বিচলিত বোধ করছি। কিছুটা অসহায়ও। স্ত্রী-মেয়ে ভয় পেয়ে একে অপরকে জড়িয়ে ধরে আছে। আমি তাদের অভয় দেওয়ার চেষ্টা করছি। কিন্তু তেমন লাভ হচ্ছেনা। বাজ পরলে মেয়েটা ভীষণ ভয় পায়। আর এখন তো একটু পর পরই আকাশ কাঁপিয়ে কোন অতিকায় দানব যেন তীব্র আক্রোশে গর্জন করছে! এমন ঝড় আসার কোন সম্ভাবনাই ছিল না আজ। শুধু আজ কেন আগামী সাত দিনের আবহাওয়াও ঝড়ের লক্ষণের কোন পূর্বাভাস দেয়নি আবহাওয়া অফিস। অথচ আজই শুরু হয়ে গেছে মহাপ্রলয়। এমন প্রলয়ঙ্করী ঝড় আমি জীবনে দেখিনি। মড়মড় করে কাছেই কোথাও একটা গাছ ভেঙে পড়ার শব্দ হলো। ভারী বর্ষণ শুরু হয়েছে। সামনে কিছুই দেখা যাচ্ছেনা। গাড়ি চালাতে একটু ভয় ভয় লাগছে। যে কোন সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। স্পীড একেবারে কমিয়ে দিয়েছি। শেষ পর্যন্ত গাড়ি থামাতেই হলো। গাছ পড়ে রাস্তা বন্ধ হয়ে আছে। একটু আগে যে গাছটা ভাঙার শব্দ শুনলাম সেটাই হয়তো পড়ে আছে। অসহায়ের মতো গাড়িতে বসে ভাবছি কি করা যায়। বৃষ্টি কিছুটা কমেছে এখন। গাড়ির জানালা দিয়ে বাইরে তাকাতেই বিশাল এক গেট দেখতে পেলাম। স্ত্রীর সাথে পরামর্শ করে গাড়ি থেকে নেমে গেটের দিকে ছুটলাম। এতো বড় গেট যেহেতু, বাড়িটাও নিচয়ই অনেক বড় হবে। আর এতো বড় বাড়িতে কেউ না কেউ তো অবশ্যই থাকবে। গেট দিয়ে ভেতরে ঢুকতেই বাঁধানো রাস্তা দেখতে পেলাম। দৌড়াতে দৌড়াতে রাস্তার শেষ মাথায় আসতেই বাড়িটা দেখতে পেলাম। আমার ধারণাই সত্যি। বাড়িটা আসলেই অনেক বড়। প্রায় রাজপ্রাসাদ বলা চলে। দরজায় কড়া নাড়ছি অনেকক্ষণ থেকে। কিন্তু কেউ দরজা খুলছে না। বৃষ্টির শব্দে হয়তো ভেতর থেকে শোনা যাচ্ছেনা। বৃষ্টিতে ভিজে একেকজন আমরা টইটুম্বুর হয়ে আছি। দরজা খোলার কোন লক্ষণই নেই। ভেতরে যাওয়ার আশা প্রায় ছেড়েই দিয়েছি। বারান্দাতেই রাত কাটানোর কথা ভাবছি। এমন সময় আমাদের অবাক করে দিয়ে দরজাটা খুলে গেলো। মাঝবয়সী এক ভদ্রমহিলা দাঁড়িয়ে আছেন সামনে। আমাদের দুরবস্থার কথা শুনে তিনি সানন্দে আমাদের ভেতরে আসার অনুমতি দিলেন। মেয়েটার ঠাণ্ডা লেগে গেছে। জ্বরও আসবে মনে হচ্ছে। রাতের খাওয়া শেষে তাই তাড়াতাড়িই শুয়ে পড়তে হলো। ভদ্রমহিলা খেতে খেতে জানালেন একাই থাকেন তিনি এ বাড়িতে। বেশ অবাক হলাম তাঁর কথা শুনে। এতো বড় বাড়ি অথচ বাসিন্দা মাত্র একজন! সে যাই হোক, এ নিয়ে আর মাথা ঘামালাম না। আসলে মাথা ঘামানোর মতো অবস্থা তখন ছিল না আমাদের। বিছানায় শোয়া মাত্রই ঘুমে দুচোখ ভেঙে এলো। সাথে সাথেই ঘুমের অতল গহ্বরে নিজেকে হারিয়ে ফেললাম। তবে ভালো ঘুম হলো না। কিছু সময় পরপরই ভয়ংকর সব দুঃস্বপ্ন দেখতে লাগলাম। এক সময় দেখলাম এ বাড়ির কর্তী খাটের পাশে দাঁড়িয়ে আছে। অদ্ভুত তাঁর মুখের গড়ন। রক্তবর্ণ চোখ মেলে তাকিয়ে আছে। হটাত আমার মেয়েটার উপর ঝুঁকে পড়লেন। গলার পাশটায় কামড় বসিয়ে দিয়েছেন। অথচ আমি শুয়ে শুয়ে তাই দেখছি। বাঁধা দিতে পারছিনা তাকে। কে যেন আমার সমস্ত শক্তি শরীর থেকে শুষে বের করে নিয়েছে। মৃত মানুষের মতো পড়ে আছি আমি খাটের উপর। সকাল বেলা ঘুম ভাঙতেই পাশে তাকিয়ে চমকে উঠলাম। মেয়ে আর স্ত্রীর ছিন্নভিন্ন লাশ পড়ে আছে সেখানে। নড়াচড়ার শক্তি হারিয়ে ফেলেছি আমি মেয়েটার লাশ দেখে, যেন জমে পাথর হয়ে গেছি। গলার পাশের ক্ষতটার দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি। রাতের স্বপ্নটা তাহলে স্বপ্ন ছিল না? না এখনো আমি স্বপ্নই দেখছি?” . ধ্যাত। শেষের পৃষ্ঠাগুলো কে যেন ছিঁড়ে ফেলেছে। গল্পের শেষটা তাই জানা গেলো না। মনের ভেতরে উথাল পাথাল ঢেউ উঠছে আমার। শেষটা জানার জন্য মন আঁকুপাঁকু করছে। এটা কি ছিলো? ডায়রী? না কোন লেখকের গল্প? কে ছিলেন এই ইমতিয়াজ মাহমুদ? কি হলো আমার কিছুই বুঝতে পারছিনা। তীব্র আগ্রহ অনুভব করছি আমি এর শেষটা জানার জন্য। আবার পাতা উল্টানো শুরু করলাম ডাইরিটার। হুট করে একটা পাতা খুলে নিচে পড়ে গেলো। তুলে নিয়ে দেখলাম এটা ডাইরীর কোন পৃষ্ঠা নয়। এটা একটা ম্যাপ। কি আশ্চর্য! ম্যাপটা এখানে আসলো কোথা থেকে? ডাইরীটা পড়ার সময় তো ম্যাপটা চোখে পড়েনি? ম্যাপের উপর আবছা একটা দাগ দেখতে পেলাম। ম্যাগ্নিফ্লাইং গ্লাসটা ম্যাপের উপরে ধরতেই দাগটা স্পষ্টভাবে ফুটে উঠলো। কিছুটা খুশি হলাম। এটা হয়তো ওই বাড়িটার রাস্তাই হবে। এইসব অতিপ্রাকৃত ব্যাপারে আমার আগে থেকেই তীব্র আকর্ষণ ছিলো। বিয়ে করার আগে অনেক হানাবাড়িতে রাত কাটিয়েছি আমি। কিন্তু কখনই কিছু চোখে পড়েনি আমার। ভুত-প্রেত, দৈত্য-দানো সহ অতিপ্রাকৃত অনেক গল্পই শুনেছি আমি অনেক মানুষের মুখে। গল্প শোনার জন্য ছুটে গিয়েছি বিভিন্ন অজপারাগায়ে। কিন্তু সব জায়গায়ই আমাকে নিরাশ হতে হয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শী বা ভুক্তভোগী কাউকেই পাইনি আমি। সবাই গল্পগুলো শুনেছে হয় দাদাদাদি অথবা নানানানির কাছ থেকে। কি ননসেন্স একেকজন! নিজে কখনো দেখেনি অথচ বিশ্বাস করে বসে আছে। যেহেতু সুযোগ একটা পাওয়া গেছে, এটা হাতছাড়া করতে কোনভাবেই আমি রাজি না। এক ছুটির দিনে নিলু আর দীপাকে নিয়ে বেড়িয়ে পড়লাম ওই বাড়ির উদ্দেশ্যে। একাই যেতে চেয়েছিলাম। কিন্তু বউ আর মেয়েকে কিছুতেই মানানো গেলো না। অগত্যা ওদেরকেও সাথে নিয়ে যেতে হচ্ছে। ম্যাপ দেখে দেখে চলছি। বাড়িটা এখান থেকে ভালোই দূরে। যেতে যেতে বিকেল হয়ে যাবে। অফিস থেকে ছুটি নেওয়া আছে। তাই কোন সমস্যাই নেই। দুপুরের খাওয়াদাওয়াটা একটা হোটেলে সেরে নিলাম। রাতের জন্য খাবার সাথে নিয়ে নিলাম এখান থেকেই। বলা তো যায়না অখ্যাত ওই জায়গায় হোটেল আছে কিনা? বিকেলের দিকে হালকা বাতাস শুরু হলো। সময় যত গড়াচ্ছে বাতাসের বেগ ততো বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে আমলে নিলাম না তেমন। ব্যাপারটা সম্পূর্ণই কাকতালীয় ভেবে উড়িয়ে দিলাম। সন্ধ্যা হয়ে আসছে। প্রায় ঝড়ই শুরু হয়ে গেছে। কাছেই একটা অশ্বত্থ গাছ ভেঙে পড়লো। রাস্তা বন্ধ হয়ে গেছে গাছটা। এমন সময় বিশাল একটা গেট চোখে পড়লো আমার। ডায়রীর কথা মনে পড়ে গেলো আমার। দীপা অবশ্য ডায়রীটা পড়েছে কিনা আমি জানি না। তীব্র সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছি আমি বাড়ির ভেতরে ঢোকা না ঢোকা নিয়ে। দীপা অবশ্য বাড়ির ভেতরে ঢোকার কথাই বলছে। ও সম্ভবত ডায়রীটা পড়েনি। কি করবো আমি এই মুহূর্তে? ডায়রীর ঘটনা বলবো ওকে? না এই মহাপ্রলয় থেকে বাঁচতে আশ্রয় নেবো ওই বাড়িতে? না গাড়ির ভেতরে হাত-পা গুটিয়ে বসে থেকে অসহায়ভাবে মারা যাবো এই আশ্বিনা ঝড়ে?


এডিট ডিলিট প্রিন্ট করুন  অভিযোগ করুন     

গল্পটি পড়েছেন ৪৭৩ জন


এ জাতীয় গল্প

→ আশ্রয় ২য় ও শেষ পর্ব
→ আশ্রয় ১ম পর্ব
→ আশ্রয়
→ মিথ্যার আশ্রয়
→ নিরাপদ আশ্রয়ের অধিকার
→ প্রয়োজন যার ফুরিয়েছে-আশ্রয় কি তার বৃদ্ধাশ্রম
→ আশ্রয় কি তার বৃদ্ধাশ্রম ?

গল্পটির রেটিং দিনঃ-

গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন

  • গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now