ত্রিশ তারিখের প্রথম আলোটা হবে
X
বেল বাজলো।
দরজা খুলে দেখি পাশের ফ্ল্যাটের মেয়েটা। হাসলে গালে ছোট্ট টোল পড়া, শহরের অনেক ছেলের হৃদয় ভেঙ্গে ফেলার রেকর্ড সংবলিত মেয়েটা।
.
''ভাইয়া আপনারা প্রথম আলো নেন না?''
২টা হার্ট বিট মিস করে আমি 'হ্যা' বললাম।
"গত ৩০ তারিখের পেপারটা একটু হবে?"
"অবশ্যই। বাসায় আসেন।"
"না ভাইয়া, ঠিক আছে। আপনি একটু দেখেন পেপারটা।"
.
দরজাটা একটু ঠেলে দিয়ে দৌড় লাগালাম। যেভাবে সাংবাদিকরা দৌঁড়ে খবরের পিছনে, বল হাতে রুবেল হোসেন দৌঁড়ে স্ট্যাম্প উপড়ে ফেলতে।
.
.
"৩০ তারিখের পেপার,
৩০ তারিখের পেপার...."
খুঁজতেছি... খুঁজতেছি।
মেয়েটা দাঁড়িয়ে আছে। একটা পেপার চেয়েছে সে।
নেই।
৩০ তারিখের পেপার নেই।
২৭ তারিখ,
২৮ তারিখ,
২৯ তারিখ..
সব আছে।
৩০ তারিখ নেই।
ছেঁড়া একটা তেলাপোকার পাখনা, গ্যাস্ট্রিকের ট্যাবলেটের খোসা, আবাডি গাবাডি জিনিসপত্র সব আছে। শুধু ৩০ তারিখের পেপার নেই।
আহারে! মেয়েটা দাঁড়িয়ে আছে।
রান্নাঘরে গেলাম।
"আম্মা, এর মধ্যে কাউকে পেপার দিছো?"
ছ্যাৎ করে কি একটা ছেড়ে দিলো আম্মা কড়াইয়ে। খুন্তি দিয়ে নাড়তে নাড়তে বললো, "কী পেপার?"
"আরে পেপার পেপার, ৩০ তারিখেরটা।"
"চিল্লাছিস কেন? কয়েকটা পেপার নিছিলাম কোরবানে রুটি বানানোর সময়। আটার গুড়ো রাখতে।"
আটা, ময়দা, সুজি! চমৎকার!
.
.
দরজা খুললাম। মেয়েটা দাঁড়িয়ে আছে।
"ইয়ে পেপারটা কোথাও আছে। আমি খুঁজে একটু পরেই দিচ্ছি।"
"ঠিকাছে ভাইয়া।" মেয়েটা হাসলো, টোল পড়লো মেয়েটার গালে, ট্যাপ পড়লো আমার হৃদয়টাতে।
.
.
হকারকে কল দিলাম। "মামা গতমাসের ত্রিশ তারিখের প্রথম আলো দিতে পারবেন একটা?"
"আমি তো বাড়িতে। পরশু দিলে হইবো নি?"
ধুর মিয়া!
এক বন্ধুকে কল দিলাম।
"গত মাসের ত্রিশ তারিখের প্রথম আলোটা আছে?"
"পেপার খোঁজার কি আছে? ইন্টারনেটে দেখ, সব পুরানো কপিই তো পাওয়া যায়।"
"ধুর শালা! "
কি ভাগ্য ত্রিশ তারিখের পেপারটাই কোথাও নেই।
৩১ তারিখ,
৩২ তারিখ,
৩৩ তারিখ,
সাড়ে ৩৩ তারিখ সব আছে।
খালি ৩০ তারিখেরটা নেই! .
.
জিইসির মোড়।
পেপার স্ট্যান্ড।
ঠা ঠা রোদ।
অনেক কষ্টে "প্রথম আলোটা" ম্যানেজ হলো বিশ টাকার বিনিময়ে। দৌড়ে গেলাম বাসায়। কপাল আর মুখের ঘাম মুছে সাফ সুতেরো।
টিং টং।
মেয়েটা দরজা খুললো। "পেপারটা।" বাড়িয়ে দিলাম।
"থ্যাংক ইউ ভাইয়া।" হাসলো, সে জানে হাসলে তাকে কেমন দেখায়।
.
.
বাসায় এসে বিছানায় শরীর এলিয়ে দিলাম। নিজেকে উসাইন বোল্টের মত লাগতেছে। ম্যারাথন জয়ী উসাইন!
পেরে পেপ পে পেরেপ পে..
জলের গানের বাঁশি বাজলো। কল এসেছে মোবাইলে। কাজিন ত্রপা।
"ভাইয়া তোমরা প্রথম আলো নাও না?"
"হ্যা, কেন?"
"৩০ তারিখের পেপারটা হবে?"
"কেন?"
"আরে ঐখানে একটা ফর্ম আছে। একটা নকশা প্রতিযোগিতা। ওটা ফিলআপ করে পাঠাতে হবে।"
"নাই নাই।"
"আরে দেখো না আগে।"
"পেপার নাই। আম্মা পেপারের উপর রুটি, পরোটা, বাখরখানি বানাইছে।"
"একটু দেখো না কারো থেকে ম্যানেজ করতে পারো নাকি?"
"আরে ধেত্তেরি। কোথা থেকে ম্যানেজ করবো? তোদের বাসার আশেপাশে কারো কাছে দেখ।"
.
.
তার একটু পর জিইসি মোড়ে একটা ছেলে গেল দৌঁড়াতে দৌঁড়াতে।
"ভাই, ত্রিশ তারিখের প্রথম আলোটা হবে? একটু জোগাড় করে দেন না।"
হাপাতে হাপাতে বলল ছেলেটা। ত্রপাদের পাশের বাসায় থাকে সে.....
.
#অণুগল্পঃ
--এই শহরের বেকুবগুলো।
.
লিখা: Sakawat Hossain Munna
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন
sawdiya
User ৬ বছর, ৩ মাস পুর্বেগল্পপ্রেমী
Guest ৬ বছর, ৩ মাস পুর্বে