বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা
আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ
X
জীবনের প্রথম প্রেম পত্র পেয়েছিলাম এক
হিন্দু ধর্মের মেয়ের কাছ থেকে। মেয়েটির
নাম চামেলী মজুমদার জুঁই। তার বাড়ি নড়াইল জেলায়
অার অামার বাড়ি নরসিংদী।
তখন বাংলালিংক থেকে দুই টাকা চুয়াল্লিশ পয়সা দিয়ে
একশত এস এম এস ক্রয় করা যেত। অামি একটি এস
এম এস ক্লাবে যুক্ত ছিলাম। সেই ক্লাবের সদস্য
ছিল অাটত্রিশ জন। বিভিন্ন জেলার ছেলে মেয়ে
নিয়ে গঠিত ছিল আমাদের "বাঁধন" নামের ক্লাবটি।
সেই ক্লাবেরই সদস্য ছিল জুঁই।
.
এস এম এস দিয়ে চাট করতে করতে এক সময় ভাল
বন্ধুতে রুপান্তরিত হলাম। বন্ধুত্বের সাত মাসের
মাথায় সে একদিন বলতেছে,
"অামার খুব ইচ্ছে কেউ অামাকে চিঠি লিখুক। তুমিতো
অামার ভাল বন্ধু, তুমি কি অামাকে একটি চিঠি লিখবে? "
সেই কথার প্রেক্ষিতেই তাকে গুছিয়ে একটি চিঠি
লিখেছি। তবে সেটা প্রেমপত্র ছিলনা। বন্ধুকে যা
বলা যায় তেমনি একটি চিঠি। অার চিঠির ভিতরে ছিল কাজ
করা দুইটা চুড়ি। আমি অাবার চুড়ির মধ্যে দুই রঙ্গের
সূতো দিয়ে ইংরেজী অক্ষরে যে কারো নাম
লিখতে পারি।
তাই চুড়ি দুটিতে লিখেছিলাম, ★SRAVON★JUI★
এক সপ্তাহ সময় লেগেছিল চিঠিটি পৌছতে। জুঁই
এতটাই খুশি হয়েছিল যে টানা এক মাস শুধু চুড়ির প্রশংসাই
করেছে।
.
একদিন অচেনা নাম্বার থেকে একটি ফোন অাসে।
রিসিভ করে জানতে পারলাম সুন্দরবন কুরিয়ার
সার্ভিসের নরসিংদী শাখায় অামার একটি চিঠি অাছে, অামি
যেন গিয়ে নিয়ে অাসি। চিঠি এনে ঘরে গিয়ে
খুললাম। একটি চিঠি অার সাথে একটি রুমাল।
রুমালটিতে পুঁথি দিয়ে কাজ করে লিখা, "ভুলনা অামায়"
অার চিঠিতে সুন্দর উপমা দিয়ে লিখা জুঁই অামাকে কতটা
ভালবাসে। অার চিঠিতেই সে অামাকে প্রেম
নিবেদন করে। চিঠিতে এটাও লিখা ছিল, "আমি তোমার
ফোনের অপেক্ষায় থাকব।"
ফোন দেয়ার অাগে ভাবতেছি এটা কি করে সম্ভব?
দুজন কেউ কাউকে দেখিনি। দুজন দুটি ধর্মের।
এই প্রেম কিকরে পরিপূর্ণতা পাবে?
একটু সাহস নিয়েই জুঁইকে ফোন দিয়েছি। সুন্দর
করে গুছিয়ে কথাগুলো বলে বুঝাতে চেয়েছি,
"জুঁই তুমি অামাকে কখনো দেখোনি। আমরা দুজন
দুই ধর্মের। অামার আর তোমার সমাজ এই সম্পর্ক
কিছুতেই মেনে নেবেনা। তুমি অাবেগের
মোহে পড়ে অন্ধ হয়ে ভালবাসতে চাইছো।
চিন্তা করে দেখো অামরা কত ভাল বন্ধু। সারাটা
জীবন এমনি করে বন্ধু হয়ে থাকোনা। "
হঠাৎ ধুকরে ধুকরে কান্নার শব্দ পেলাম। "কি
হয়েছে জুঁই, তুমি কান্না করছ কেন?"
জুই কান্নারত অবস্থাতেই জবাব দিল...
"শ্রাবণ আমি কিছু জানিনা। শুধু জানি তোমাকে অনেক
ভালবেসে ফেলেছি। তোমার সাথে একটু কথা
বলার জন্য অধীর অাগ্রহে অপেক্ষা করি। সর্ব
কাজে তোমার কথাই মনে পড়ে। রাতে
ঘুমোতে গেলে কত রকমের স্বপ্ন সাজাই
তোমাকে নিয়ে। এই সব তোমার কাছে অাবেগ
মনে হয়? অামি সত্যি বলছি তোমাকে অনেক
ভালবাসি।"
এই মূহূর্তে তাকে কি বলব বুঝতে পারছিনা। তবুও
ভেবে দেখলাম সারাজীবনের কান্নার চেয়ে
এখন একটু কান্না করুক। তাই আবারো বললাম,
"জুঁই আমি বুঝতে পারছি সবটাই তোমার মনের
গভীরের ভালবাসা। কিন্তু এই ভালবাসাটা সমাজের
চোখে অন্যায়। "
--- কেন শ্রাবণ? ভালবাসা অন্যায় হবে কেন? আমরা
যদি এই সমাজ ছেড়ে অন্য কোথাও চলে যাই,
অনেক দূরে?
--- না জুঁই। তোমার কথাই চিন্তা করো। তোমার বাবা
মা তোমার জন্মের পর থেকে তোমার জন্য কত
কষ্ট করেছেন। কত স্বপ্ন তোমাকে নিয়ে।
এমনি করে অামার বাবা মা, ভাই বোন, আত্মীয়স্বজন,
সবার মনে কষ্ট দিয়ে চলে যাই কি করে?
--- আমি কিছু জানিনা, অামি তোমাকে ভালবাসি।
কথাটা বলেই ফোন রেখে দিল জুঁই। চিন্তা করে
দেখলাম এখন আর ফোন দেয়া ঠিক হবেনা।
আস্তে অাস্তে ঠিকই সে বুঝতে পারবে।
.
★ ★ ★
জুঁইকে অামি অার কখনোই বুঝাতে পারিনি। যখনই
ফোন দিত বা অামি দিতাম, দুই চার মিনিট কথা বলেই
আবারো একই কথা। "চলোনা শ্রাবণ আমরা অনেক
দূরে চলে যাই। "
প্রতিবারই যখন আমি বুঝানোর চেষ্টা করতাম তখনই
কান্না করে ফোন রেখে দিত।
.
আস্তে অাস্তে জুঁইয়ের সাথে কথা বলা কমে
যেতে লাগল। অামার ফোন সে রিসিভ করেনা।
এমনকি সেও ফোন দেয়না। মাঝে মধ্যে ফোন
রিসিভ করলে যদি জানতে চাইতাম, " কি ব্যাপার তুমি
ফোন রিসিভ করোনা কেন? "
জবাবে বলত, " তোমার সাথে কথা বললে আমার
কষ্ট হয়, কান্না অাসে। রাগ হয় এটা ভেবে যে,
কেন তুমি অামার মত করে অামাকে ভালবাসতে
পারোনা?
তারপর থেকে বছরে হয়তো দুই ঈদে আর অামার
জন্মদিনে অামাকে অচেনা নাম্বার থেকে ফোন
দিত। আর জুঁইয়ের ফোন নাম্বারটি পরিবর্তন করে
ফেলেছিল।
একটা চাপা কষ্ট মনে ছিল অামার। প্রেমের কারনে
সুন্দর বন্ধুত্বটা নষ্ট হল।
.
★ ★ ★
দুই বছর ধরে জুঁইয়ের সাথে অামার যোগাযোগ
নেই।
ফোনবুকে কারো নাম্বার সেভ করলেই ইমু
সফটওয়্যার থাকলে তাকে পাওয়া যায়। হয়তো জুঁই
আমার নাম্বারটি সেভ করেছিল।
হঠাৎ অপরিচিত ভিডিও কল আসাতে আমার মোবাইলের
সামনের ক্যামেরায় বৃদ্ধাঙ্গুল রেখে ফোন রিসিভ
করলাম।
দেখতে পেলাম একটি মেয়ে। তার কোলে
ফুটফুটে এক শিশু। আমি কিছু বলার অাগেই সে সহজ
ভঙ্গিতে বলে উঠল,
" এই শ্রাবণ হাত সরাও বলছি। আমি তোমার বন্ধু জুঁই"
হতবাক হওয়া ছাড়া উপায় ছিলনা। কখন যে অাঙ্গুলটি
সরালাম নিজেও জানিনা। জুঁই আবার বলতেছে,
" কি ব্যাপার ভুলে গেলা? আমাকে চিনতে পারছনা? "
কথা না বলে মাথা ঝাঁকি দিয়ে বুঝালাম চিনতে
পেরেছি।
এবার ফোনটি কেটে দিয়ে অডিও কল দিল জুঁই।
--- জানো শ্রাবণ আমার বিয়ে হয়েছে। আমার
কোলে আমার ছেলে। তোমাকে জানাতে পারিনি
বলে রাগ করোনা। কেমন অাছো?
--- ভাল। তোমাকে এই জীবনে দেখতে পারব
ভাবিনি।
--- এবারতো দেখছ? আর তোমাকে দেখার
স্বাদও পূরণ। এই জানো? আমরা কিন্তু কলকাতায় থাকি।
--- তোমার স্বামি কি করে?
--- ব্যাবসা করে। খুব ভাল স্বামী পেয়েছি।
তোমার কথাও বলেছি প্রীতূষকে। তোমাকে
লিখা অামার প্রথম প্রেম পত্রটার কথাও বলেছি।
তোমার সেই সিদ্ধান্তকে অামার স্বামী স্যালুট
জানিয়েছে। আর তোমার দেয়া চুড়ি দুটো
এখনো অাছে অামার কাছে। তুমি মনে হয় অামার
রুমালটি রাখোনি তাইনা?
--- দুই মিনিট পর ফোন দিচ্ছি।
বলে ফোন রেখে দিলাম। দৌড়ে গিয়ে বাক্সের
তালা খুলে রুমালটি বের করে জুঁইকে ভিডিও কল
দিলাম।
রিসিভ করার সাথে সাথে রুমালটি উঁচু করে দেখিয়ে
বললাম,
--- দেখোতো চিনতে পারো কিনা?
--- তার মানে তুমি অামাকে ভুলে যাওনি?
--- রুমালেতো লিখা " ভুলনা অামায়"। তো ভুলে যাই
কিকরে?
--- দাড়াও একটু।
জুঁই তার ছেলেকে এক হাতে কোলে রেখে
শাড়ীর আচল থেকে চাবি নিয়ে অালমারী খুলে
চুড়ি বের করে দেখাল।
--- এবার দেখোতো তুমি চিনো কিনা?
জানিনা কেন যেন দুটি চোখ ভরে গেল পানিতে।
অনেক কথাই বললাম জুঁইয়ের সাথে। বন্ধনগুলো,
সম্পর্কগুলো মনে হয় এমনি করে বেঁচে থাকে
অাজীবন।
.
.
লেখনীর শেষ প্রান্তে,,,,,,,,,
,,,,,,, Mohammad Omar Faruq(শ্রাবণ)
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now