বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা
আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ
X
।
সিলেট থেকে ঢাকায় ফিরব।
হানিফ বাসে জানালার কাছে বসে আছে সুশ্রী এক
তরুণী, সুনয়না । বললাম,
-আমি জানালার কাছে বসব।
-কেন?
-বাসে উঠলেই আমার বমি হয়, তাই।
.
মেয়েটি তৎক্ষণাৎ সরে এসে আমাকে জানালার
কাছে সিট দিয়ে নাকে ওড়না চেপে বসে আছে।
বসে আছে মানে আমার বমির জন্য অপেক্ষা
করছে।
.
বাস চলছে।
কানে এয়ারফোন লাগিয়ে বেশ ফুরফুরে
মেজাজে বাইরের দৃশ্যাবলী দেখছিলাম আর
মনে মনে বলছিলাম প্রিয় জন্মভূমি, বড় বেশি
ভালোবাসি।
.
ঘণ্টা দেড়েক বাদে মেয়েটি আমার বমির জন্য
অপেক্ষা করতে করতে অতিষ্ট হয়ে শেষমেশ
জিজ্ঞেস করছে,
-এই যে?
-বলুন
-বমি কখন করবেন?
-পাশে সুন্দরী মেয়ে থাকলে আমার বমি হয় না
সেদিন।
-আচ্ছা!মনে মনে এই ছিল তবে?
-ভুল বুঝবেন না প্লিজ, কথা সত্য।
-কি চালাক আপনি!
.
তারপর কিছুটা পথ এগিয়ে গিয়ে হঠাৎ আটকে গেলাম
জ্যামে। ভীষণ গরম ভেতরে। দেখি মেয়েটার
মাথার ওপরে ফ্যান, আরামে বাতাস খাচ্ছে। মনে
মনে বলি সিট টা তো আমারই আর মেয়েটিকে বলি,
-শুনেন?
-বলুন।
-আপনার মনে হয় বমি বমি লাগছে, জানালার কাছে
এসে বসুন।
মেয়েটি আমার মতলব বুঝতে পেরে হাসি হাসি
মুখে জবাব দিলো,
-জি না সাহেব। আমার বমি বমি লাগছে না।
.
বাস আবার চলতে শুরু করল। হু হু করে বাতাস ঢুকছে।
ভেবেছিলাম দুনিয়ায় একা আমিই দুষ্ট কিন্তু দুষ্টুমিতে
এ মেয়েও কম যায় না। এবার মেয়েটি বলল,
-শুনেন?
-বলুন
-আমার আজ প্রথম বার বাসে বমি বমি লাগছে।
-হু, বুঝতে পেরেছি। সুপারভাইজারকে বলে দিচ্ছি
পলিথিন দেয়ার জন্য।
-কি খারাপ আপনি?
-কেন?
-আমার সিটে বসে আবার আমাকেই পলিথিন ধরিয়ে
দিচ্ছেন।
.
তারপর দুই মাস কেটেছে।
ঢাকায় এক কনভেনশন সেন্টারে আমার সবচেয়ে
কাছের বন্ধু ইফতির বিয়ে। বন্ধুরা সবাই মিলে মজা
করছিলাম এ ওর সাথে।
.
ওমা!
সেদিনের, বাসের সেই মেয়েটি। চোখে
খানিকটা ঢলাঘষা দিলাম। হ্যাঁ, সেই মেয়েটিই তো!
আমার কাছে এসে মেয়েটি জিজ্ঞেস করলো,
.
- এই যে মিস্টার!এমন ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে
আছেন কেন?
-আমার বয়সের দোষ।
-আপনার বাবা মা কে বলতে পারেন না বিয়ে
করবেন?
-আপনি রাজি হলেই বলব।
-মানে?
-আসলে বাবা মা আপনার মতন একজনকে খুঁজছে,
ছেলের জন্য। পাচ্ছে না তো তাই?
- কি অসভ্য আপনি!
-অসভ্য হলেও অন্যের প্লেটে ভাগ বসাই না আমি।
-মানে?
-চলুন, খেতে বসি।
.
মেয়েটির সাথে মুখোমুখি বসেছিলাম খাবার
টেবিলে, মেয়েটি মানে হৃদিতা। খাওয়ার এক
পর্যায়ে হৃদিতার দিকে তাকাতেই, চোখ মেরে
বসলো আমাকে। প্রথমে ভ্যাবাচ্যাকা খেলাম।
পরমুহূর্তে নিজেকে সামলে নিলাম।
এদিক ওদিক তাকিয়ে আবার তাকালাম হৃদিতার দিকে, আবার
চোখ মারলো মেয়েটি। এবার আমার গলা শুকিয়ে
কাঠ হলো, এক নিঃশ্বাসে বোরহানির গ্লাস শেষ
করলাম।
মনে মনে বলি ইট মারলে পাটকেল তো
খেতেই হয়! কি মেয়েরে বাপ!
.
বন্ধুদের কাছ থেকে বিদেয় নিয়ে বিকেল নাগাদ
চলে আসব।দেখি হৃদিতা ডাকছে পেছন থেকে।
-পালিয়ে যাচ্ছেন যে?
-মন চুরি করি নি তো। চোর নই।
- শখ কত!
-বুক ফুলিয়ে যাচ্ছি।
-হয়েছে। হয়েছে। আপনার বাবা মায়ের পছন্দ
হবার মতন মেয়ের কদর নেই বুঝি?
-ওসব এখন হবে না।
-কেন কেন?
-বাবা মা দুজনের চোখেই ছানি পড়েছে কিনা!
ভালো দেখতে পায় না। আগে অপারেশন করাই,
তারপর।
হৃদিতা হাসছে। মুক্তোর মতন দাঁত।
কথাও জানে,
-শুনেন মিস্টার! আমি কিন্তু ডাক্তার।
-মনের?
- উঁহু, চোখের।
-এই জন্যই তো সুনয়না।
-নেশা লেগেছে?
-হালকা হালকা।
-আর?
-পুরোটা বলুন। একটাও যেন বাদ না যায়।
-সিলেটে একটা বেসরকারি হাসপাতালে কর্মরত, ঢাকায়
বাসা। রুমকি মানে কনে আমার কাজিন।
-উঁহু, ওসব নয়।
-তবে?
-মোবাইল নাম্বার।
-ও! আচ্ছা! এতদূর?
-হু।
-দিতে পারি। শর্ত আছে।
-কি?
- মাঝরাতে যদি ফোন দিয়ে ডিস্টার্ব করেন।
-বেশ বেশ। আমি নিশাচর, সমস্যা নেই।
-আমিও রাত জাগি।
-চোখও ভালো মারেন।
-হাহাহা।
.
এভাবেই শুরু।
চোখে ধরা থেকে মনে ধরা, মনের মধ্যে
জায়গা করে দেয়া। লাবণ্যময়ীর সদা সহাস্য মুখ
আমাকে আর্কষিত করে, টানে। কিন্তু ভবঘুরে
আমি, ভুলে যাই না কথাটি।
সেদিন রাতে লিখছিলাম। হঠাৎ হৃদিতার ফোন।
.
-কি করেন জনাব?
-লিখছি।
-আমাকে নিয়ে লিখেন তো।
-কেন?
-আপনার কাছ থেকে প্রশংসা শুনতে ইচ্ছে
করছে।
-আমার কাছ থেকে কেন?
-শুনুন তবে।
-বলুন।
.
-যেদিন বাসে আপনি দুষ্টুমি করলেন আমার সাথে
সেদিন ঢাকায় ফিরেই রুমকির সাথে দেখা। রুমকি মানে
আপনার বন্ধুর বউ, আমার কাজিন। কাজিন হলেও বন্ধুর
চেয়েও বেশি কিছু। আমাকে জানালো ওর বিয়ে
ঠিক হয়ে গেছে। ছবি দেখাতে বললাম। ও চলে
গেল আপনার বন্ধুর ফেসবুক প্রোফাইলে।
.
ওমা! দেখি আপনার বন্ধুর সাথে আপনি ভেটকি
মেরে চেয়ে আছেন আমাদের দিকে। মানে
ছবিতে! বলেন তো? এ অবস্থায় আপনার
প্রোফাইল না ঘেটে পারা যায়?
.
দেখলাম। কি চমৎকার লিখেন আপনি! আপনার প্রকাশিত
লেখাগুলোও খুঁজে বের করলাম, অপ্রকাশিতও।
তারপর এই দুই মাস লুকিয়ে লুকিয়ে দেখেছি
আপনাকে, আপনার লিখা পড়তাম। ভাল লাগতো, একটা
আবেশ কাজ করত, ডুবে যেতাম। হঠাৎ মনে
হলো ভালোবেসে ফেলেছি।
.
আমি জানতাম আপনার সাথে দেখা হবে আমার, রুমকির
বিয়েতে। তাই সেদিন ওমন করে সেজেছিলাম,
আপনার মন ভোলাতে, আপনার চোখে পড়তে।
এবার বলুন এর চেয়ে সরল স্বীকারোক্তি আর কি
হতে পারে?
.
-আপনি ডাক্তার, লাবণ্যময়ী। আমি চালচুলোহীন।
এসবের পরিণয় নেই, অর্থহীন।
-আপনি চালচুলোহীন হলেই আমার সুবিধা বেশি।
-কেন?
-চুলো ধরাতে হবে না আমার, কষ্ট নেই।
-পেট তো ভরাতে হবে?
-ভরে যাবে হাওয়া খেতে খেতে। তাছাড়া আমি
সারাজীবন ডায়েট করব আপনার জন্য। চলবে
তো?
-হাহাহা। কি পাগলামো শুরু করেছেন? পরে কিন্তু
নিজে নিজে লজ্জা পাবেন। ছোট নন আপনি।
-হু, এই বয়সে আপনি আমাকে বেহায়া বানিয়েই
ছাড়লেন।
-ছাড়ুন তো। গা ঝারা দিন। এই ভূত নেমে যাবে।
.
হৃদিতার ভূত নামে না কিছুতেই, কদিনেই বেপরোয়া
হয়ে উঠলো। আমার নিজের দিক থেকে
অসুবিধে ছিলো। প্রথমত যেদিন পড়াশোনা শেষ
করে স্থির করলাম, লেখালেখিই ধ্যানজ্ঞান হওয়া চাই
সেদিন থেকেই আমি জানি আমার সংসার হবে না, হওয়া
সম্ভব না। লেখালেখির বাইরে আপনি অন্য কোন
কাজ করেন, পয়সা আছে। একটা লোন স্যাংশন
করে দিলেন পাঁচ পার্সেন্ট পাবেন, একটা ফাইল
আটকে রাখলেন পাঁচ হাজার পাবেন কিন্তু সারা রাত
জেগে একটা কবিতা লিখলেন কেউ আপনাকে পাঁচ
টাকাও দিবে না। কিন্তু সংসারে এই পাঁচ টাকার
প্রয়োজনই সবচেয়ে বেশি।
.
আমি এও জানতাম এ পথে হাটতে গেলে হোচট
খাওয়ার ভয় আছে। প্রথমে কেউ কেউ প্রেমে
পরবে, স্বপ্ন দেখাবে তারপর ব্যথা দিয়ে চলে
যাবে। এইসব দুঃখ কষ্টই হবে আমার এগিয়ে যাওয়ার
পুঁজি,মূলধন। এগুলোই আমি ফুটিয়ে তুলব আমার
লেখনিতে, শিল্পী যেমন তার চিত্রকর্ম ফুটিয়ে
তোলে তুলির আচড়ে।
.
কিন্তু হৃদিতা ক্রমশ পাগল হয়ে ওঠলো, কিছুতেই
মানছিলো না। তখন আমি কঠোর হলাম। তার দ্বিতীয়
কারণ হৃদিতাকে আমিও ভালোবেসে ফেলেছি।
আমি চাচ্ছিলাম না আমার মতো এক বাউণ্ডুলের সাথে
ওর জীবনটা জড়িয়ে যাক। ওর সুন্দর একটা ভবিষ্যৎ
আছে, আমি জানি। আমি বেশ পরিণত, জানি আবেগ
বেশিদিন টিকবে না। তাই কষ্ট হওয়া সত্ত্বেও,
এড়িয়ে গেলাম হৃদিতাকে।
.
তারপর অনেকদিন হৃদিতা আর ফোন দেয় না
আমাকে, ওর ফেসবুক আইডি ডিএক্টিভেট। কিন্তু
প্রায়ই ওর কথা মনে হয়, খারাপ লাগে। মানুষ তো
এমনি! কাছে থাকলে তার মূল্য বোঝে না, দূরে
গেলে ছটফট করে মরে। হৃদিতাকে কষ্ট দিয়েছি,
অপরাধীও মনে হতো নিজের কাছে,
নিজেকে। তাছাড়া কখনো ভাবতেও পারিনি হৃদিতার
ভালোবাসা এতটা ভোগাবে আমায়। জীবন চলার
পথে এমন কতই তো হয় কিন্তু সবই কি দাগ রেখে
যায়,যেতে পারে? কিন্তু হৃদিতা দাগ বসিয়ে
গেলো।হৃদিতাকে ভুলে যাওয়া সম্ভব হচ্ছিল না
কিছুতেই আমার।
.
হৃদিতার ফোন বন্ধ।
একদিন ধৈর্য বাধ ভেঙ্গে গেলো।
ছুটলাম ইফতির বাসায় রুমকির কাছে, হৃদিতার খোঁজে।
রুমকিকে কৌশলে জিজ্ঞেস করে জানতে পারলাম
সামনের মাসের চার তারিখ হৃদিতার বিয়ে।
.
হঠাৎ আমার কাছে সব কিছুই অর্থহীন মনে
হলো,,এই কবিতা লিখা, নিয়ম করে রোজ বেঁচে
থাকা। কি হয় এসব করে? কার জন্য? কবিগুরুর একটা
কবিতার দুটো লাইন খুব মনে পড়ছিলো,
এ জগতে সকলই মিথ্যে সব মায়াময়
স্বপ্ন শুধু সত্য আর সত্য কিছু নয়।
.
আমার স্বপ্নই নেই, কার জন্য বাঁচি?কার জন্য লিখি? রাগ
হলো নিজের ওপর। সব কিছুর প্রতিই কেমন বিতৃষ্ণা
চলে এলো। মনে হলো আমার ভেতরটা
ভেঙেচুরে গেছে,অবশিষ্ট নেই কিছুই।হতাশ
হয়ে পড়লাম। এই লেখালেখি, ভবঘুরে জীবন,
ব্যস্ত শহর, সামাজিক যোগাযোগ সব কিছু
ছেড়েছুড়ে চলে এলাম নিজের শহরে।
.
তারপর কি করে ছয় মাস কেটে গেছে জানি না।
সেদিন ভিক্টোরিয়া রোডে এক বইয়ের
দোকানে রাশেদ ভাইয়ের সাথে দেখা। রাশেদ
ভাই উতঙ্ক নামে পাক্ষিক একটা সাহিত্য সংকলন বের
করেন, তিনিই সম্পাদক।
আমাকে দেখেই বললেন, অরণ্য যে!
অনেকদিন খবর নেই। উতঙ্কে লিখা দিও।
বললাম, ভাই লেখালেখি ছেড়ে দিয়েছি। আজকাল
আমার আর কিছুই আসে না । মাঝেমাঝে আফিমের
নেশা হয় একটু আধটু,এই যা।
রাশেদ ভাই আমার কাঁধে হাত দিয়ে বললেন,
শোনো ছেলে তুমি যে সিগারেটও খাও না, আমি
জানি। সুবোধ ছেলের মতন লেখা পাঠিও, সম্ভব না
হলে অন্তত একটি কবিতা।
.
উতঙ্কে সেবারের সংখ্যায় বাউণ্ডুলে ছদ্মনামে
আমার একটা কবিতা বের হলো,
.
যদি হঠাৎ কোনদিন খুব সকালে ঘুম ভেঙে যায়
আর পৃথিবীর আলো বাতাস দেখতে না পাই
তবু তোমাকে দেখতে পাবো, ভীষণ
দেখতে পাবো
মনে করো যেন মহাবিশ্বে আর এক বিন্দু
আলোও
অবশিষ্ট নেই আর, কি ভয়ানক অন্ধকার!
আমি চোখ বুজে আছি, তোমাকে ঠিক দেখতে
পাবো।
.
মনে করো একদিন চোখের জ্যোতি কমে
এলো
হাটতে গেলে হোচট খাই, পা পিচলে পড়ে যাই
কেউ পেছন থেকে নাম ধরে ডাকলে খুঁজে
পাই না
তবু তোমায় দেখতে পাবো, ভীষণ দেখতে
পাবো।
.
মনে করো বাইরে হু হু ঝড় সব বাতি নিভে গেছে
সলতেটা এবং কি পৃথিবীর সব আগ্নেয়গিরি মরে
গেছে,
ভিসুভিয়াসও জ্বলছে না, জোনাকী ভুলেছে
নিজস্বতা
তবু তোমায় দেখতে পাবো, ভীষণ দেখতে
পাবো।
.
মনে করো একদিন সূর্যের সাথে চাঁদের আড়ি
পূর্ণিমাকে গিলে খেয়েছে ঘোর অমাবস্যা
মনে করো একদিন নাবিকেরা আকাশের তারা চিনে
না
দূরের বাতিঘর অস্পষ্ট দেখায়
তবু দেখতে পাবো তোমায়, ভীষণ দেখতে
পাবো।
.
এরপর আরো পনের দিন কেটেছে।
উতঙ্কের পরবর্তী সংখ্যা বের হয়েছে। আমার
কোন লিখা নেই তাতে। তবু বরাবরের মত রাশেদ
ভাই আমার জন্য এক কপি পাঠিয়েছেন। সেটিই
নেড়েচেড়ে দেখছিলাম সেদিন রাতে, ঘুমানোর
আগে।
দেখি বাউণ্ডুলের লক্ষ্ণী ছদ্মনামে কেউ
একজন লিখেছে,
.
তুমি দেখে নিও
আমি তোমার চোখের আলো হয়ে রবো
জ্যোতির্ময় সকাল হবো
ভীষণ অন্ধকারে তোমার পথের দিশা হবো
পৃথিবীর প্রান্তে প্রান্তে তুমি হেটে গেলে
আমি তোমার ছায়া হবো
আর তুমি ঠিক দেখতে পাবে।
.
প্রচণ্ড ঝড়ে সব বাতি নিভে গেলে
যদি নিভে যায় দীপ শিখা
ধরো, তুমি আর পথ চেনো না
আমি বিজলি হয়ে আসব
তোমার চোখে আলোর ঝলকানি হবো।
.
ধরো ভিসুভিয়াস, আগ্নেয়গিরি সব মরে গেছে
জোনাকি নেই আর একটিও অমাবস্যা রাতে
আমি আলেয়া হয়ে জ্বলে উঠব,আলো হয়ে
বেঁচে রবো
তোমার জীবনে ভোর হবো,কলরব হয়ে
আসবো।
.
-বাউণ্ডুলের লক্ষ্ণী!
.
রাত বারোটার সময় রাশেদ ভাইকে ফোন দিলাম।
জানতে চাইলাম কে এই বাউণ্ডুলের লক্ষ্ণী?
রাশেদ ভাই জানালো এই লিখাটা ডাকযোগে
এসেছিলো, আমার কাছেও খটকা লেগেছিল।
তাই,এড্রেস রেখে দিয়েছি।
আমি রাশেদ ভাইকে এড্রেসের জন্য তাড়া দিলাম।
রাশেদ ভাই আমাকে যে এড্রেস দিলেন সেটা
একটি বৃদ্ধাশ্রমের।
.
কাক ডাকা ভোর।
মেইন ফটক পেরিয়ে বৃদ্ধাশ্রমের সামনে
দাঁড়িয়েছি। বারান্দায় হুইল চেয়ারে বসে আছেন এক
বৃদ্ধা, জননী। হৃদিতা সেই মায়ের চোখে ড্রপ
দিয়ে দিচ্ছে। ভূত দেখার মতন চমকে ওঠলাম।
হৃদিতা খুব স্বাভাবিকভাবে জবাব দিলো, চোখের
ডাক্তার, আলো ছড়ানোই কাজ আমার।
বললাম, এ জন্যই ডাক্তাররা শ্রেষ্ঠ, সেবাই
যেখানে ধর্ম।
.
হৃদিতা আমাকে ছাদে নিয়ে এলো।
জানতে চাইলাম, এসবের মানে কি?
-আপনার বিরহে আমি তখন পুড়ছি, দিনে রাতে। তবু
চাপা অভিমান হলো আপনাকে আর বিরক্ত করব না। বাবা
মা আমার মনের অবস্থা বুঝতে পারলেন। বিয়ের
জন্য তাড়া দিচ্ছিলেন। বিয়ে ঠিকও হলো। কিন্তু
ছেলে ইঞ্জিনিয়ার হলেই তো আর বড় মনের
মানুষ হয় না। তথাকথিত শিক্ষা আমাদের লেবাস পালটায়
মাত্র, ভেতরটা বদলায় কতখানি? জানেন? এ যুগেও
বিয়ের ঠিক কদিন আগে যৌতুক দাবী করলেন।
সেই পরিবারের বউ হবার সাধ মরে গেলো।
.
-তারপর?
.
- একটা ধাক্কা খেলাম।জীবনটা গুছিয়ে নেয়া ঠিক
অতটা সহজ নয়। সিদ্ধান্ত নিলাম, সেবাই হোক ব্রত।
বিয়ে সংসার ছাড়াও জীবন পার করে দেয়া যায়।
এরই মধ্যে রুমকি আর ইফতি ভাইয়ার সাথে দেখা।
আপনার কথা বললেন ওরা। রুমকি কি বুঝেছিল কে
জানে! বলল, ছুড়ি! তোর বিরহে মনে হয় কাতর
ছেলেটা!
.
-তারপর?
.
-তারপর খুব সহজ। ইফতি ভাইয়ার কাছ থেকে আপনার
এড্রেস নিলাম। কিন্তু জানালাম না আপনাকে কিছুই।
সময় নিচ্ছিলাম, আপনাকে দিচ্ছিলাম। দূর থেকে
দেখছিলামও আপনাকে।। উতঙ্কে লেখা বের হয়
আপনার সেটাও জানলাম।এরই মধ্যে আপনার শহরে
এই বৃদ্ধাশ্রমও খুব আপন হয়ে গেল আমার।
.
বিশ্বাস ছিল আপনি ফিরবেন, দেখলেন তো সত্যি
হয়ে এলেন।বলতে বলতে হৃদিতা আমার হাত
নিজের হাতের মুঠোয় পুরে নিলো। আমি ভণিতা
করে বললাম,
- এই! এই! কি করছেন? লেখক হলেও কিন্তু লম্পট
নই আমি।
-আমি জানি তুমি লম্পট নও, অসভ্য খুব।
.
এরপর?
.
হৃদিতা আমার কাঁধে মাথা রাখলো। মনে হলো,
পৃথিবীতেই স্বর্গ আছে।
.
বিভ্রান্ত বাউণ্ডুলে।
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now