বাংলা গল্প পড়ার অন্যতম ওয়েবসাইট - গল্প পড়ুন এবং গল্প বলুন

বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা

আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ

ঘোর নিশুতি----- ৩ পর্ব

"রোমাঞ্চকর গল্প " বিভাগে গল্পটি দিয়েছেন গল্পের ঝুরিয়ান রিয়েন সরকার (০ পয়েন্ট)

X (অতিপ্রাকৃত থ্রিলার) " ঘোর নিশুতি " শাহ মুহাম্মদ মোশাহিদ -------------------- (৩য় ও শেষ পর্ব) নয়. দরজা ঠেলতেই নজরুলসঙ্গীত- ‘রুমঝুম রুমঝুম রুমঝুম ঝুম। খেঁজুর পাতার নূপুর বাজায়…’ তন্ময় হয়ে শুনছেন প্রফেসর ফিহির হোসাইন। ওরা যে দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকেছে টেরই পাননি তিনি। দু’চোখ বন্ধ। হেলান দিয়ে আছেন চেয়ারে। দুই হাতলে ছড়িয়ে দুই হাত। গানের তালে তালে নড়ছে টেকো মাথা। সামনের দিকটায় চুল একেবারেই নেই। চোখ চাওয়াচাওয়ি করলো মাশরাফি আর মুমিতু। সম্ভবত দু’জনেই একমতÑ এটা হলো সুখটাক। গান বাজছে পেছনের কম্পিউটার থেকে। ভদ্রলোকের চেয়ারের পেছনে, ঠিক দেয়াল লাগোয়া একটি কম্পিউটার টেবিল। স্কয়ার সাইজের এলসিডি মনিটরে লাফালাফি করছে রঙবেরঙের ভিসুয়ালাইজেশন। টেবিলটার পাশেই বই ঠাঁসা কাঠের আলমিরা। ঘরজুড়ে বেলি ফুলের গন্ধ। মৃদু শব্দে এসি চলছে। মনোরম, শীতল কামরা। পেছন দিকটায় জানালা, নীলাভ পর্দায় ঢাকা। হাতের ডানদিকে একটি র্যাক। ওখানে সাজানো প্রয়োজনীয় কিছু জিনিস। একটি বড়সড় টেবিল সামনে নিয়ে তিনি ঘুমুচ্ছেন। ঘুমুচ্ছেন বললে ভুল হবে, সুরের লহরিতে ভাসছেন। তবে জলজ্যান্ত দু’টি মানুষের আগমন টের পেয়েছেন কি না, তা ঠিক ধরা যাচ্ছে না। টেবিলের সামনে তিনটি চেয়ার। ভয়ে ভয়ে দু’টি দখল করে বসলো মাশরাফি ও মুমিতু। তবুও চোখ খুলছেন না প্রফেসর। কিছুই মাথায় ঢুকছে না ওদের। অথচ পিয়ন ছেলেটা তাড়া দিয়ে ভেতরে ঢুকিয়ে দিলো। বললো, তিনি নাকি ওদের জন্য অপেক্ষা করছেন। এই তাহলে অপেক্ষার নমুনা! চোখ স্থির হলো টেবিলটায়। ভদ্রলোকের হাতের ডান দিকে ডেস্ক ক্যালেন্ডার, ডেস্ক ক্লক, স্লিপ বক্স। বাম দিকে দু’টি ফোল্ডার। আর সামনে পড়ে আছে পাতলা একটি ফাইল। মুমিতুদের হাতের কাছেই ছোট একটি পেপারওয়েট। দেখলেই খেয়ে ফেলতে ইচ্ছে করে। পুডিং এর মতো থকথকে মনে হলেও এটা আসলে পাথরের তৈরি। একবার প্রফেসরের চোখ পর্যবেক্ষণ করলো মুমিতু। তারপর আস্তে করে পেপারওয়েটটা চালান করে দিলো পকেটে। চোখ রাঙিয়ে আপত্তি জানালো মাশরাফি। আরো কিছুক্ষণ গান, ভদ্রলোকের মাথার দুলোনি এবং ওদের চুপচাপ অপেক্ষা। তারপর আচমকা সোজা হয়ে বসলেন প্রফেসর ফিহির হোসাইন। থতমত খেলো মাশরাফি ও মুমিতু। গানের শব্দ নেই। মনিটরের ভিসুয়ালাইজেশন স্থির। স্থির ওরা দুইজন এবং ফিহির হোসাইনও। তিনি ছোট ছোট চোখ করে তাকিয়ে আছেন ওদের দিকে। তারপর আদুরে গলায় জিজ্ঞেস করলেন, তোমাদের মধ্যে কে মুমিতু…? মাশরাফি আঙুল তুললো মুমিতুর দিকে। মুমিতু নির্বিকার। তাকিয়ে আছে ফিহির হোসাইনের চোখে। প্রফেসরের এমন আদুরে গলা পছন্দ হলো না ওর। নিজেকে কেমন বাচ্চা বাচ্চা মনে হলো। আর যাই হোক, কেউ ওকে বাচ্চা মনে করলে সহ্য করতে পারে না সে। তুমিই তাহলে সেই দেবতা? মুমিতুর মেজাজ গেলো বিগড়ে, আপনি পাগলের ডাক্তার, সেটা শুনেছি। কিন্তু নিজেও যে এক পাগল তা জানতাম না। পরিমিত হতে ইশারা করলো মাশরাফি। ভ্রƒ কুঁচকে গেলো প্রফেসরের। এক দৃষ্টিতে কুঁচকানো কপাল নিয়েই কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলেন তিনি। তারপর বললেন, আচ্ছা, বেদন সাহার সাথে তোমার ঝামেলাটা বাধলো কী নিয়ে? আকাশ থেকে পড়লো ওরা, বেদন সাহা আবার কে? কেন, যে লোকটাকে তোমরা পুলিশে দিলে! ও আচ্ছা, টুকটাক। এই টুকটাক লোকটার নাম তাহলে বেদন সাহা! বললো মুমিতু। হাসি ধরে রাখতে পারলো না মাশরাফি। টুকটাক মানে? প্রশ্ন করলেন ফিহির হোসাইন মানে আপনি বুঝবেন না, মুখের ওপর বলে দিলো মুমিতু। বুঝিয়ে বললেইতো বুঝতে পারি। সেটা বোঝার ক্ষমতা আপনার নেই। তুমি কি জান, কার সামনে বসে কথা বলছ? হ্যাঁ, জানি। আমরা যার সামনে বসে আছি তার নাম ফিহির হোসাইন। তিনি একজন মনোবিজ্ঞানি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর। তার কাছে পরামর্শ নিতে আসেন পাগল ও অর্ধ পাগলরা। তুমি কি পাগল, নাকি অর্ধপাগল? রসিকতা করলেন প্রফেসর। কেন, আমি পাগল হতে যাব কেন? তাহলে আমার সামনে বসে আছো যে? আপনি আমাকে ডেকে পাঠিয়েছেন, তাই এসেছি। কেন ডেকে পাঠিয়েছি সেটা জান? জানি না, তবে অনুমান করতে পারছি- পাগলরূপী একটা প্রতারককে আমরা পুলিশে ধরিয়ে দিয়েছি বলে। একটা নয়, হাজারটা পাগলকে পুলিশে ধরিয়ে দিলেই বা আমার কী আসে যায়? তাহলে আমাকে তলব করেছেন কেন? চুপ হয়ে গেলেন প্রফেসর ফিহির হোসাইন। মাশরাফি হা হয়ে তাকিয়ে আছে ওদের দিকে। একজন প্রফেসরের সাথে মুমিতু যে ভাষায় কথা বলছে, মোটেও ভালো লাগছে না তার। তবুও করার কিছু নেই। মুমিতুর সাথে যেহেতু এসেছে, ওর মতের উল্টো কিছু করা যাবে না। এখানে সে নীরব দর্শক ছাড়া আর কিছুই নয়। এর মধ্যে কয়েকবার চেয়ারে হেলান দেয়ার চেষ্টা করলেন প্রফেসর। মনে হলো যুতসই হচ্ছে না। এবার টেবিলের দিকে ঝুঁকে এলেন তিনি, বেদন সাহাকে আমার দায়িত্বে ছেড়ে দিয়েছে পুলিশ। সেটাতো দেবেই, পাগলকে তো পাগলের ডাক্তারের কাছেই পাঠাবে। তুমি কী নিশ্চিত ও পাগল? ভাবের পাগল। পাগল সেজে প্রতারণা করে বেড়ায়। মানুষকে বিপদে ফেলে টাকা আদায় করে। তক্কে তক্কে থাকে। চুরি করার সুযোগ খোঁজে। এতো কথা বলো কেন ছোঁকড়া? আচমকা ধমকে উঠলেন প্রফেসর। চুপ মেরে গেলো মুমিতু। প্রফেসরের কুঁচকানো চেহারা দেখে বুঝতে পারলো একটু বেশিই বাড়াবাড়ি হয়ে গেছে। কয়েক সেকেন্ড পর চেহারা সহজ হয়ে এলো। আশ্বস্ত হলো মুমিতু। আচ্ছা বাদ দাও বেদন সাহার কথা। কফি খাবে? হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়লো মুমিতু। বেল চেপে ডাকলেন পিয়ন ছেলেটাকে। তিনটি কফির কথা বললেন। তারপর সামনে রাখা এক টুকরো কাচের ওপর আঙুল দিয়ে টোকা দিতে লাগলেন। যেন একেকটি টোকায় একটি করে আইডিয়া খুঁজে পাচ্ছেন। কিছুক্ষণ পর বড়সড় মগ ভর্তি কফি চলে এলো। আগে চুমুক দিলেন ফিহির হোসাইন। আচ্ছা প্রফেসর, আমি কি একটা প্রশ্ন করতে পারি? কেন নয়! হাজারটা প্রশ্ন কর। আপনি কী আমাকে কাউন্সেলিং করছেন? ফিহির হোসাইন চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালেন। পায়চারি করতে আরম্ভ করলেন। দুই হাত সামনের দিকে ভাঁজ করে টেবিল থেকে আলমিরা পর্যন্ত কয়েক চক্কর দিলেন। তারপর টেবিলে দু’হাতে ভর দিয়ে কুঁজো হলেন মুমিতুর দিকে। চোখে বিস্ময়- এই যে খোকা, আমাকে যেন কী প্রশ্ন করেছো তুমি? জিজ্ঞেস করেছিলাম, আপনি কি আমাকে পড়ার চেষ্টা করছেন? আমার কাজই তো অন্যকে পড়া। কখনো কী নিজেকে পড়ে দেখেছেন? বাহ, ভালো কথা বলতে পারোতো তুমি! তোমার কী মনে হয়? আমার মনে হয় নিজেকে পড়ার ক্ষমতা কারো নেই। টেবিল কাঁপিয়ে হা হা করে হাসলেন প্রফেসর ফিহির হোসাইন। তারপর শান্ত হয়ে বসলেন চেয়ারে, নিজেকে পড়ার ক্ষমতা থাকুক আর নাই থাকুক তোমাকে পড়ার ক্ষমতাটুকুতো আছে আমার, নাকি? আর কী কী ক্ষমতা আছে আপনার? এই ধরো আমি চোখ বন্ধ করে বলে দিতে পারবো, তোমার বুক পকেটে যা আছে সেটা পুডিং নয় একটা পেপারওয়েটমাত্র। থতমত খেলো দু’জনই। তাপরও ঝটপট নিজের বুক পকেটটা দেখে নিলো মুমিতু। মাশরাফিও তাকিয়ে আছে ওদিকে। ওরা বোঝার চেষ্টা করলো, বাইরে থেকে পেপারওয়েটটা দেখা যাচ্ছে কি না। কিভাবে জানলাম, এই প্রশ্নটাইতো করবে? ওদের মনের কথা পড়তে পারলেন প্রফেসর। এটাইতো আমার ক্ষমতা। একদিনে অর্জন করিনি, বহু সাধনার ফল। মুমিতুর কাছে মনে হলো, হেরে যাচ্ছে সে। নাহ, কোনোভাবেই এই সুখটাকওয়ালা পাগলের ডাক্তারের কাছে পরাজয় মানা যাবে না। তাই কথা ঘুরিয়ে প্রফেসরকে খেপানোর চেষ্টা করলো সে, আরো দু’একটি ক্ষমতার উদাহরণ দেখান না। টোপ গিললেন প্রফেসর। সাথে সাথে বলে উঠলেন অন্য আরেক ক্ষমতার কথা, মেডিটেশন করে তোমাকে এখন ঘুম পাড়িয়ে দিতে পারি আমি। ঠোঁটের কোনায় হাসি দেখা দিলো মুমিতুর। প্রফেসরকে ঘায়েল করার যুতসই একটা সুযোগ পেলো সে- ও…উ মেডিটেশন! মেডিটেশন করে আমাকে ঘুম পাড়িয়ে দেবেন? হ্যাঁ তোমাকে ঘুম পাড়িয়ে দেবো। ঘুমতো ভালো জিনিস। আমি এখন ঘুমানোর জন্য প্রস্তুত। মাশরাফি, তুমি কি একটু বাইরে অপেক্ষা করতে পারবে? অবশ্যই পারবো, বলে বিনয়ের সাথে উঠে দাঁড়ালো মাশরাফি। ফিহির হোসাইন অভয় দিলেন, বেশি সময় লাগবে না। কিছুক্ষণ পর আমিই তোমাকে ডাকবো। চেয়ার ছেড়ে দরজার দিকে যাওয়ার সময়ই নিভে গেলো কামরার বাতি। তারপর মাশরাফিকে বাইরে এগিয়ে দিয়ে ভেতর থেকে দরজা বন্ধ করে দিলেন প্রফেসর ফিহির হোসাইন। মাশরাফির অপেক্ষা ওয়েটিং রুমে। একেকটি মিনিটকে মনে হচ্ছে ঘণ্টা। ভেতরের অবস্থা কী অনুমান করা যাচ্ছে না। ইস, কামরার এক কোনে তাকেও যদি দাঁড়ানোর অনুমতি দিতেন প্রফেসর। মুমিতুকে কী করে ঘুম পাড়ায় সে দৃশ্যটা হতো দেখার মতো। সবসময় নিজের বাহাদুরি। মেডিটেশন করে মাশরাফিকে নিয়ে চলে যায় মনের বাড়িতে। ওর ভেতর থেকে গোপন কথা বের করে মজা নেয়। এবার হবে উচিত শিক্ষা। ওস্তাদের উপরও ওস্তাদ আছে। সময় গড়াচ্ছে। এক, দুই, তিন করে তিরিশ মিনিট পার হয়ে গেলো। কোনো খবর আসছে না ভেতর থেকে। পিয়ন ছেলেটা বাইরে থেকে দরজা আগলে দাঁড়িয়ে। মুমিতু কি এখন ঘুমিয়ে পড়েছে, নাকি আরো কিছুক্ষণ সময় নেবে? ঘুমন্ত অসহায় মুমিতুকে দেখার জন্য উদগ্রীব হয়ে আছে মাশরাফি। আর কতক্ষণ? আরো মিনিট দশেক অপেক্ষা করতে হলো তাকে। তারপর খট করে খুলে গেলো দরজা। প্রফেসর নন, ভেতর থেকে বেরিয়ে এলো মুমিতু, পাগলের ডাক্তারকে ঘুম পাড়িয়ে দিলাম। মানে? মানে বাসায় গিয়ে বলছি। চল এবার। অনেকক্ষণ হলো এখানে এসেছি, বলে মাশরাফিকে টানতে টানতে বাইরে হাঁটা ধরলো মুমিতু। যাওয়ার আগে অন্ধকার কামরাটার দিকে একবার চোখ ঘুরালো মাশরাফি। চেয়ারে হেলান দিয়ে আরাম করে নাক ডাকছেন প্রফেসর ফিহির হোসাইন। দশ. কামিনী ফুলের কড়া গন্ধ মাতাল করে তুলেছে জাফরকে। কামরার সামনেই বারান্দা। বারান্দার পাশ ঘেঁষে পেঁচিয়ে পেঁচিয়ে বেড়ে উঠেছে গাছটা। কাচ ভাঙা জানালা দিয়ে আসছে মাতাল ঘ্রাণ। বাইরে ডানা ঝাপটাচ্ছে রাতজাগা পাখি। কলজে কাঁপানো স্বরে ডাকছে পেঁচা। থেকে থেকে বেজে উঠছে পুলিশের টহলবাঁশি। আর বিছানায় শুয়ে ঘুমানোর চেষ্টা করছেন জাফর হায়দার। ঘুম এসেও আসছে না। কাল সকালেই সুরাইয়া বুবুকে নিয়ে চলে যেতে হবে ঢাকায়। ভেবেছিলেন কিছুদিন থেকে পিশাচ রহস্যের একটা কিনারা করে যাবেন। কিন্তু চান্দেরটেকের সহজ সরল মানুষগুলো উল্টো তাকেই সন্দেহ করে বসলো। এরচেয়ে দুর্ভাগ্য আর কী হতে পারে। দীর্ঘশ্বাস ফেললেন তিনি। তারপর একরকম জোর করেই চোখ দুটো বন্ধ করতে চাইলেন। কিন্তু আবার সেই বীভৎস দৃশ্য! এবার পিশাচটা চলে এসেছে বাড়ির ভেতর। একেবারে জাফর হায়দারের শিয়রে। দাঁড়িয়ে আছে মাঝারি শরীর নিয়ে। হুবহু সেদিনের সেই রিকশাওয়ালাটা। ঘাড়ে ঘোড়ার মতো কেশর। কাঁচাপাকা দাড়ি বেয়ে ঝরছে রক্ত। পায়ের দিকে তাকালেন তিনি। হ্যাঁ, ঘোড়ার মতো ক্ষুর। তবে আরো তীক্ষè ও সূঁচালো। মুখে কোনো কথা নেই। বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে রইলো কয়েক সেকেন্ড। তারপর হাত এগিয়ে দিলো জাফর হায়দারের গলার দিকে। তড়াক করে তিনি উঠে গেলেন বিছানা ছেড়ে। লাফ দিলেন কাপড় রাখার হ্যাঙ্গার লক্ষ্য করে। মাপ মতোই হলো। পাগলের মতো টেনে নামালেন ব্ল্যাকস্যুট। পকেট হাতড়ালেন। নেই, লাইটারটা পকেটে নেই। তাহলে কোথায়? প্যান্ট-শার্টের পকেট তছনছ করে খুঁজলেন। নেই, কোথাও নেই। অতএব গগনবিদারি চিৎকার ছাড়া আর কোনো উপায়ই খোলা নেই। কিন্তু ততক্ষণে জাফর হায়দারের টুটি চেপে ধরেছে পিশাচটা। একদম স্বর বেরুচ্ছে না গলা দিয়ে। মাথা ঝিমঝিম করে উঠলো। স্তব্ধ হয়ে এলো কান। চোখের সামনে সবকিছু হলুদ। উষ্ণ একটা পরশ পেলো গলার দিকটায়। একটা মানুষের মুখ যেন পরম আদরে চুমু খাচ্ছে গলায়। বোঁটকা গন্ধে নাক ভরে গেছে জাফর হায়দারের। এরপর কী ঘটলো কিছুই জানেন না তিনি। তবে যখন জ্ঞান ফিরলো, দেখলেন বিছানায় শুয়ে। মাথায় পানি ঢালছে কাজের মেয়ে। তার গলার দিকটায় কি যেন মালিশ করে দিচ্ছেন সুরাইয়া বুবু। সামনে উদগ্রীব বসে আছেন ওসি সাহেব। আর মেঝেয় বসে অঝোরে কাঁদছে আউয়াল মিয়া। ভয়ের কিছু নেই, গলার রগ ফুটো করতে পারেনি। জাফর হায়দারকে আশ্বস্ত করলেন ওসি সাহেব। ছল ছল চোখে তাকিয়ে আছেন তিনি। বুবুর হাত সরিয়ে গলার দিকটা একবার পরখ করলেন, না সত্যিই তেমন কিছু হয়নি। সামান্য একটু দাঁত বসানোর দাগ। আর টুটি চেপে ধরায় গলাটা কেমন চিঁ চিঁ করছে এই যা। আউয়াল মিয়ার আবার কী হলো, কাঁদছে কেন? জিজ্ঞেস করলেন জাফর হায়দার। জড়ানো কণ্ঠে আবোল-তাবোল বকতে শুরু করলো আওয়াল মিয়া। ধমকে উঠলেন ওসি সাহেব, কান্না থামাও। যা বলার স্পষ্ট করে বলো। সাথে সাথে কান্না থামিয়ে মাথা নিচু করল আউয়াল। বলল, স্যার, সব দোষ আমার। নড়েচড়ে বসলো কামরার সবাই। জাফর হায়দারও চেঁচিয়ে উঠলেন চিঁহি গলায়, তোমার দোষ মানে! আমিই আপনের গ্যাস লাইটটা সরাইছিলাম। গরম চোখে তাকিয়ে আছে সবাই। সুরাইয়া সুলতানার দিকে একটু ঘেঁষে বসলো আউয়াল মিয়া। তারপর বললো, ঘটনা কী ঘটছে কইতে রাজি আছি। কিন্তুক জেলের ভাত খাইতে আমি রাজি না। রে রে করে উঠলেন সুরাইয়া সুলতানা, কিরে আউয়াল, কী করেছিস তুই? তোরে আমি এতো বিশ্বাস করতাম। তুই আমার এতো বড় সর্বনাশ করতে পারলি! আরে আরে মহা সমস্যাতো। কী করেছে সেটা না জেনেই বলে দিচ্ছো এত বড় সর্বনাশ! ধমকে উঠলেন জাফর হায়দার। তুই কোনো কথা বলবি না। এতবড় সর্বনাশ না হলে জেলের কথা উঠবে কেন? ওকে আমি … আ..হা, আগে আউয়াল মিয়াকে বলতে দাও। তারপর বিচার করো সে বড় নাকি ছোট সর্বনাশ করেছে। হাতের লাঠিতে ইশারা করলেন ওসি সাহেব। এবার গড়গড় করে বলতে শুরু করলো আউয়াল মিয়া, স্যার যেদিন পয়লা এইখানে আহেন, ওইদিন আমি স্যারের মাথায় বাড়ি মারছিলাম। হ্যাঁ, এটা আর নতুন করে বলার কী আছে? অধৈর্য হয়ে বললেন ওসি সাহেব। ডাণ্ডার বাড়ি দেয়ার আগে আমি জাফর স্যারকে ঠিকই চিনতে পারছিলাম। কিন্তু তবুও সন্দেহ হইলো… তোমার এই কথাও সবাই জানে। স্যারের মাথায় রক্ত দেইখা খুব খারাপ লাগছিলো আমার। রক্তাক্ত জাফর স্যাররে ম্যাডামের কাছে দিয়া আমি সামনের গেইট লাগাইতে গেলাম। গিয়া দেহি বাচ্চা একটা পোলা গেইটের সামনে খাড়ায়া আছে। গলা দিয়া গড়গড়াইয়া রক্ত ঝরতাছে। কী বলছো তুমি! যা কইতাছি হাছা কইতাছি স্যার। আমি মনে করলাম, পোলাডারে পিশাচে কামরাইছে। আন্ধাইরের মইদ্যে বেশি কিছু দেহা গেলো না। ডরে আমার গতর জুইরা কাঁপন উঠলো। তারপরেও পোলাডার লাই¹া মায়া অইল। এই রাইতের বেলা বাইরে থাকলে আর জানে বাঁচতে পারবো না। তাই ইশারা করলাম ভিতরে আইতে। কিন্তুক পোলাডা আমারে উল্টা ইশারা করলো বাইরে যাইতে। আমি তো তাইজ্জব! পোলাডা ‘ভূত’, ‘ভূত’ কইরা চিক্কর পারতে শুরু করলো। আমি জিগাইলাম কই? হ্যায় কইলো, ভূত নাকি আমগো বাড়ির ভিতরে। ভূতটা নাকি জাফর স্যারের রূপ ধইরা আইছে। স্যারের মইদ্যে ভূতের আত্মা আছে। ফাজিল কোথাকার, এক থাপ্পড়ে সবগুলো দাঁত ফেলে দেবো। আউয়াল মিয়ার দিকে তেড়ে আসতে চাইলেন সুরাইয়া সুলতানা। তাকে টেনে ধরলেন জাফর হায়দার। তাকে শান্ত হওয়ার জন্য ইশারা করলেন ওসি সাহেব। তারপর আউয়াল মিয়াকে কথা চালিয়ে যাওয়ার ইঙ্গিত করলেন তিনি। স্যার, সত্যি কইরা কইতাছি। পোলাডায় আমারে কইলো, হ্যার গলায় নাকি জাফর স্যারে কামরাইছে। পোলাডা ডরে পলায়া গেলো। হের পরে থেইক্কা আমি স্যারের সামনে কম যাই। স্যার এক দিকে গেলে আমি অন্য দিকে থাকি। খেয়াল করলাম, নিশি রাইতে জাফর স্যার কই যেন বাইর অইয়া যায় গা। তাহলে তুমিই কী জাফর সাহেবের বিরুদ্ধে গ্রামবাসীকে খেপিয়ে তুলেছো? প্রশ্ন করলেন ওসি সাহেব। আমি পরথমে কিছু কইতে চাই নাই। যহন হুনলাম গেরামের কয়েকটা পোলাও নাকি স্যাররে দেইখা ডরাইছে, তহন মনে অইলো আসলেই ঘটনাডা সত্যি। তাই গেরামের কয়েকজনের লগে সলা করছিলাম। কিন্তু তুমি ওনার লাইটার সরাতে গেলে কেন? স্যার, আইজ রাইতে হিবার হেই পোলাডা আইছিলো। কইয়া গেলো এই কুপির মতো দেখতে লাইটের মইদ্যেই নাকি ভূতের আত্মা আছে। জাফর স্যারের কাছ থেইকা লাইটটা লইয়া যাইতে পারলে নাকি আমগো স্যার আবার ভালা মানুষ অইয়া যাইবো। আমি চিন্তাও করতে পারি নাই ভূতটা বাচ্চা পোলাপানের বেশ ধইরা আইবো। স্যারের পকেট থেইকা লাইটটা চুরি কইরা আমি আমার ঘরে গেছি। মনে করলাম, সুযোগ অইলে এই জিনিসটা নয়া দীঘিতে ফালায়া দিমু। কিন্তুক কিছুক্ষণ পরেই হুনি স্যারের ঘরে ধস্তাধস্তির শব্দ। আমি পয়লা বুঝতে পারি নাই। মনে করলাম স্যারের ভিতর থেইকা বুঝি পিশাচটা বাইর অইয়া যাইতাছে। খুব ডরাইছিলাম। কিন্তুক কি কারণে জানি মনডা মোচর দিয়া উঠল। মনে অইলো স্যারের খুব কষ্ট অইতাছে। ভয় ডর সব উইরা গেলো। মন ভুলে স্যারের কুপির মতো লাইটটা হাতের মইদ্যে লইয়াই গেলাম। দরজা খুলতেই দেহি হুলস্থুল কাণ্ড। স্যারের কাছ থেইকা চুরি করা লাইটটাই জ্বালাইলাম। দেহি এক ভয়ঙ্কর কাহিনী, জাফর স্যারের গলা চাইপা ধরছে পিশাচটা। আমার লাইটের আলো দেইখাই কেমুন ছ্যারাবেরা অইয়া গেলো পিশাচের চেহারা। স্যাররে ছাইরা দিয়া বাইরে নাই অইয়া গেলো। আমি জানালা দিয়া চাইয়া দেহি ওই বাচ্চা পোলাডা জঙ্গল ভাইঙ্গা পলাইতাছে। এতটুকু বলে মেঝের দিকে তাকিয়ে রইলো আউয়াল মিয়া। সবাই চুপচাপ শুনছিলো, হঠাৎ থেমে যাওয়ায় কিছুটা ছন্দপতন হলো। তবুও কিছুক্ষণ চুপ থাকলো কামরার সবাই। এগাারো. মধ্যরাত। মুমিতু বসে আছে প্রফেসর ফিহির হোসাইনের ওয়েটিং রুমে। কফির কাপে চুমুক দিচ্ছে, আর অপেক্ষা করছে মাশরাফির জন্য। ভেতরে মাশরাফির সাথে কথা বলছেন প্রফেসর। সেদিন প্রফেসরকে ঘুম পাড়িয়ে চলে যাওয়ার পর তিনি যোগাযোগ করেছেন মুমিতুর বাবার সাথে। বাবা একরকম জোর করে ওদের দু’জনকে আবার পাঠিয়ে দিলেন এই সুখটাকওয়ালার কাছে। আসার সময় বলে দিলেন, প্রফেসর ওদের কাউন্সেলিং করবেন। ঠিক যত সময় চান তত সময়ই দিতে হবে ওদের। সম্ভবত ওইদিন মুমিতুকে ঘুম পাড়াতে গিয়ে নিজেই ঘুমিয়ে যাওয়ার ঘটনাটা সাঙ্ঘাতিক লেগেছে প্রফেসরের। এ কারণেই তাকে শাস্তি দিতে চাইছেন তিনি। কিন্তু বাবাকে ম্যানেজ করলেন কিভাবে? যেভাবেই করুক, এখন আর এসব নিয়ে ভেবে লাভ নেই। কোনো রকম পাগলের ডাক্তারের কাছ থেকে মুক্তি পেলেই হলো। কফির কাপে শেষ চুমুকটি দিলো সে। তারপরই ভেতর থেকে বেরিয়ে আসতে দেখলো মাশরাফিকে। মুখে বললো, তোকে ভেতরে যেতে বলেছেন প্রফেসর। মুমিতু উঠে দাঁড়ালো। ভেতরের দিকে পা বাড়াতে যাবে, ঠিক ওই মুহূর্তে আবার ঘুরে দাঁড়ালো মাশরাফির দিকে, আচ্ছা, তোর সাথে কী কী কথা হলো রে? অনেক কথা। সব তোর ব্যপারে। তুই দিন রাত কী কী করিস, কোথায় যাস এইসব। তুই কী বললি? যা যা করিস তাই বললাম। আর কথা বাড়ালো না মুমিতু। দরজা ঠেলে কামরায় ঢুকলো সে। সেই নজরুল সঙ্গীত, মনিটরের ভিসুয়ালাইজেশন। আর তন্ময় প্রফেসর। তবে মুমিতু যে কামরায় ঢুকেছে সেটা টের পেয়েছেন তিনি। হাত ইশারায় বসতে বললেন। এই মুহূর্তে প্রফেসরকে মনে হচ্ছে আগের চেয়ে আরো সতর্ক, আরো আত্মবিশ্বাসী। মুহূর্তের মাঝে চেয়ার টেনে নিলেন কম্পিউটার টেবিলটার দিকে। মাউস নাড়াচাড়া করে সাটডাউন করলেন। তারপর ফিরে তাকালেন মুমিতুর দিকে, সেদিন তোমাকে মাপতে ভুল করেছিলাম আমি। আজ মেপে কী মনে হচ্ছে, আমি কি আহামরি কিছু? আহামরি না হলে এই মধ্যরাতে আমার সামনে বসে থাকতে হতো না তোমার। আমার ধারণাই ছিলো না, তোমার মতো পিচ্চি একটা ছেলের প্যারা সাইকোলজির ওপর এতটা দখল আছে। প্যারা সাইকোলজি কী? এই যে তুমি মেডিটেশনসহ আরো যা যা অদ্ভুত কাজ করো এসব কাজকে পর্যালোচনা করে প্যারাসাইকোলজি। প্যারাসাইকোলজি হলো সাইকোলজিরই একটি শাখা। মানুষের অতৈন্দ্রিক ক্ষমতা, অস্বাভাবিক কর্মকাণ্ডগুলোই এর বিষয়। এই ধরো টেলিপ্যাথি, অর্থাৎ অন্য মানুষের মনের কথা বুঝতে পারা। প্রি রিকোগনিশান, অর্থাৎ ভবিষ্যৎ বলতে পারা। টেলিকিনসিস, অর্থাৎ কোনো ধরনের শারীরিক সম্পৃক্ততা ছাড়াই কোনো জিনিস নাড়ানো। সাইকোমেট্রিক, অর্থাৎ কোন বস্তু, প্রাণী বা জায়গাকে স্পর্শ করে সেটা সম্পর্কে সব জেনে যাওয়া। মৃত্যু স্পর্শ, অর্থাৎ মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে আসার অভিজ্ঞতা। বাইলোকেশান, অর্থাৎ একই সময় দুই জায়গায় অবস্থান করা। আমিতো এসবের কিছুই জানি না। তবে প্যারা সাইকোলজির ওপর আমার দখল আবিষ্কার করলেন কিভাবে? এগুলোর ওপর পুঁথিগত বিদ্যা তোমার নেই। অনেক ব্যবহারিক বিদ্যা রয়েছে। তোমার আচরণকে তুমি সংজ্ঞায়িত করতে পারছো না, এই যা। প্যারাসাইকোলজির পর্যালোচনা হয় পুরোপুরি বিজ্ঞানসম্মতভাবে। এ বিদ্যা একটি ঘটনা কেন ঘটেছে সেটা ব্যাখ্যা করতে পারে। তবে ঠিক কিভাবে কিভাবে ঘটেছে এর স্বচ্ছ কোনো ছক এখন পর্যন্ত আঁকতে পারেনি। প্যারাসাইকোলজির সবচেয়ে আলোচিত যে বিষয় সেটা হলো টেলিপ্যাথি। আমরা সবাই জীবনের কোনো না কোনো ক্ষেত্রে এর প্রমাণ পেয়ে থাকি। যেমন ধর তুমি মাশরাফির কথা গভীরভাবে চিন্তা করছো। ঠিক সেই মুহূর্তে তোমার ফোনে মাশরাফির কল বেজে উঠলো। অথবা তোমার কোনো বন্ধু হুট করে এমন কোনো কথা বলে ফেললো, যা কখনো তুমি তাকে জানাওনি। কথাগুলো কিন্তু মিথ্যে নয়। এই কথাগুলো তোমার মনের ভেতর ছিলো। মনের কথা জানা বা অনুমান করার এই অদ্ভুত ক্ষমতাকেই টেলিপ্যাথি বলে। এসব বিষয়কে আমরা খুব সহজেই কাকতালীয় ঘটনা বলে পাশ কাটিয়ে যাই। অথচ স্বীকার করি না যে, এটা আমাদের মস্তিষ্কের এক অতীন্দ্রিয় সংবেদনশীলতা। যেখানে আমাদের অবাধ প্রবেশাধিকার নেই। শুনেছি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে নাকি সোভিয়েত ইউনিয়ন, আমেরিকা এবং ব্রিটেন সাই এজেন্ট নিয়োগ করেছিলো? হ্যাঁ, ঠিক শুনেছো। এই সাই এজেন্টদের কাজ ছিলো টেলিপ্যাথি বিদ্যা ব্যবহার করে গোয়েন্দাগিরি করা, মানুষের মনোজগতে প্রবেশ করা। তারা নিজেদের মন ব্যবহার করে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ জায়গা এবং বস্তু সম্পর্কে তথ্য দিতেন। মেডিটেশন, টেলিপ্যাথি নিয়ে যতক্ষণ কথা হলো, ঘড়ি ধরলে কমপক্ষে ঘণ্টাখানেক তো হবেই। তবুও মুমিতুকে নিস্তার দিচ্ছেন না প্রফেসর ফিহির হোসাইন। ঘুমে চোখ ঢুলুঢুলু হয়ে এসেছে ওর। একটি আরামদায়ক বিছানার জন্য আকুপাকু করছে মন। প্রফেসরও বুঝতে পারছেন ওর অবস্থা। কিন্তু বুঝেও না বোঝার ভান করছেন। কথায় ব্যস্ত রাখতে চাইছেন মুমিতুকে। কিন্তু কী কারণে! বাথরুম থেকে ফিরে এসে ঢকঢক করে এক গ্লাস পানি খেলো মুমিতু। তারপর শান্ত হয়ে আবার বসলো চেয়ারে। চরম বিস্ময় নিয়ে তাকালো প্রফেসরের দিকে। যেন কোটর থেকে বেরিয়ে আসতে চাইছে চোখ দুটো। আচ্ছা, হরর বই পড়তে তোমার ভালো লাগে, তাই না? মাথা নাড়লো মুমিতু। অতিপ্রাকৃত কিছুতে বিশ্বাস করো? মোটেই না। বইগুলোতে ভয়ঙ্কর কোনো বর্ণনা পড়লে ভয় লাগে? জ্বি না প্রফেসর। তাহলে কেন পড়? থ্রিলের জন্য। তাছাড়া … ভয়ঙ্কর মুহূর্তগুলো নিয়ে কল্পনা করতে ভালো লাগে। কল্পনায় তুমি ভয়ঙ্করকে আরো বেশি ভয়ঙ্কর করে তোলো। একা একা থাকলে, নিজেই নিজের মন মতো একটা কুৎসিত চরিত্র বানাতে ভালোবাসো। তারপর এই চরিত্রকে দিয়ে একেকটি হরর কাহিনী তৈরি করো। বাস্তবে যা অসম্ভব, তেমন অনেক কাজ তাকে দিয়ে করিয়ে নাও। কিন্তু … আমি জানি এগুলো আমার অলীক কল্পনা। হ্যাঁ, সেটা তুমি জানো। আর জানো বলেই কল্পনায় অনেক কুৎসিত ও ভয়ঙ্কর কাজ করতে বিবেক বাধা দেয় না। তোমার কল্পিত চরিত্র কি কখনো কখনো বীভৎস রক্তপাত ঘটায়? প্রয়োজন হলে। রক্তপাত কি ভালো লাগে তোমার? আমার কেন ভালো লাগবে? চরিত্রের প্রয়োজনে এসে যায়। হাত তুলে মুমিতুকে থামিয়ে দিলেন প্রফেসর, কল্পিত চরিত্রের জায়গায় মাঝে মাঝে নিজেকে বসাতে ভালো লাগে না? সেটা তো হতেই পারে। বাস্তবে কল্পিত চরিত্রের মতো অসম্ভব ক্ষমতাবান হওয়ার ইচ্ছে হয়? বাস্তবে যা অসম্ভব এমন ক্ষমতা পাওয়ার সুপ্ত ইচ্ছা সবারই থাকে। সবার থাকে। তবে তোমার ইচ্ছাশক্তিটা প্রবল। আচ্ছা বেশ। এবার কল্পনা থেকে বাস্তবে আসা যাক। তুমি কী কখনো মানুষ খুন হতে দেখেছো? বড় ধরনের কোনো রক্তারক্তি? কয়েক সেকেন্ড চিন্তা করলো মুমিতু। তারপর বললো, রক্তারক্তি বলতে একটা বড় ধরনের অ্যাক্সিডেন্ট দেখেছি। নরসিংদীর শিবপুরে। বাস অ্যাক্সিডেন্ট। চেয়ার থেকে প্রায় লাফিয়ে উঠলেন প্রফেসর ফিহির হোসাইন। তারপর কী মনে করে আবার স্বাভাবিক হয়ে এলেন। স্থির বসে জানতে চাইলেন ঘটনার বিবরণ। মুমিতু বলতে শুরু করলো, বেশ কয়েকবছর আগের কথা। বাসে করে কিশোরগঞ্জ যাচ্ছিলাম। শিবপুর পার হওয়ার পর হঠাৎ প্রচণ্ড শব্দে কানে তালা লেগে গেলো। থেমে গেলো আমাদের বাস। ঘটনা কী বোঝার জন্য সামনে তাকালাম। চোখের সামনেই একটি মিনিবাসকে উল্টে খাদে পড়ে যেতে দেখলাম। আর সাম


এডিট ডিলিট প্রিন্ট করুন  অভিযোগ করুন     

গল্পটি পড়েছেন ২৬৬ জন


এ জাতীয় গল্প

গল্পটির রেটিং দিনঃ-

গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন

  • গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now