বাংলা গল্প পড়ার অন্যতম ওয়েবসাইট - গল্প পড়ুন এবং গল্প বলুন

বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা

আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ

ছবি ১ম পর্ব

"ভৌতিক গল্প " বিভাগে গল্পটি দিয়েছেন গল্পের ঝুরিয়ান রিয়েন সরকার (০ পয়েন্ট)

X #ছবি ১ম পর্ব __দিল আফরোজ(ঐন্দ্রিলা আদ্রি) . তমা ডাক্তারের চেম্বারের বাইরের রুমে বসে অপেক্ষা করছে কখন তাকে ডাকা হবে। মেয়েটা দেখতে খুব সুন্দর, ফর্সা, লম্বা, রোগা শরীর। এসি লাগানো রুমে থাকলেও অনবরত ঘামছে তমা। মুখ দেখেই অনুমান করা যায় সে খুব চিন্তিত এবং অস্থিরতায় ভুগছে। আরো আধাঘণ্টা পর তমাকে ভেতরে ডাকা হলো। ভেতরে ঢুকেই ডাক্তারের বলার অপেক্ষা না করে চেয়ারে বসে পড়লো তমা। "তোমাকে অস্থির দেখাচ্ছে। পানি খাবে?", মনোরোগ বিশেষজ্ঞ আজিজুল হক জিজ্ঞেস করলেন। আজিজুল হক সাইক্রিয়াটিস্ট হিসাবে বেশ সফল। আজ পর্যন্ত যত গুলো রোগী মানসিক সমস্যা নিয়ে এসেছে প্রায় সবাই সুস্থ জীবনে ফিরে গেছে। তিনি রোগীদের সুস্থ করার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করেন। "পানি লাগবে না",তমা উত্তর দেয়। "তুমি বয়সে আমার চেয়ে অনেক ছোট তাই তুমি বলে ডাকছি। তোমার নাম কী?" "তৌহিদা তমা।" "বয়স কত?" "১৯ বছর। স্নাতক ১ম বর্ষের ছাত্রী।" "তোমার সাথে কেউ আসেনি?" "না। একাই এসেছি।" আজিজুল হক অবাক হন কারণ রোগী একাই এসেছে। মানসিক সমস্যার রোগী সাধারণত একা আসে না। "আমার খোঁজ পেলে কোথায়?" "আমার বান্ধবী চিত্রার কাছে। ওর ছোট ভাইয়ের চিকিৎসা আপনিই করেছিলেন। ওকে যখন আমার সমস্যা জানালাম তখন ও আপনার যাথে যোগাযোগ করতে বলে।" "ঠিক আছে। এবার বলো তোমাকে কিভাবে সাহায্য করতে পারি?" "ডাক্তার, আমি আপনাকে কিছু কথা বলবো। আমার কথা কি আপনি বিশ্বাস করবেন?" "অবশ্যই বিশ্বাস করবো। তুমি বলো।" "আমি আয়না ঘৃণা করি!" তমার কথা ডাক্তার আজিজুল হককে আগ্রহী করলো। তমা আবারো বললো,"আমি সব আয়না ঘৃণা করি না। তবে আমাদের বাড়িতে নতুন যে আয়নাটা আনা হয়েছে আমি শুধু ওই আয়নাকে ঘৃণা করি।" "কেন?", আজিজুল হক জিজ্ঞেস করলেন। "যখন আমি আয়নার সামনে দাঁড়াই তখন আমাকে দেখতে বিশ্রী লাগে।" "বিশ্রী লাগে বলতে কি বোঝাচ্ছো? অস্থির না হয়ে সময় নিয়ে বলো।" "আয়নায় আমাকে ভীষণ মোটা লাগে আর আয়নায় প্রতিচ্ছবি কেমন এবড়োখেবড়ো দেখায়। অথচ এরকম হওয়ার কথা নয়। ওই আয়নাও আমাকে ঘৃণা করে!" আজিজুল হক বললেন,"কি বলছো? আয়না তোমাকে ঘৃণা করে?" তমা বিষণ্ণ ভাবে বলে,"হ্যাঁ। আমি বাজি রেখে বলতে পারি আপনি ভাবছেন আমি বানিয়ে বলছি কিন্তু এটা সত্যি। ওই আয়নার মধ্যে কিছু আছে, সত্যিকারের অনিষ্টকর কিছু!" তমা যা যা বলেছে হিজিবিজি ভাবে ছোট নোট আকারে ডায়েরীতে লিখতে লিখতে জিজ্ঞেস করলেন, "তুমি কেন এরকম মনে করো?" "আমি জানি। মানে আমি একবার ওটাকে দেখেছিলাম। বাবাকে সে ব্যাপারে বলায় বাবা মনে করে আমার মাথা খারাপ হয়ে গেছে।" কথা গুলো বলার সময় তমার তীক্ষ্ণ কালো চোখ দেখে সাইক্রিয়াটিস্ট আজিজুল হক চমকে ওঠে। তমাকে দেখে মনে হচ্ছে এতক্ষণ যে রহস্যজনক ঘটনা বর্ণনা করেছে তা চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছে। তমা আবার বললো,"আমি যখন আয়নার কাচ স্পর্শ করি তখন শিউরে উঠি। এটা ছিলো....এটা ছিলো.....", তমা বিরক্তির সাথে ঠোঁট কামড়াচ্ছিলো কারণ সে আয়না স্পর্শ করে ও কেমন অনুভব করেছিলো তা ভাষায় প্রকাশ করতে পারছিলো না। অবশেষে ও বললো,"আয়নাটা আঠালো পদার্র মতো লেগেছিলো।" "তুমি কি দেখেছিলে?", আজিজুল হক জিজ্ঞেস করলেন। তমার মতো বুদ্ধিমতী এবং সুন্দরী মেয়ের ভারসাম্যহীনতা তাকে কষ্ট দিচ্ছিলো। বিরতি নিয়ে তিনি আবারো জিজ্ঞেস করলেন,"তমা, তুমি কি মনে করো আয়নাটা কোন কিছু দ্বারা পোজেজেড? কিছু নিয়ন্ত্রণ করে রেখেছে আয়নাটাকে?" তমা ভীতিকর ভাবে উত্তর দিলো,"আয়না থেকে শব্দ আসছিলো। মনে হচ্ছিলো বহুদূর থেকে শব্দ ভেসে আসছে। আমি হলপ করে বলতে পারি আয়নাটা ভালো নয়।" "ঠিক আছে তমা আমাকে এসব নিয়ে ভাবতে দাও",সাইক্রিয়াটিস্ট তমাকে শান্ত করার চেষ্টা করলেন এবং ডায়েরীতে আরো কিছু নোট লিখলেন। "দেখুন ডাক্তার এখানেই শেষ নয়। আয়নাকে মুখ দেখার পর থেকে আমার বাবার স্বাস্থ্য ভেঙে যাচ্ছে।" "তাই?",তমা তার বারর স্বাস্থ্য খারাপ হওয়ার জন্য কিভাবে আয়নাকে দায়ী করে তা শোনার জন্য অপেক্ষা করলেন। তমা বলতে থাকলো,"আয়নাটা আনার পর থেকে বাবা নিজের প্রতি আস্থা হারাতে শুরু করেছে। অন্য আয়নায় তাকে ঠিক দেখতে লাগে কিন্তু নতুন আয়নায় বাবার মুখ কুকুরের মতো দেখায়! আমারও শরীর খারাপ চলছে না।" তমা ভ্রুকুটি করে আর মধ্যমা আঙুল দিয়ে নিজের চোখের দিকে নির্দেশ করে। ওর চোখ ফোলা ফোলা এবং লাল। "বুঝলাম।",আজিজুল হক তার কলম ঠোঁটের সাথে লাগিয়ে চিন্তা করেন। তার ধারণা অনুযায়ী তমা সেল্ফ ইমেজ নিরোসিস(Self Image Neurosis) এ আক্রান্ত। কিন্তু শুধু ওর নিজের না ওর বাবার মুখও বিকৃত দেখাচ্ছে এটা চিন্তার বিষয়। হতে পারে এটাও তমার কল্পনা। আজিজুল হক তমাকে প্রস্তাব দিলেন,"আমি কি আয়নাটা দেখতে পারি?" তমা উৎসাহ নিয়ে বললো,"অবশ্যই পারবেন।" তারপর তমা বলতে লাগলো কিভাবে আয়না ওর পরিবারের সদস্যদের মনোবল ক্ষয় করছেঃ আমার বাবা চুলে রঙ করা শুরু করেছে কারণ বাবার ধারণা তার চুল পেকে যাচ্ছে। তার চুল পড়া শুরু হয়েছে। বাবা মাথায় ক্যাপ পড়ে থাকেন। এখন তাকে অপরিপুষ্ট দেখায়। আমার বড় ভাইয়ের মনে হয় ওর ভ্রু দুটো মাঝখানে জোড়া লেগে যাচ্ছে আর ওর কান ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে! সব ওই আয়নার জন্য। এরকম চলতে থাকলে আমি ওটা ভেঙে গুড়ো গুড়ো করবো। "তমা এটা করো না। আগে আমাকে আয়নাটা দেখতে দাও। তোমার মোবাইল নাম্বার আর বাড়ির ঠিকানা লিখে দাও। আমি শুক্রবারে তোমাকে ফোন করবো।বিকেল চারটায় তোমার বাড়ি যাবো।",আজিজুল হক বললেন। তমা ফোন নাম্বার এবং ঠিকানা লিখে দিলো। "তোমাকে আরো কিছু প্রশ্ন করতে পারি?" "হ্যাঁ।" "তুমি তোমার বাবা এবং বড় ভাইকে নিয়ে বললে। তোমার মাকে নিয়ে কিছুই বললে না। তিনি আয়নায় অস্বাভাবিক কিছু পাননি?" "আমি মাকে কখনোই দেখিনি। আমাকে জন্ম দেওয়ার সময় উনি মারা গেছেন।" "ওহ! দুঃখিত তমা।" "ঠিক আছে।" "তোমার ভাই আর বাবা কি কাজ করেন?" "ভাই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে আর বাবা ব্যবসা করেন।" "তোমার বাবা তোমাদেরকে সময় দেন?" "খুব কম। তিনি ব্যবসা নিয়ে খুবই ব্যস্ত থাকেন।" "বাড়িতে একাই থাকো?" "বাবা আর ভাই বাড়ি ফেরার আগ পর্যন্ত একাই থাকতে হয়। বাবা অনেক রাত করে বাড়ি ফেরে। ভাই রাত আটটায় বাসায় ফেরে।" "সময় কাটাও কিভাবে?" "গল্পের বই পড়ে। টিভি দেখে।" "কি ধরণের গল্প পড়ো?" "হরর, থ্রিলার গল্প বেশি ভালো লাগে।" "আচ্ছা তমা তুমি এবার এসো। শুক্রবারে দেখা হচ্ছে।" তমা চলে গেলো। আজ আর কোন রোগী নেই। আজিজুল হক ডায়েরী বের করে তমাকে নিয়ে লেখা নোট গুলো কয়েকবার পড়লেন। তার ধারণা হচ্ছে একাকীত্ব, বেশি ভৌতিক গল্পের বই পড়া তমার উপর প্রভাব ফেলেছে। তাই তমা আয়নায় ভুলভাল দেখছে এবং কল্পনা করে নিচ্ছে তার পরিবারের লোকজনও একই সমস্যায় ভুগছে। ওর ভাই এবং বাবার সাথে কথা বলতে হবে। তাই তিনি শুক্রবারে তমাদের বাড়িতে যেতে চান এবং তমাকে প্রমাণ করে দেখাতে চান যে আয়নায় আসলে স্বাভাবিক প্রতিচ্ছবি দেখা যায়। তমা যা দেখছে তা ভ্রম। (চলবে)


এডিট ডিলিট প্রিন্ট করুন  অভিযোগ করুন     

গল্পটি পড়েছেন ২৪০ জন


এ জাতীয় গল্প

→ কার ছবি পার্ট ২
→ কার ছবি ( পার্ট ১ )
→ সীরাহ কেন পড়া উচিৎ? – তিনি ইসলামের বাস্তব প্রতিচ্ছবি – প্রথম পর্ব
→ হৃদয় আঁকা ছবি
→ ডলারের ছবি....
→ মুদ্রার এপিঠ ওপিঠ (বাস্তব জীবনের প্রতিচ্ছবি) ৪
→ মুদ্রার এপিঠ ওপিঠ (বাস্তব জীবনের প্রতিচ্ছবি) ২
→ মুদ্রার এপিঠ ওপিঠ (বাস্তব জীবনের প্রতিচ্ছবি) ১
→ মুদ্রার এপিঠ ওপিঠ (বাস্তব জীবনের প্রতিচ্ছবি) ৩
→ বাস্তব প্রতিচ্ছবি।
→ চলোমান জীবনের প্রতিচ্ছবি (শেষ পর্ব)
→ চলোমান জীবনের প্রতিচ্ছবি part 2
→ চলোমান জীবনের প্রতিচ্ছবি part 1
→ নিঁখুত ছবিটি আমার
→ শরৎচন্দ্রের : ছবি : ৩য় অংক

গল্পটির রেটিং দিনঃ-

গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন

  • গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now